২০ বছর পর মাটির নিচ থেকে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতার গাড়ি উদ্ধার
আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের পর তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আত্মগোপন করতে যে সাদা টয়োটা গাড়িটি ব্যবহার করেছিলেন, সম্প্রতি তা মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করেছে তালেবান।
তালেবানের সিনিয়র নেতারা গাড়িটিকে কাবুলে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শনের প্রস্তাব দিয়েছেন। আফগানিস্তানের জাতীয় জাদুঘরে ইতোমধ্যেই সাবেক রাজা ও প্রধানমন্ত্রীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন গাড়ি ও কোচ সংরক্ষিত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে হত্যাচেষ্টার সময় ঘাতকের গুলিতে জানালার কাচ চুরমার হয়ে যাওয়া গাড়িও রয়েছে।
তালেবান সরকারের একজন প্রভাবশালী নেতা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানির ভাই আনাস হাক্কানি টুইটারে লেখেন, "এই গাড়িতে চড়ে এমন একজন লোক ঘুরে বেড়াতেন যিনি ইতিহাসের অসাধারণ সব ঘটনায় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি আল্লাহর উপর ভরসা রেখেছিলেন এবং প্রায় ডজনখানেক দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধে তালেবান যোদ্ধাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তাই তার এই স্মৃতি চিহ্নটুকু দেশের জাতীয় জাদুঘরে রাখা উচিত।"
এক তালেবান সূত্র জানায়, প্রায় ২০ বছর মাটির নিচে চাপা থাকার পর মোল্লা ওমরের ছেলে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের নির্দেশে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে।
মাটি খুঁড়ে গাড়ি উদ্ধারের কিছু ছবি টুইটারে পোস্ট করেছেন তালেবান-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মী। ছবিতে দেখা যায়, আফগানিস্তানের দক্ষিণে জাবুল প্রদেশের একটি গ্রাম্য এলাকা থেকে মাটি খুঁড়ে বের করে আনা হচ্ছে প্লাস্টিক শিট দিয়ে ঢাকা গাড়িটি।
মুহম্মদ জালাল বলেন, "মার্কিন আগ্রাসনের প্রথম দিকে এই গাড়িতে চড়ে কান্দাহার থেকে জাবুল প্রদেশে এসেছিলেন প্রয়াত আমির। গাড়িটি এখনো ভালো অবস্থায় আছে।"
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা নেতার আত্মজীবনীমূলক বই 'লুকিং ফর দ্য এনিমি'র লেখক বিট ড্যাম জানান, ২০০১ সালের শেষদিকে যখন মার্কিন-সমর্থিত সৈন্যরা কাবুলে সরকার পতন ঘটায়, তখন এই সাদা টয়োটা গাড়িতে করেই মোল্লা ওমর তার কান্দাহার ঘাঁটি ত্যাগ করেন বলে সবাই জানে।
মোল্লা ওমরের মাথার বিনিময়ে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা সত্ত্বেও, মার্কিন ঘাঁটির ঠিক যেন নাকের ডগা দিয়ে চলাফেরা করতেন ওমর। একজন সহযোগী বিট ড্যামকে জানান, মার্কিন সৈন্যরা একবার একটি বাড়িতে তল্লাশি চালায় যেখানে মোল্লা ওমর লুকিয়ে ছিলেন। কিন্তু পুরো বাড়ি আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও তারা সেই গোপন কক্ষের দরজার সন্ধান পায়নি।
মোল্লা ওমর ২০১৩ সালে মারা গেলেও পরবর্তী দুই বছর পর্যন্ত তার মৃত্যুর কথা স্বীকার করেনি তালেবান। তবে আত্মগোপনে যাওয়ার আগেই ২০০১ সালে বিদ্রোহের নিয়ন্ত্রণ বেশ কৌশলীভাবে নিজের প্রতিনিধিদের হাতে দিয়ে গিয়েছিলেন ওমর। সেসময় তালেবানরা কাবুলে প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত মার্কিন-সমর্থিত সরকারের কাছে আত্মসমর্পণের চেষ্টা করছিল। কিন্তু ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের এই আবেদন মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
লেখক বিট ড্যাম বলেন, "গাড়িটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন- একটা ঐতিহাসিক সময়ে ওমর এই গাড়িটি ব্যবহার করেছিলেন। যে মুহূর্তে তিনি তার অফিস ত্যাগ করে এই সাদা টয়োটায় প্রবেশ করলেন, তখনই তার নেতৃত্বের অনেকাংশে আত্মসমর্পণ করে ফেলে…"
তিনি আরও যোগ করেন, "ওমর নিজেই তখন তার দাদার জন্মভূমিতে আত্মগোপনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। গাড়ি লুকিয়ে ফেলা সম্পর্কে আমি কিছু জানিনা, তবে আমি নিশ্চিত যে তারা নিরাপদ বোধ করেননি তখন… কারণ অল্প কিছুদিন পরেই তালেবানদের উপর ধরপাকড়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল, এজন্যেই বোধহয় তিনি তার গাড়িটা লুকিয়ে ফেলেন।"
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান