৭ বছর চালকের ছদ্মবেশে পলাতক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
সাত বছর আগে চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর জিল্লুর রহমান ভান্ডারি হত্যা মামলার আসামি তোতা মিয়া (৪৫) জামিন নিয়ে লাপাত্তা ছিলেন। দীর্ঘ সময়ে পরিবার-পরিজন কারও সঙ্গেই যোগাযোগ ছিলোনা তোতার। গ্রেপ্তার এড়াতে কৌশল নিয়েও অবশেষে র্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন খুনের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এই আসামি।
র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ পলাতক জীবনে তোতা মিয়া একাধিকবার নিজের অবস্থান বদলেছেন। বদলে ফেলেছেন নিজের পেশা-পরিচয়; বেশভুষাও। ঢাকার তুরাগ থানার কামারপাড়া এলাকা থেকে শনিবার তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রানীরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে জিল্লুর ভান্ডারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন বাদী হয়ে আট জনের নাম উল্লেখ ও চার-পাঁচ জনকে অজ্ঞাতনামা রেখে রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালত অভিযুক্ত দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্তদের একজন তোতা মিয়া।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ছোট ভাই মোহাম্মদ আজিম উদ্দিনকে বিদেশে পাঠানোর টাকা নিয়ে দ্বন্দের জেড়ে জিল্লুর ভান্ডারীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিলো। এরপর পুলিশ তোতা মিয়াসহ কয়েকজন কে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু পরবর্তিতে ২০১৭ সালে জামিনে মুক্তি পায়। আসামিরা জামিনে এসে পালিয়ে যায়।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তোতা মিয়া গত সাত বছর ধরে চালকের ছদ্মবেশে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন তোতা কোনো ডিভেইসও ব্যবহার করতেন না।'
'প্রায় সাত বছর ক্লু-লেস থাকা তোতার অবস্থান সম্পর্কে আমরা প্রথম জানতে পারি গত ৭ এপ্রিল। হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আরেক আসামি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. কামালকে গ্রেপ্তারের পর। জানা যায়, তোতা ঢাকার উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে অটো চালায়। কিন্তু রাজধানীর মত ব্যস্ত এলাকায় তাঁকে খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিলো, তবে তুরাগে গিয়ে আমরা তাঁর খোঁজ পেয়েছি', বলেন কর্নেল এম এ ইউসুফ।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র্যাব-৭-এর সিনিয়র সহাকারি পরিচালক মো. নুরুল আবছার বলেন, 'পালিয়ে থাকাকালীন তোতা মিয়া কখনো বাস চালক আবার কখনো বাস হেলপার হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলো। পরে উত্তরায় অটোরিকশা চালাতো, সেখান থেকে পালিয়ে সম্প্রতি তুরাগ থানা এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা চালানো শুরু করে।
পরিচয় গোপন রাখতে দাঁড়ি রাখে, সাতবছরে তার অবয়বেও পরিবর্তন এসেছিলো। একারণে আমাদের কাছে থাকা তার সাতবছর আগের ছবির সঙ্গে তোতামিয়াকে কোনো ভাবেই মেলানো যাচ্ছিল না। প্রথমে সন্দেহের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করলেও পরে সে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।'
জানা গেছে, জিল্লুর রহমান ভান্ডারি হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি শহিদুল ইসলাম খোকন এবং সন্ত্রাসী পিস্তল ইসমাইল বর্তমানে পলাতক আছে। এর মধ্যে পিস্তল ইসমাইল বর্তমানে কাতারে আছেন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী কামাল ও তোতা মিয়া গ্রেপ্তার হয়েছেন। পলাতক আছেন-ধামা আবু, জসিম উদ্দিন, নাছির, সুমন।