দুর্নীতি মামলায় সাবেক ওসি প্রদীপের ২০ ও তার স্ত্রীর ২১ বছরের কারাদণ্ড
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় চট্টগ্রামের টেকনাফ থানার সাবেক (ওসি) প্রদীপ কুমার দাসকে ২০ বছর ও তার স্ত্রী চুমকি করণকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মুন্সী আব্দুল মজিদের আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। তাদের প্রত্যেককেই ৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সাজার বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন দুদক মামলার আইনজীবী চট্টগ্রাম আদালতের পিপি মাহমুদুল হক।
তিনি বলেন, 'আদালতে আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। ২৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালতে এই রায় দিয়েছেন।'
২০২০ সালের ২৩ আগস্ট প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ বাদী হয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দীন।
এরপর গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ দুর্নীতি মামলার চার্জ গঠনের মাধ্যমে প্রদীপ এবং তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
এর আগে গত বছরের ২৬ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। প্রদীপ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকলেও চলতি বছরের ২৩ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন প্রদীপের স্ত্রী চুমকি। পরে আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠান।
জানা গেছে, চুমকির ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকা। বাকি সম্পদ অর্থাৎ ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে একটি বাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একটি গাড়ি ও মাইক্রোবাস, কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাটের মালিক প্রদীপের স্ত্রী চুমকি।
প্রদীপের ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রী চুমকি এসব সম্পদ অর্জন করেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে। এছাড়া চুমকি নিজেকে মাছ ব্যবসায়ী দাবি করলেও তার কোনো প্রমাণ পায়নি দুদক।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করতে পেরেছে। দুজন ছাড়া ২২ জন হচ্ছেন ফর্মালিটিজ।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সমীর দাশগুপ্ত টিবিএসকে বলেন, "আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। আশা করি উচ্চ আদালতে প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি খালাস পাবেন।"
তিনি বলেন, "যিনি ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেছিলেন, তাকে মামলার সাক্ষী করা হয়েছিল। কিন্তু তাকে আদালতে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। যেহেতু তিনি আসেননি তার বেনিফিট অব ডাউট আসামিপক্ষে যাবে।"
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর মেরিনড্রাইভ চেকপোস্টে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় একই বছরের ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন ওসি প্রদীপ। সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।