১০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি মেডিকেল গ্যাস প্ল্যান্ট নির্মাণ করবে সরকার
হাইলাইটস
- ঢাকার আশেপাশে একটি ও উত্তরবঙ্গে আরেকটি মেডিকেল গ্যাস প্ল্যান্ট
- অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বনডাই অক্সাইডসহ সব ধরনের মেডিকেল গ্যাস উৎপাদিত হবে
- উৎপাদনে যেতে দুই বছর সময় লাগবে
- বিশ্বব্যাংকের ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ হবে
মেডিকেল অক্সিজেনের জন্য বাংলাদেশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রতিবেশি দেশের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় অক্সিজেনসহ সব ধরনের মেডিকেলে গ্যাস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে মেডিকেল গ্যাস প্ল্যান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
কোভিড-১৯ মহামারির সময় অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ও ভারত অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ করায় তীব্র সংকটে পড়েছিলো দেশের স্বাস্থ্যসেবা।
বিশ্বব্যাংকের কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশে নির্মাণ করা হবে দুটি মেডিকেল গ্যাস প্ল্যান্ট।
মেডিকেল গ্যাস প্লান্টে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বনডাই অক্সাইডসহ সব ধরণের মেডিকেল গ্যাস উৎপাদন করা হবে।
ইআরপিপি প্রকল্প পরিচালক ড. শাহ গোলাম নবী তুহিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, স্বাভাবিক সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অক্সিজেন দিয়েই স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যায় কিন্তু জরুরি কিছু হলে সরকারের কিছু করার থাকে না।
সে কারণে সরকার মেডিকেল গ্যাস প্ল্যান্ট করার চিন্তা করছে বলে জানান তিনি। ৮০০-১০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি মেডিকেল গ্যাস প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে।
"মেডিকেল গ্যাস প্লান্ট স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই অধ্যয়ন মে মাসে শেষ হয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই অধ্যয়ন প্রকাশ করা হবে, তারপর ডিপিপি রিভাইজড করে আগামী অর্থ বছরে কাজ শুরু হবে। উৎপাদনে যেতে দুই বছর সময় লাগবে," বলেন ড. শাহ গোলাম নবী তুহিন ।
ড. শাহ গোলাম নবী তুহিন বলেন, সারাদেশে যে অক্সিজেন প্রয়োজন হয় তার ৫০%-৬০% প্রয়োজন হয় ঢাকার হাসপাতালগুলোতে। সে কারণে ঢাকার আশেপাশে একটি ও উত্তরবঙ্গে আরেকটি মেডিকেল গ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। তবে জায়গা এখনো নির্দিষ্ট করা হয়নি।
সূত্রমতে জানা গেছে, ঢাকার কাছাকাছি নারায়নগঞ্জ বা মুন্সিগঞ্জ এবং উত্তরবঙ্গের সিরাজগঞ্জে মেডিকেল গ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনের সম্ভাবনা আছে।
কোভিড পরিস্থিতির আগে দেশে দৈনিক ১০০ টন মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেনের চাহিদা ছিল। কোভিড রোগীদের সংখ্যা বাড়ায় হাইফ্লো নেজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর ও আইসিইউর চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিন অক্সিজেনের চাহিদা ছিলো ৩০০ থেকে ৫০০ টন।
লিন্ডে বাংলাদেশ ও স্পেক্ট্রা অক্সিজেন লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান দেশে সবচেয়ে বেশি মেডিকেল অক্সিজেন সরবরাহ করে। কোভিডের সময় প্রতিষ্ঠান দুটি ১২০ টনের মত অক্সিজেন সরবরাহ করলেও বাকিটা ভারত থেকে আমদানি করতে হয়েছে।
ভারতে কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ২০২০ সালের ২২ এপ্রিল থেকে আড়াই মাস অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ রেখেছিলো ভারত। সে সময় দেশেও কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট তীব্র হয়েছিলো।
অক্সিজেনের অভাবে সাতক্ষীরা, বগুড়াসব বিভিন্ন জায়গায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কোভিডের ভয়াবহ পরিস্থিতির পর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অক্সিজেন উৎপাদনের পরিকল্পনা করে সরকার।
অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, মেডিকেল গ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন বিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক টিবিএস-কে বলেন, মেডিকেল গ্যাসের জন্য আমরা বেসরকারি খাত ও অন্যান্য দেশের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম।
"এখন আমরা নিজেদের সক্ষমতা গড়ে তুলতে চাই। সম্ভাব্যতা যাচাই অধ্যয়ন শেষ হয়েছে এখন পরিকল্পনার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি। এখন অর্থায়ন ঠিক করে খুব শিগগিরই শুরু হবে।"