ঈদের দিন সাড়ে ৩ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ট্যানারিগুলোর
সাভারের চামড়া শিল্প নগরী ট্যানারিতে ঈদের দিন রাত পর্যন্ত সাড়ে ৩ লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ।
গতকাল (১০ জুলাই) ঈদুল আজহার চলতি এই মৌসুমের প্রথম দিনে এই চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এই মৌসুমে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ মিলিয়ে সর্বমোট ১ কোটি পিস কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তাদের।
অন্যদিকে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর বাইরে গড়ে ওঠা কাঁচা চামড়ার আড়তগুলোতে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় ঈদের দিন তুলনামূলক কম পরিমাণ চামড়া পেয়েছেন তারা।
সততা ট্রেডার্স নামে স্থানীয় এক আড়তের ব্যবস্থাপক মো. মোতাহার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'অন্যান্য বছর যেখানে অন্তত ২৫০০ থেকে ৩৫০০ কাঁচা চামড়া আমরা ঈদের দিন সংগ্রহ করে থাকি, এ বছর সেখানে মাত্র ১,৫০০ চামড়া সংগ্রহ করতে পেরেছি।'
চামড়াপ্রতি বিক্রেতাদের ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা দাম দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সোমবার (১১ জুলাই) সকালে সাভারের চামড়া শিল্প নগরী ঘুরে দেখা যায়, গতকাল দুপুরের পর হতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা চামড়া সংগ্রহ করে প্রাথমিকভাবে তা লবণজাত করে রাখা হয়েছে। ট্যানারিগুলো জানায়, চামড়া সংগ্রহ শেষে আগামী ২ বা ৩ দিন পর থেকে এসব চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ শুরু করবেন তারা।
এ সময় চামড়া শিল্প নগরীর অভ্যন্তরীণ পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ট্যানারির সামনে কিংবা সড়কের উপর কোনো চামড়া বর্জ্য স্তূপ না করতে ট্যানারি মালিকদের আহ্বান জানিয়ে শিল্প নগরী কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মাইকিং করতে দেখা যায়।
কয়েকটি ট্যানারি কর্তৃপক্ষ জানায়, এ বছর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানির ব্যবহার রোধে প্রতিটি কারখানায় ফ্লো-মিটার স্থাপন করে তা পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট কোম্পানি লি. কর্তৃপক্ষ।
'প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি যেন ব্যবহৃত না হয় সেই লক্ষ্যে আমাদের প্রতিটি ট্যানারিতে ফ্লো-মিটার স্থাপন করা হয়েছে। সেই হিসাবেই আমরা পানি ব্যবহার করছি। যদিও এখনো পুরোপুরি চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ আমাদের শুরু হয়নি, তবে সেই হিসাবেই আমরা কাজ করব। তাছাড়া আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দুই দিনের পানি ধরে রাখার মতো সেডিমেন্টেশন ট্যাংকও আমরা স্থাপন করেছি, যা আগে আমাদের ছিলো না,' টিবিএসকে বলছিলেন সিটি লেদারের ব্যবস্থাপক মো. রুবেল।
অপরদিকে, পার্শ্ববর্তী ধলেশ্বরী নদী সংলগ্ন চামড়া শিল্প নগরীর ডাম্পিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ট্যানারী থেকে ট্রলিতে করে সেখানকার কাঁচা চামড়ার বিভিন্ন অংশ, বর্জ্য ও কাটিং সেখানে স্তূপ করা হচ্ছে।
কঠিন বর্জ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত সোহেল নামে এক শ্রমিক টিবিএসকে বলেন, 'কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলার জন্য এখানে গর্ত করে দিয়েছে। নির্দেশনা মেনে এখানেই বর্জ্য স্তূপ করছি আমরা।'
তবে ট্যানারিগুলোতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ দূষণ রোধে নেওয়া উদ্যোগগুলো সর্ম্পকে জানতে ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট কোম্পানি লি.-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও খুদেবার্তা পাঠালেও ফোন রিসিভ না করায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
চামড়া শিল্প নগরী বিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান রিজোয়ান টিবিএসকে বলেন, 'প্রতিটি ট্যানারিতে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার ট্যানারিগুলোর ড্রামের সংখ্যা অনুপাতে পানি ব্যবহারের সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে। ফ্লো-মিটার স্থাপন করে তা পর্যবেক্ষণ করছে সিইটিপি কর্তৃপক্ষ। মিটার দেখে কোথাও অতিরিক্ত পানির ব্যবহার পাওয়া গেলে অতিরিক্ত পানির জন্য সারচার্জ আরোপ করা হবে। তবে বিষয়গুলো যেহেতু সিইটিপি কর্তৃপক্ষ তথা ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট কোম্পানি লি.-এর আওতাধীন, তারাই এগুলো দেখভাল করে, সেহেতু তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সিইটিপির যে সক্ষমতা রয়েছে, ট্যানারিগুলো যদি অতিরিক্ত পানি ব্যবহার না করে, তাহলে ওভার ফ্লো হওয়ার যে সমস্যা, সেটি কিন্তু আর থাকে না। সেটি নিয়ন্ত্রণ করতেই এবার ফ্লো মিটারগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।'
মিটারগুলো আরও দু-বছর আগে স্থাপন করা হলেও এ বছর থেকে এগুলোর কার্যকর ব্যবহার শুরু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।