বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠেছেন যে নারী
সাউথ এশিয়ান গেমসে ভারোত্তোলনে টানা দুইবার স্বর্ণপদকজয়ী মাবিয়া আক্তার হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম প্রতীক।
২২ বছর বয়সী মাবিয়া ছোটবেলা থেকেই অর্থ কষ্টে বড় হয়েছেন। আর্থিক কারণে স্কুলে যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়েছিল তার। এমনকি প্রশিক্ষণ গ্রহণে যে পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন ছিল, সেটিও জোগাড় করা সম্ভব হয়নি অনেক সময়। আর এখন তিনি সাউথ এশিয়ান গেমসে দুবার স্বর্ণপদক বিজয়ী বাংলাদেশি; আবার চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে নিজের প্রথম কমনওয়েলথ গেমসেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি।
কমনওয়েলথ গেমসে ৬৪ কেজি ক্যাটেগরিতে মাবিয়া অষ্টম স্থান দখল করেছেন, যা ছিল প্রত্যাশার চেয়েও কিছুটা বেশি। তার সাফল্যের আগে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে ভারোত্তোলনে নারীদের অংশগ্রহণ প্রায়শই সমালোচনা ও বৈষম্যের মুখোমুখি হতো।
মাবিয়া বলেন, "আমি এমনভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি যাতে অন্য নারীরাও এগিয়ে আসতে পারে এবং ভারোত্তোলন বা অন্যান্য খেলায় যোগ দিতে পারে। আমি দেখতে চাই অন্যরা আসছে এবং আমার মতো একই প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে।"
"আমি মনে করি না যে, নারী হওয়া আমার জন্য আর কোনো সমস্যা তৈরি করবে, আমি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সমান সমর্থন পাই। এটি কেবল সম্ভাব্য সেরা ফলাফলটিই বয়ে আনবে", যোগ করেন তিনি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাবিয়া বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন পেয়েছেন। গত ৩০ বছরের বেশির ভাগ সময়ে বাংলাদেশ নারী প্রধানমন্ত্রীদের নেতৃত্বের অধীনে পরিচালিত হয়েছে। ২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে রয়েছে বাংলাদেশ, এ সময়ের মধ্যে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমান সরকারের সময়ে খেলাধুলায় নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগও দ্রুত বেড়েছে। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা দল এবং এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন। চলতি সপ্তাহে বার্মিংহামে কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেওয়া ৩১ জন ক্রীড়াবিদের মধ্যে ১১ জনই ছিলেন নারী।
মাবিয়া বলেন, "বাংলাদেশ সরকার খেলাধুলায় নারীদের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখছি। নারীদের এগিয়ে আসার অর্থ হলো, আমরা এখন ছেলেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছি।"
মাদারীপুরে জন্ম নেওয়া মাবিয়া আক্তার ছোটবেলায় তার চাচার কাছে ভারোত্তোলনের বিষয়ে জানতে পারেন। প্রশিক্ষণে অংশ নিতে যে সমস্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তিনি হয়েছেন, তা পেরিয়ে এসেছেন সাফল্যের সঙ্গে। আর এই সাফল্যের পিছনে তার পরিবারের অবদানকেই তিনি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বলে মনে করেন।
মাবিয়ার প্রত্যাশা, খেলাধুলায় নারীদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতা ও সমর্থনের ফলে খেলার মাঠে নারীরা আর বৈষম্যের শিকার হবেন না। প্রতি পদে তাকে যেসব বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, এখনকার নারীরা অতি সহজেই সেসব বাধা পেরিয়ে সফল হতে পারবেন।
"নারীরা ভারোত্তোলনে এগিয়ে আসুক- আমি এটা দেখতে চাই; বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা একদিন অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং পদক জেতার সুযোগ পাবে- এটিই আমার প্রত্যাশা", বলেন মাবিয়া।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান