মামলায় নতুন টুইস্ট, রায় বাতিলের দাবি অ্যাম্বার হার্ডের!
প্রাক্তন স্বামী জনি ডেপের আনা মানহানি মামলার রায়ে সন্তুষ্ট নন মার্কিন অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ড। সম্প্রতি তিনি এই রায় বাতিল করে দিয়ে নতুন করে মামলার শুনানি চাইছেন। তবে অনেকের ধারণা, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ঠেকানোই 'অ্যাকুয়াম্যান' অভিনেত্রীর আসল অভিপ্রায়!
মামলায় তথ্যপ্রমাণের অভাব রয়েছে দাবি করে বিচারকের কাছে আরও একবার জুরিদের রায় টস করার এবং শুনানির সুযোগ চেয়েছেন অ্যাম্বার হার্ড। শুধু তাই নয়, এবার নতুন এক বিস্ফোরক অভিযোগও এনেছেন এই মার্কিন অভিনেত্রী। তিনি দাবি করেছেন, মামলার বিচারের দায়িত্বে থাকা জুরিদের একজন ছিলেন নকল!
প্রায় মাসখানেক আগে ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্সের আদালতে সাতজন জুরির একটি বেঞ্চ জনি ডেপ বনাম অ্যাম্বার হার্ড মানহানি মামলার রায় দেন। রায়ে দুই পক্ষকেই দোষী সাব্যস্ত করা হলেও দোষ ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের পাল্লাটা অ্যাম্বার হার্ডের দিকেই ভারি। ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি উপ-সম্পাদকীয়তে অ্যাম্বার হার্ড নিজেকে গৃহ-সহিংসতার শিকার বলে দাবি করেন। ফলে পরোক্ষভাবেই সবাই ধরে নেয়, তার সদ্য প্রাক্তন স্বামী জনি ডেপই তাকে নিপীড়ন করেছেন। এর ফলে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে চরম ক্ষতির শিকার হন ডেপ। সাবেক স্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা মানহানি মামলা দায়ের করেন ডেপ।
ডেপের আনা মানহানি মামলায় আদালত ডেপকে ১৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়, যা কমে এখন ১০ মিলিয়নে ঠেকেছে। অন্যদিকে, অ্যাম্বার নিজে পাবেন ২ মিলিয়ন ডলার। এই রায়ের ফলে আবারও জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছেন 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান' খ্যাত অভিনেতা ডেপ; বিপরীতে সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়ে চলেছে অ্যাম্বার হার্ডের। তাই ধারণা করা হচ্ছে, হলিউডে নিজের অবস্থান ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন অ্যাম্বার হার্ড।
টিএমজেড এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি অ্যাম্বার হার্ড একজন বিচারককে এই রায় বাতিল করে দিয়ে নতুন করে শুনানি শুরু করার আবেদন জানিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে অভিনেত্রীর টিম ভার্জিনিয়ার আদালতে নতুন আইনি দলিলপত্র জমা দিয়েছে। তাদের দাবি, হয় ডেপের পক্ষে আদালতের রায় বা হার্ডের বিরুদ্ধে ডেপের অভিযোগ বাতিল করতে হবে, তা নাহলে নতুন করে শুনানি শুরু করতে হবে।
কেন রায় বাতিল করতে চাইছেন অ্যাম্বার হার্ড?
অ্যাম্বার হার্ডের আইনি টিম মূলত ৩টি বিষয় তুলে ধরেছে। প্রথমত, ডেপের আইনি দলের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ নেই যে ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা সেই উপ-সম্পাদকীয় সত্যিই ডেপের ক্যারিয়ার ধ্বংস করেছে কিনা (যদিও জুরিদের দাবি, ক্ষতি করেছে)।
দ্বিতীয়ত, হার্ডের আইনজীবিদের ভাষ্যে, সেটে দেরি করে আসাসহ নানাবিধ কারণে আগে থেকেই ডেপ তার ক্যারিয়ারের ক্রান্তিলগ্নে চলে এসেছিলেন। তার জন্য অ্যাম্বার হার্ড দায়ী নন
তৃতীয়ত, অ্যাম্বার হার্ড তার লেখা উপ-সম্পাদকীয়তে একবারের জন্যও ডেপের নাম উল্লেখ করেননি। মোটকথা, ডেপের সত্যিই মানহানি হয়েছে কিনা তার যথেষ্ট প্রমাণ পাননি জুরিরা।
সবচেয়ে বড় অভিযোগ!
অ্যাম্বার হার্ডের আইনি দল সবচেয়ে বড় যে অভিযোগ এনেছে তা হলো, জুরি বোর্ডের একজনকে নকল জুরি হিসেবে দাবি করেছেন তারা!
সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এই মানহানি মামলার সবচেয়ে বড় একটি টুইস্ট হলো হার্ডের আইনজীবিদের এই অভিযোগ। তাদের ভাষ্যে, মামলার রায়ের দিন আসল জুরি আদালতে হাজির হননি। তার বদলে নকল একজনকে জুরি সাজিয়ে আনা হয়েছে!
অ্যাম্বার হার্ডের আইনি দল ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিটি জুরির ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধান করেছে। দলিলপত্রে দেখা যায় ১৫ নম্বর জুরির জন্ম ১৯৪৫ সালে। কিন্তু তার বয়স আরো অনেক কম দেখায় বলে সন্দেহ জাগে যে এই জুরির জন্ম হয়তো ১৯৭০ সালের দিকে। তাই অ্যাম্বার হার্ডের আইনজীবিরা আদালতকে এ ব্যাপারে তদন্ত চালাতে অনুরোধ করেন। যদি সত্যিই নকল জুরি উপস্থিত হয়েছিলেন বলে ধরা পড়ে, তাহলে নতুন করে এই মামলার শুনানি আরম্ভ করতে চাপ দিতে পারবেন তারা।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, নতুন করে দাখিলকৃত দলিলপত্র কোনো আপিল নয়। দ্য ব্লাস্ট এর প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাম্বার হার্ড যদি আপিল করতে চান, তাহলে আগে ডেপকে ক্ষতিপূরণের ৮.৩ মিলিয়ন ডলার দিতেই হবে তাকে। কিন্তু অভিনেত্রীর যে সেই আর্থিক সক্ষমতা নেই তা আগেই জানা গেছে।
এদিকে ডেপের একজন অ্যাটর্নি, বেঞ্জামিন চিউ বলেছেন, তিনি জানতেন অ্যাম্বার হার্ডের আইনজীবিরা এমন কোনো অভিযোগ নিয়েই হাজির হবে!
ইতোমধ্যেই জুরি বোর্ডের একজন পুরুষ সদস্য এই মানহানি মামলার রায় কিভাবে হল, সে ব্যাপারে কথা বলতে এগিয়ে এসেছেন। অ্যাম্বার হার্ডের অ্যাটর্নি এলাইন ব্রেডহফট বলেছিলেন, 'হ্যাশট্যাগ জাস্টিস ফর জনি ডেপ' দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জুরিরা রায় দিয়েছেন জনির পক্ষে। এ ব্যাপারে দ্বিমত করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই জুরি বলেন, জুরি বোর্ডের অনেক সদস্যদেরই টুইটার একাউন্ট নেই এবং তারা মামলার বিচারের ক্ষেত্রে অনলাইন কাভারেজ এড়িয়ে চলেন।
- সূত্র- ইয়াহু ডট কম