যেভাবে বরিস জনসনের পতন ঘটল!
বরিস জনসন ছিলেন তেরেসা মে-র পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মে-র পর নাটকীয়ভাবে ক্ষমতায় আসেন জনসন। ঠিক একই রকম নাটকীয় পরিস্থিতিতে এবার পদ ছাড়তে হচ্ছে বরিস জনসনকেও। মন্ত্রিসভার একের পর এক মন্ত্রীদের পদত্যাগের পর বাধ্য হয়ে প্রথমে দলের পদ ছাড়ছেন জনসন, তারপর শরতে ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রীর পদ।
চলুন দেখে নেওয়া যাক বরিস জনসনের ক্ষমতায় আরোহণ, তার সাফল্য, বিতর্ক ও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ঘটনাপ্রবাহ…
তেরেসা মে-র মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ
২০১৮ সালের জুলাই। টালমাটাল তেরেসা মে-র প্রধানমন্ত্রীর পদ। সেই মুহূর্তেই মে-র পদটাকে আরও টালমাটাল করে দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলেন বরিস জনসন।
এরপর মে-কে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হয়। সে যাত্রায় অনাস্থা ভোটে টিকে গেলেও মে আর ব্রেক্সিট চুক্তি করতে পারেননি।
অনাস্থা ভোটে টিকে গেলেও তৃতীয়বারের মতো ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করাতে না পেরে পদত্যাগ করেন মে।
মে-র পদত্যাগ ও জনসনের প্রধানমন্ত্রীত্ব লাভ
২০১৯ সালের ২৩ জুলাই ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়ে টরি পার্টির প্রধান হওয়ার নির্বাচন জেতেন বরিস জনসন।
এর পরদিনই মে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। আর সরকার গঠনের জন্য রানির নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেন জনসন।
দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই জনসন ব্রেক্সিটবিরোধী কয়েকজন কনজারভেটিভ নেতাকে বরখাস্ত করেন।
পার্লামেন্ট স্থগিত
ব্রেক্সিট চুক্তি পাস না হওয়ার সম্ভাবনা ঘুরপাক খেতে থাকায় ২০১৯ সালের আগস্টে জনসন রানিকে অনুরোধ করেন ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত যেন পার্লামেন্ট বাতিল অথবা স্থগিত করা হয়।
রানি এ অনুরোধে সায় দেন। এরপর পাঁচ সপ্তাহ পার্লামেন্ট স্থগিত থাকার কথা ছিল।
কিন্তু সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট দেখেন যে রানিকে জনসন পার্লামেন্ট পাঁচ সপ্তাহ স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছিলেন, তা আইনসম্মত ছিল না।
বিচারকেরা বলেন, এমপিদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া ছিল ভুল।
সাধারণ নির্বাচনের ডাক ও জয়
জনসন এরপর সাধারণ নির্বাচনের ডাক দেন। ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় সেই নির্বাচন।
এই বাজিতে জিতে যান জনসন। টরি পার্টি ৩৬৫ আসনে জয় পায়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ছিল ৩২৬ ভোট।
নির্বাচনে হেরে (২০৩ ভোট পেয়ে) বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রধান জেরেমি করবিন ঘোষণা দেন, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে তিনি লেবারদের নেতৃত্ব দেবেন না।
'ব্রেক্সিট সম্পন্ন করো'
২০১৯ সালের নির্বাচনের প্রধান ইস্যু ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া। ওই নির্বাচনে জনসনের নেতৃত্বে কনজারভেটিভরা 'ব্রেক্সিট সম্পন্ন করো' স্লোগানের ব্যাপক ব্যবহার করে।
স্লোগানটি জনগণকে দারুণভাবে টানে। ২০১৬ সালের এর গণভোটের পরের তিন বছরে এই ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
২০১৯-এর কনজারভেটিভরা 'ব্রেক্সিট সম্পন্ন করো, ব্রিটেনের সম্ভাবনা অবারিত করো' স্লোগান নিয়ে নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহার দেয় এবং পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
এর এক বছর পর, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে, একেবারে শেষ মুহূর্তে চুক্তির মাধ্যমে ব্রেক্সিট সম্পন্ন করেন জনসন।
এরপর থেকে মিত্ররা তাকে 'ব্রেক্সিট সম্পন্ন করা' ব্যক্তি হিসেবে প্রশংসা করে আসছে।
করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব
২০২০ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে প্রথম কোভিডে মৃত্যু ঘটে।
এর দুই মাস পর, ২৩ মার্চ, দেশটিতে প্রথম লকডাউন দেওয়া হয়। জনসন দেন, ব্রিটিশদের অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে।
কিন্তু এপ্রিল মাসে জনসন নিজেই কোভিডের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থা খারাপ হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়।
জনসন অসুস্থ থাকার সময় সরকার চালাচ্ছিলেন উপপ্রধানমন্ত্রী ডমিনিক রাব।
সুস্থ হয়ে ফেরার পর ৩০ এপ্রিল বরিস জনসন দৈনিক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, যুক্তরাজ্য মহামারির চূড়া পেরিয়ে এসেছে। শনাক্তের হারও কমছে।
১০ মে জনসন পার্কে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় মানুষকে। ৪ জুলাই পাব খুলে দেওয়া হয়।
কামিংসের বার্নার্ড কাসল কেলেঙ্কারি
গত ২২ মে দৈনিক 'মিরর' প্রতিবেদন করে যে বরিস জনসনের প্রধান উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংস মহামারি চূড়ায় থাকাকালে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে খুব সম্ভব লকডাউনের বিধি ভেঙে ডারহ্যামে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন।
জনসন দাবি করেন, কামিংস দায়িত্বপূর্ণ ও আইনসম্মত আচরণ করেছেন।
কিন্তু এরপরও সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা চলতেই থাকে। শেষে কামিংসকে তাৎক্ষনিক সংবাদ সম্মেলন করতে দেওয়া হয়।
কামিংসকে নিজের কাজের পক্ষেই সাফাই গান এবং বলেন নিজ কাজের জন্য তিনি অনুতপ্ত নন।
কামিংসকে বরখাস্ত করতে অস্বীকার করেন জনসন। তাতেই সবার মনে বিশ্বাস জন্মে যায় যে, কেলেঙ্কারি এড়ানোর সামর্থ্য তার নেই।
কামিংসের বিদায়
২০২০ সালের নভেম্বরে ব্রেক্সিট কর্মসূচির সফল স্থপতি ডমিনিক কামিংসকে বিদায় করে দেন বরিস জনসন।
কামিংসের আগের সপ্তাহে পদত্যাগ করেছিলেন জনসনের যোগাযোগ পরিচালক লি কেইন।
বরখাস্ত হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান কামিংস। এরপরে বিভিন্ন সময় তিনি ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট নিয়ে ক্ষতিকর বক্তব্য দিতে থাকেন।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় কোভিড লকডাউন
২০২০ সালের জুলাইয়ে বরিস জনন লকডাউন শিথিলের উদ্যোগ স্থগিত করে দেন।
ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনে করোনায় দৈনিক সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়। কিন্তু ১৮ সেপ্টেম্বরই জনসন বলেন, মানুষ দ্বিতীয়বার লকডাউনে যেতে চায় না।
এরপর ধীরে ধীরে ইংল্যান্ডে লকডাউন শিথিল করা হয়। কিন্তু তারপরও সংক্রমণ বাড়তে থাকায় নভেম্বরের ৫ তারিখে দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন দেওয়া হয়।
এরপর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে তৃতীয় দফায় জাতীয় লকডাউন আরোপ করা হয়। এই লকডাউন চলে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত।
টিকাদান
২০২০ সালের ডিসেম্বরে জনসন কিছুটা সুখবর পান। ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয় যুক্তরাজ্যে।
২০২১ সালের অক্টোবরের মধ্যে ৪ কোটি—অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্কদের ৮৫ শতাংশ টিকার আওতায় আসে।
ওই বছরের ১৯ মার্চ জনসন তার টিকার প্রথম ডোজ নেন।
ওয়ালপেপারগেট কেলেঙ্কারি
কিন্তু নতুন কেলেঙ্কারিতে জনসন টিকা-সাফল্য বেশিদিন উপভোগ করতে পারলেন না।
জনসনের ডাউনিং স্ট্রিটের ফ্ল্যাট সাজানো হয় সোনার ওয়ালপেপার দিয়ে। এই অ্যাপার্টমেন্ট সংস্কারের অর্থায়ন নিয়ে বেকায়দায় পড়েন তিনি।
বিবিসি জানায়, ডাউনিং স্ট্রিটের ওপরে নিজেদের ফ্ল্যাট সংস্কার করেছিলেন জনসন। এ কাজে প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ রয়েছে ৩০ হাজার পাউন্ড। কিন্তু ফ্ল্যাট সংস্কার করতে ২ লাখ পাউন্ড খরচের অভিযোগ ওঠে।
জনসনের বরখাস্ত সাবেক প্রধান উপদেষ্টা কামিংস বলেন, ফ্ল্যাট সংস্কারের জন্য জনসন দাতাদের কাছ থেকে গোপনে তহবিল নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। যেকোনো ধরনের অনুদানের বিষয়ে জানিয়ে দেওয়াটাই নিয়ম। কিন্তু জনসন তা জানাননি বলে অভিযোগ ওঠে।
তবে জনসন দাবি করেন, ফ্ল্যাট সংস্কারের খরচ পুরোটা তিনি নিজেই দিয়েছেন। তবে এই কাজের জন্য অর্থ প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসেছিল অনুদান বা ঋণ হিসাবে, যা তিনি পরে শোধ করে দিয়েছেন।
কিন্তু এ তথ্য গোপনের জন্য ব্রিটেনের ইলেকটোরাল কমিশন কনজারভেটিভদের ১৭ হাজার ৮০০ পাউন্ড জরিমানা করে।
এই কেলেঙ্কারির পরও অবশ্য কনজারভেটিভ পার্টি একটি উপনির্বাচনে জেতে।
তবে এক প্রতিবেদনে জানা যায়, কীভাবে শোধ করবেন, তার উপায় বের করে না রেখেই দলের অনুদানের অর্থ জনসন ফ্ল্যাট সংস্কারের কাজে ব্যয় করেন।
পরে টরি দলের সদস্য ও দাতা ডেভিড ব্রাউনলো এই অর্থ শোধ করে দেন।
পার্টিগেট কেলেঙ্কারি
২০২০ সালের জুন। করোনাজনিত কঠোর লকডাউন চলছে ব্রিটেনে। ওই সময় জনসমাগম ছিল আইনত নিষিদ্ধ। বিধিনিষেধ ছিল সামাজিক আয়োজনেও। ছিল শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশনা।
কিন্তু এই কঠোর লকডাউনের মধ্যেই ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে নিজের বাসভবনে শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে পার্টি করেন বরিস জনসন। আয়োজন করেন মদ্যপানের।
ওই পার্টিতে জনসনের সঙ্গে তার স্ত্রী ক্যারি সিমন্ডসও উপস্থিত ছিলেন। শতাধিক অতিথি ছিলেন পার্টিতে।
ওই পার্টি-সংক্রান্ত একটি ইমেইল ফাঁস হওয়ার পরই এই নিয়মভঙ্গ সম্পর্কে জানা যায়। ইমেইলে জনসনের ব্যক্তিগত সেক্রেটারি মার্টিন রেনল্ডস অতিথিদের দাওয়াত করেছিলেন বলে জানা যায়।
বিধিনিষেধ ভেঙে পার্টি করার অপরাধে বরিস জনসন, তার স্ত্রী ক্যারি জনসন ও অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাককে জরিমানাও করে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীসহ শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের এই জরিমানা গোনার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোতে।
জীবনধারণের খরচ ও কর বৃদ্ধি
২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি চরম বেড়ে গেছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
অনেক কিছুই বরিস জনসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। যেমন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ফলে তেলের দাম বেড়েছে, বেড়েছে খাদ্যের দাম।
আর যখন সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে—যেমন জ্বালানি শুল্ক প্রতি লিটারে ৫ পাউন্ড কমানো—সেসব পদক্ষেপও অকার্যকর হয়ে পড়েছে এপ্রিলে মাসে কর বাড়ানোর ফলে। জাতীয় বিমা পাউন্ডে ১ দশমিক ২৫ পেন্স বেড়েছে।
সরকার বলেছে, কর বাড়ানোর ফলে স্বাস্থ্য খাত ও সামাজিক সুরক্ষা উপকৃত হবে। তাছাড়া এ সপ্তাহে যেসব বদল আনা হয়েছে, তার ফলে কর বাড়ানোর ধাক্কা কম লাগবে। কিন্তু যারা বছরে ৩৪ হাজার পাউন্ডের বেশি উপার্জন করেন তাদেরকে এখনও আরও বেশি কর দিতে হবে।
এপ্রিল মাসে লেবার পার্টির নেতা স্যার কির স্টার্মার বলেছিলেন,'কয়েক দশকের মধ্যে যখন জীবনধারণের খরচ সবচেয়ে বেড়ে গেছে, তখনই সরকার শ্রমজীবী মানুষের উপর করের বোঝা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'
ওয়েন প্যাটারসন কেলেঙ্কারি
২০২১ সালের অক্টোবরে হাউস অফ কমন্সের একটি কমিটি তৎকালীন কনজারভেটিভ এমপি ওয়েন প্যাটারসনকে জন্য ৩০ দিনের জন্য বরখাস্ত করার সুপারিশ করে।
কমিটি বলে, সংস্থাগুলো প্যাটারসনকে অর্থ প্রদান করেছে তাদেরকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তিনি লবিংয়ে নিয়ম ভঙ্গ করেছেন।
কিন্তু কনজারভেটিভরা—বরিস জনসনের নেতৃত্বে—তার প্যাটারসনের বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করার পক্ষে ভোট দেয়। সেইসঙ্গে কীভাবে তদন্ত করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি নতুন কমিটিও গঠন করে।
আলোচনা-সমালোচনার পর প্যাটারসন পদত্যাগ করেন। জনসন পরে স্বীকার করেন যে তিনি প্যাটারসনের ঘটনা ঠিকমতো সামলাতে পারেননি।
ইউক্রেন যুদ্ধ
রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো প্রথম বিশ্বনেতাদের একজন ছিলেন জনসন। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নিজ দেশের পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়া প্রথম পশ্চিম ইউরোপীয় নেতাও তিনি।
২০২২ সালের এপ্রিলে কিয়েভে এক তৎক্ষণাৎ সফরে ইউক্রেনকে ব্রিটিশ অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন জনসন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তবে পরে দেশের অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা থেকে নজর সরানোর জন্য জন্য ইউক্রেন যুদ্ধকে ব্যবহার করার জন্য বিরোধীরা জনসনের সমালোচনা করেন।
অনাস্থা ভোট
২০২২ সালের জুনে বরিস জনসনকে সরানোর জন্য অনাস্থা ভোটের আয়োজন হয়। তবে নিজ দলীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের আস্থা ভোটে সে যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যান জনসন। তার পক্ষে ২১১ ভোট এবং বিপক্ষে ১৪৮ ভোট পড়ে।
পার্টিগেট কেলেঙ্কারির জন্য দলীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের অনাস্থা ভোটের মুখে পড়েন জনসন।
সে দফায় অনাস্থা ভোট থেকে বেঁচে গেলেও জনসনের অবস্থান টলমলে হয়ে যায়।
ক্রিস পিঞ্চার কেলেঙ্কারি
এরপর ২০২২ সালের ২০ জুন পদত্যাগ করেন ডেপুটি চিফ হুইপ ক্রিস পিঞ্চার। তার বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছিল।
কনজারভেটিভ পার্টির এমপি ক্রিস পিঞ্চারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, লন্ডনে টরিদের প্রাইভেট সদস্যদের ক্লাব কার্লটন ক্লাবে দুই অতিথির ওপর যৌন হামলা চালিয়েছেন তিনি।
কিন্তু তার বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ সম্পর্কে জানার পরও বরিস জনসন কেন পিঞ্চারকে ডেপুটি চিফ হুইপ নিয়োগ করেন—তা নিয়েই তোপের মুখে পড়েন।
যদিও ডাউনিং স্ট্রিট দাবি করে, হুইপের অফিসে নিয়োগ দেয়ার সময় পিঞ্চারের বিরুদ্ধে 'সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযগের' কথা জনসনের জানা ছিল না। কিন্তু পরে জানা যায়, ২০১৯ সালেই তাকে এই অভিযোগ সম্পর্কে বলা হয়।
গত ৫ জুলাই এটি নিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন বরিস জনসন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই জনসনের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে নাটকীয়ভাবে দুই মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। তা নিয়েই ব্রিটিশ রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়।
প্রথমে অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ পদত্যাগ করেন। এরপর থেকেই পড়ে গেছে পদত্যাগের হিড়িক।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি এমপি পদত্যাগ করেছেন।
চাপের মুখে শেষতক পদ ছাড়তে রাজি হয়েছেন বরিস জনসন। প্রথমে দলের পদ ছাড়বেন তিনি, এরপর ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রীর পদ। নাটকীয়ভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন এই রাজনীতিবিদ, বিদায়ও নিতে হচ্ছে নাটকীয়ভাবেই।