পদ্মা সেতু হয়ে ভোমরা-ঢাকা: দূরত্ব কমলেও বেড়েছে ব্যবসায়ীদের খরচ
ঢাকা ও ভোমরা স্থলবন্দরের মধ্যে পদ্মা সেতু প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরত্ব কমালেও ব্যবসায়ীদের জন্য পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়েছে। রুটের বিভিন্ন পয়েন্টে টোল ও চাঁদা দেওয়ায় বাড়ছে খরচ।
নতুন রুটে চলাচলকারী পণ্যবোঝাই কোনো ট্রাককে ফেরি রুটের চেয়ে অন্তত ৪২০ টাকা বেশি খরচ করতে হয় বলে দাবি চালকদের।
সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার আব্দুল সাদেকের ছেলে ট্রাক চালক আবুল বাসার। ভোমরা স্থল বন্দরের পণ্য পরিবহনের কাজ করেন তিনি। রোববার (২৬ জুন) ভোমরা বন্দর থেকে ভারত হতে আমদানি করা এক ট্রাক তুলা নিয়ে যান রাজধানীর গাউসিয়া এলাকায়।
দৌলদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে রাজধানী পৌঁছানোর সঙ্গে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রাক নিয়ে রাজধানীতে পৌঁছানোর তুলনামূলক বাস্তব চিত্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কাছে তুলে ধরেছেন ট্রাক চালক আবুল বাসার।
তার তথ্যমতে, ভোমরা থেকে ফেরিঘাট হয়ে রাজধানীতে পৌঁছানোর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে পৌঁছানোর পথ কমেছে ৭০ কিলোমিটার। এতে ট্রাকের তেল খরচ সাশ্রয় হচ্ছে ১৭ লিটার। প্রতি লিটার তেলের মূল্য ৮০ টাকা হিসেবে মোট খরচ দাঁড়ায় ১,৩৬০ টাকা।
ভোমরা বন্দরের ট্রাক চালক আবুল বাসার বলেন, ফেরিঘাট দিয়ে সড়কে খরচ ছিল কামারখালি ব্রিজের টোল ২৫০ টাকা আর ফেরি পারাপারের জন্য দিতে হতো ১,৫০০ টাকা, ঘাটে পুলিশের চাঁদা ছিল ৩০-৫০ টাকা। সব মিলিয়ে সড়কে খরচ দাঁড়াতো ১,৮০০ টাকা। আর কোনো খরচ ছিল না।
অন্যদিকে ফেরিঘাট দিয়ে যাতায়াতের সঙ্গে পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াতের খরচ তুলনা করে ট্রাক চালক আবুল বাসার জানান, রোববার (২৬ জুন) রাত একটার সময় তুলা নামিয়ে ট্রাক নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হয়েছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের চাঁদা ১৫০ টাকা, নারায়নগঞ্জ পৌরসভার চাঁদা ১০০ টাকা, পোস্তগোলা শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদা ১০০ টাকা, ভাঙা এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের চাঁদা ১০০ টাকা, ফকিরহাট পুলিশের চাঁদা দিয়েছি ১০০ টাকা। এছাড়া পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে টোল ২,১০০ টাকা, পোস্তগোলা ব্রিজের টোল ২৪০ টাকা, আড়িয়াল খাঁ ব্রিজের টোল ১৭০ টাকা, ধ্বলেশ্বর ব্রিজের টোল ১৮০ টাকা, মোল্লারহাট ব্রিজের টোল ১৫০ টাকা ও রুপসা সেতুর টোল দিয়েছি ১৮০ টাকা। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৩,৫৭০ টাকা।
ট্রাক চালকের দেওয়া হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ফেরিঘাট দিয়ে একটি পণ্যবাহী ট্রাকে রাজধানীতে যাতায়াতে সড়কে খরচ ১,৮০০ টাকা। অন্যদিকে পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াতে খরচ দাঁড়িয়েছে ৩,৫৭০ টাকা। তবে পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াতে ট্রাকের তেল সাশ্রয় হচ্ছে ১,৩৮০ টাকার। তেল খরচ সাশ্রয় ও ফেরিঘাট সড়কের খরচ একত্রে করলে হয় ৩,১৫০ টাকা। পদ্মা সেতুর সড়কে খরচ ৩,৫৭০ টাকা। ফলে ট্রাক প্রতি বেশি খরচ পড়ছে ৪২০ টাকা।
ট্রাক চালক আবুল বাসার বলেন, "ফেরিঘাট দিয়ে যাতায়াতের থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াতে খরচ বেশি পড়ছে। তবে সময় কম লাগছে ও রাস্তা ভালো। দ্রুত যাতায়াত করতে পারছি এটি অনেক উপকার হচ্ছে। ফেরিঘাট দিয়ে যাতায়াত করলে কোন নিদৃষ্ট সময়সীমা ছিল না, কখন ফেরি পারাপার হতে পারব। অনেক সময় ২-১ দিন লেগে যেতো। এখন খরচ বেশি হলেও সেই অনিশ্চয়তা কেঁটেছে।"
ভোমরা স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম বলেন, "পদ্মা সেতু হয়ে ব্যবসায়ীদের ট্রাক পরিবহনে খরচ বেড়েছে। তবে এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। ব্যবসায়ীদের সময় বাঁচেছে। আগে একজন ব্যবসায়ী রাজধানীর উদ্দেশ্যে ট্রাক পাঠিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়তেন পণ্যবাহী ট্রাকটি কখন ঢাকায় পৌঁছাবে। ফল থাকলে গাড়িতে নষ্ট হয়ে যেতো। তবে এখন ব্যবসায়ীদের সেই দুঃশ্চিন্তা কেটে গেছে। এখন একটু খরচ বেশি পড়লেও কোনো অসুবিধা নেই ব্যবসায়ীদের।"
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে যাতায়াতের প্রথম দিনে রোববার ৩৫ টি ট্রাক পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানীতে পৌঁছেছে। আজ (সোমবার) গেছে ৫৫টি ট্রাক। এসব ট্রাকে শুকনা মরিচ, পাথর, ফল ও কসমেটিকস আইটেমের সিরামিক ম্যাটেরিয়ালস রয়েছে।