চট্টগ্রামে ৩০ বছর পর অবৈধ দখলমুক্ত হলো ৭০০ একর ভূমি
গত ৩০ বছরে সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ি এলাকার ৩ হাজার ১০০ একর ভূমি অবৈধভাবে দখলে নিয়েছে একটি গোষ্টি। সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হওয়া সেই জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগর এলাকায় অবৈধ বসতি উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। অভিযানে ১৭৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৭০০ একর পাহাড়ি জমি উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) পরিচালিত এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোমিনুর রহমান। জঙ্গল সলিমপুর মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে অভিযানটি পরিচালিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোমিনুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় আলীনগরে সরকারি জমিতে মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের আওতায় প্রস্তাবিত স্থাপনার সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। এখানে বিভাগীয় পাহাড় ব্যবস্থাপনা অফিস, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, স্পোর্টস ভিলেজ, সাফারি পার্ক, র্যাব ও পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হবে।"
"আগামী এক মাসের মধ্যে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। কাউকে পাহাড় কাটতে দেওয়া হবে না। সরকারি জায়গায় একটি পরিকল্পিত নগরী হবে। আর যারা প্রকৃত ভূমিহীন তাদের সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় পূনর্বাসন করা হবে", বলেন জেলা প্রশাসক।
অভিযানে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মফিদুল আলম সহ ৭০ জন পুলিশ, ৪০ জন র্যাব ও ৬০ জন আনসার সদস্য অংশ নেন।
পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল আলম জানান, জঙ্গল সলিমপুরের বিশাল সরকারি খাস জমি ঘিরে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের পাশাপাশি বিনোদনমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পিতভাবে সাজানো হবে পুরো এলাকাকে।
তিনি বলেন, "বর্তমানে নিরাপত্তা চৌকিতে ৮ জন সদস্য আছে। এর বাইরে এখানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ও একটি র্যাবের ক্যাম্পের জন্য জায়গা নির্ধারণ করেছি। জেলা প্রশাসন চূড়ান্তভাবে জায়গা দিলে আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে পুলিশ ক্যাম্প বিশালাকারে স্থাপন করব।"
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মফিদুল আলম বলেন, জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগর খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এ এলাকায় ৩০ শতাংশ পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। এটি রক্ষা করতে হবে। এজন্যই সেখানে অভিযান পরিচালনা করা। আগেও একবার এ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। তখন ৩০০-এর বেশি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর ও আলী নগরে 'চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ' নামে একটি সংগঠনের আড়ালে সরকারি খাস জমিতে গড়ে তোলা এই ঝুঁকিপূর্ণ বসতি পরিণত হয় সন্ত্রাসীদের দুর্ভেদ্য সাম্রাজ্যে। গত এক দশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সংবাদকর্মীরা ওই এলাকায় ঢুকতে পারেননি। সেখানে সন্ত্রাসীদের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীও ছিল।
পাহাড়ে এই অবৈধ বসতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২০০৪ সালে একাধিক পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ২০১০ সালে স্থানীয় লাল বাদশা ও আলী আক্কাসের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। ২০১০ সালের ২৩ মে র্যাবের সঙ্গে কথিত 'বন্ধুকযুদ্ধে' আলী আক্কাস নিহত হন। আক্কাসের পর্ব শেষ হতেই শুরু হয় সন্ত্রাসী ইয়াসিনের আধিপত্ত। যার দেখা কখনোই পায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহীনি।