কতদিন পরপর তোয়ালে ধুচ্ছেন? যে কারণে নিয়মিত আপনার তোয়ালে ধোয়া প্রয়োজন
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/10/towels.jpg)
হয়তো আপনি আজই তোয়ালে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সেটি আসলেই কতটা পরিষ্কার ছিল? অনেকেই সপ্তাহে একবার তোয়ালে ধুয়ে নেন। কিন্তু এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০০ জনের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ মাসে মাত্র একবার তোয়ালে পরিষ্কার করেন। যুক্তরাজ্যের এক জরিপ অনুযায়ী, কিছু মানুষ বছরে মাত্র একবার তোয়ালে ধৌত করেন। খবর বিবিসি'র।
অনেক সময় তোয়ালে ময়লা দেখানো না গেলেও এটি লক্ষ লক্ষ জীবাণুর আদর্শ প্রজননক্ষেত্র হতে পারে। গবেষণা বলছে, ত্বকে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কারণে তোয়ালে দ্রুত দূষিত হয় এবং এতে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াও জমতে পারে।
গোসলের পরও শরীরে অসংখ্য জীবাণু থেকে যায়। ফলে তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছলে কিছু জীবাণু সেটিতে স্থানান্তরিত হয়। শুধু তা-ই নয়, শুকানোর সময় বাতাসে থাকা ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়াও তোয়ালের সুতায় জমতে পারে। এমনকি যে পানিতে তোয়ালে ধোয়া হয়, সেখান থেকেও জীবাণু আসার আশঙ্কা থাকে।
জাপানের কিছু পরিবার গোসলের ব্যবহৃত পানি পরদিন কাপড় ও তোয়ালে ধোয়ার জন্য ব্যবহার করেন। তবে টোকুশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এতে পানি সাশ্রয় হলেও ব্যবহৃত পানিতে থাকা জীবাণু তোয়ালে ও পোশাকে স্থানান্তরিত হতে পারে।
অনেকেই বাথরুমেই তোয়ালে শুকান, যা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ, টয়লেট ফ্লাশ করার সময় বাতাসে থাকা জীবাণু তোয়ালের ওপর এসে পড়তে পারে, যার সঙ্গে বর্জ্যকণাও থাকতে পারে।
সময়ের সঙ্গে তোয়ালেতে জমে থাকা জীবাণুগুলো বায়োফিল্ম (জমাট বাঁধা অনুজীব) তৈরি করতে পারে, যা কাপড়ের রঙ ও গঠন পরিবর্তন করতে পারে। এমনকি নিয়মিত ধোয়ার পরও মাত্র দুই মাসের মধ্যে তোয়ালের উজ্জ্বলতা কমে যেতে পারে।
তোয়ালেতে কতটা ও কী ধরনের জীবাণু থাকবে, তা নির্ভর করে কাপড় ধোয়ার অভ্যাসের ওপর। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ নিয়ে আসলেই কতটা চিন্তিত হওয়া উচিত?
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের সিমন্স ইউনিভার্সিটির 'সেন্টার ফর হাইজিন অ্যান্ড হেলথ ইন হোম অ্যান্ড কমিউনিটি'-এর সহ-পরিচালক ও জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক এলিজাবেথ স্কট বলেন, ঘরের ভেতর জীবাণু ছড়ানোর উপায় বোঝার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, 'প্রাথমিকভাবে জীবাণু তোয়ালের ওপর থাকে না। মূলত মানুষের মাধ্যমেই ক্ষতিকর জীবাণুগুলো তোয়ালেতে আসে।'
মানব ত্বকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১,০০০ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক বসবাস করে। এদের বেশিরভাগই উপকারী এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। তবে তোয়ালের ওপর স্ট্যাফিলোকক্কাস ও ইশেরিশিয়া কোলাই-এর মতো ব্যাকটেরিয়াও থাকতে পারে, যা অন্ত্রে পাওয়া যায়। পাশাপাশি সালমোনেলা ও শিগেলা-এর মতো ব্যাকটেরিয়াও থাকতে পারে, যা খাদ্যজনিত অসুস্থতা ও ডায়রিয়ার জন্য দায়ী।
কিছু ব্যাকটেরিয়া 'সুযোগসন্ধানী রোগজীবাণু' হিসেবে কাজ করতে পারে, যা সাধারণত ক্ষতিকর না হলেও শরীরের বিশেষ পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এগুলো কোনো কাটা বা ক্ষতস্থানে পৌঁছালে সমস্যা হতে পারে।
মানব ত্বক স্বাভাবিকভাবেই সংক্রমণের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষা স্তর তৈরি করে। তাই তোয়ালে থেকে ব্যাকটেরিয়া ত্বকে স্থানান্তরিত হলেও তা নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তবে গবেষণা বলছে, গোসল ও তোয়ালে ব্যবহারের ফলে ত্বকের এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কখনো কখনো ব্যাহত হতে পারে। বিশেষত, হাত মুছতে গিয়ে ক্ষতিকর জীবাণু হাতে লেগে গেলে এবং সেই হাত মুখ, নাক বা চোখে স্পর্শ করলে সংক্রমণ ঘটতে পারে। রান্নাঘরের তোয়ালেও খাদ্যজনিত রোগজীবাণু ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম হতে পারে।
স্কট বলেন, স্যালমোনেলা, নোরোভাইরাস ও ই কোলাই-এর সংক্রমণ তোয়ালের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সুতি কাপড়ে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।
যদিও দূষিত পৃষ্ঠ স্পর্শ করা ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান উপায় নয়, এমপক্স-এর মতো কিছু ভাইরাস সরাসরি সংস্পর্শে ছড়াতে পারে। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সংক্রমিত ব্যক্তির তোয়ালে বা বিছানার চাদর ব্যবহার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। এছাড়া অন্যের ব্যবহৃত তোয়ালের মাধ্যমে 'হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস' (এইচপিভি) সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
হাসপাতাল ও পাবলিক টয়লেটে পুনঃব্যবহারযোগ্য হাত মোছার তোয়ালে ব্যবহারের পরিবর্তে সাধারণত একবার ব্যবহারযোগ্য টিস্যু পেপার বা এয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা হয়।
স্কট ও তার সহকর্মীরা মনে করেন, তোয়ালের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। বিশেষত, অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া দূষিত বস্তুর মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
স্কট বলেন, 'সপ্তাহে অন্তত একবার তোয়ালে ধোয়া উচিত। তবে এটি সবার জন্য একইরকম নয়। কেউ অসুস্থ হলে, যেমন বমি বা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে, তাদের আলাদা তোয়ালে ব্যবহার করা এবং প্রতিদিন তা ধোয়া দরকার। একে আমরা বলি 'টার্গেটেড হাইজিন'— যেখানে ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।'
টার্গেটেড হাইজিন ঝুঁকি-ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক একটি স্বাস্থ্যবিধি পদ্ধতি, যা 'গ্লোবাল হাইজিন কাউন্সিল' ও 'ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্টিফিক ফোরাম অন হোম হাইজিন'-এর গবেষকেরা পরিচালনা করেন। এতে বিশেষত সেই স্থান ও সময়ে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেয়, যেখানে সতর্কতা অপরিহার্য।
স্কট আরও বলেন, 'তোয়ালে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ডিটারজেন্ট দিয়ে ধোয়া উচিত এবং সাধারণ কাপড়ের তুলনায় বেশি গরম (৪০-৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পানিতে দীর্ঘ সময় ধরে ধোয়া প্রয়োজন। কারণ, ডিটারজেন্ট ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমায় এবং কিছু ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে।'
নিম্ন তাপমাত্রায় ধোয়ার ক্ষেত্রে ব্লিচ যোগ করলে তোয়ালে থেকে জীবাণু আরও কার্যকরভাবে দূর হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডিটারজেন্ট ও জীবাণুনাশকের সংমিশ্রণে ধোয়ার পর তোয়ালে রোদে শুকালে এটি সবচেয়ে কার্যকরভাবে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক দূর করতে পারে।