দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিক্রি কমেছে ৩০-৪০%
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামের ঊর্ধ্বগতিতে প্রভাবিত হয়েছে হোটেল এবং রেস্তোরাঁর ব্যবসা। দাম বাড়ার পর তাদের বিক্রি কমেছে এক-তৃতীয়াংশ।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের বিক্রি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে।"
তিনি বলেন, যারা প্রায়ই বাইরে খেতেন তারা এখন হোটেল ও রেস্তোরাঁয় কম যাচ্ছেন। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য কম খরচ করছেন তারা।
"আগে যারা ভাতের সাথে মাছ কিংবা মাংসের তরকারিসহ কয়েকটি পদ খেতেন, তারা এখন এক পদ দিয়েই ভাত খাচ্ছেন। বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু খাচ্ছেন তারা," যোগ করেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, হোটেলে খাবার তৈরিতে যা প্রয়োজন সেই কাচাঁমালের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। কিন্তু ক্রেতা হারানোর ভয়ে সেই তুলনায় খাবারের দাম বাড়াতে পারছেন না তারা।
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর, কল্যাণপুর, বাংলামটর ও মগবাজারের প্রায় ২৫টি হোটেল -রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা গেছে কোনো হোটেলে খাবারের দাম বাড়িয়েছে। কেউ পরিমাণে খাবার কম দিয়ে আগের দামই রাখছে, আবার অন্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দাম বাড়ানোর।
হোটেলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুরগির হাফ গ্রিল আগে ছিল ১৮০ টাকা, এখন ২০০ টাকা করা হয়েছে।
২০ টাকার নান রুটি ২৫ টাকা, ১০ টাকার ডালপুরি ১৫ টাকা, ১০ টাকার চা ১৫ টাকা, আর ১৫ টাকার ভর্তা ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, ৩০ টাকা বাটি শাকের দাম রাখা হচ্ছে ৩৫ টাকা।
শেওড়াপাড়া এলাকার ঢাকা বিরানি হাউজে দেখা গেছে সব পণ্যের দাম ৫ থেকে ২০ টাকা করে বাড়িয়েছে তারা। ৫ টাকার পরোটা রাখছে ১০ টাকা। পাঙ্গাস ও রুই মাছের পিস ১০ টাকা বেড়ে যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ টাকা হয়েছে।
হাফ তেহারি আগে যেখানে ছিল ৭০ টাকা, সেটা এখন হয়েছে ৯০ টাকা। আর ফুল প্লেট তেহারি ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৮০ টাকা। গরুর কাচ্চি ফুল ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা। হাফ কাচ্চি ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা। চিকেন খিচুড়ি হাফ ১০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা। ডিম পোলাও হাফ ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ হোটেলের ম্যানেজার মোহম্মদ অনিক বলেন, "দাম বাড়িয়েও আমাদের লাভ তেমন থাকছে না। আমাদের বিক্রি অর্ধেক কমে গেছে।"
দিলু রোড এলাকার বিক্রমপুর হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের বিক্রয়কর্মী মোহম্মদ রশিদ বলেন, আলু ভর্তা ১০ টাকা ছিল এখন ১৫ টাকা হয়েছে। ৫ টাকার ডাল পুরি ১০ টাকা। পরোটা ছিল ৫ টাকা, এখন ১০ টাকা হয়েছে।
হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাবারের দাম বাড়ায় বিভিন্ন মধ্যবিত্ব পেশাজীবীসহ স্বল্প আয়ের যেসব মানুষ ঘরের বাইরে খাবার খান তারা বিপাকে পড়েছেন।
অনেকে সকালের নাস্তায় পরোটার সঙ্গে ডিমের অমলেট খাওয়া বাদ দিয়েছেন। দুপুরে যারা মাছ অথবা মুরগি খেতেন তারা কেউ কেউ সবজি বা ডিম দিয়ে খাচ্ছেন।
ট্রাক চালক মোহম্মদ মামুন বলেন, "২০০ টাকায় হোটেলে দুই বেলা খেতে পারতাম, এখন সেই একই খাবারের দাম ৩০০ টাকা হয়েছে। তেলাপিয়া মাচের পিস ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা হয়েছে। ভাতের প্লেট ৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।"
তেজগাঁও বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় দিনমজুর ফারুক আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, "নিম্নমানের হোটেলে আমরা খাই। সেখানে আলু ভর্তা ৫ টাকা বেড়ে ১০ টাকা হয়েছে। পাঙ্গাস মাছের পিস ৫০ টাকা ছিল সেটা এখন ৭০ টাকা হয়েছে। পাতলা ডাল ফ্রি দিত এখন ১০ টাকা লাগে।"
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা শহর মিলে হোটেল-রেস্তোরাঁর সংখ্যা ৬০ হাজার। হোটেল রেস্তোরাঁর সঙ্গে জড়িত ৩০ লাখ কর্মী।
"করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁ খাত। কিন্তু আমরা কোনো প্রণোদনা পাইনি," বলেন ইমরান হাসান।
তিনি বলেন, "আমাদের টিকে থাকার জন্য এখন আমরা সরকারের কাছে ৩ থেকে ৪ শতাংশ হারে সহজ শর্তে ঋণ চাই।"
মগবাজার এলাকার জলপাই রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পার্টি সেন্টারের ম্যানেজার আব্দুল জলিল বলেন, "আমরা এখনও দাম বাড়াইনি। তবে চিন্তা করছি দাম বাড়ানোর। আগের মত এখন আর অনুষ্ঠান হয় না। আমাদের বিক্রি আগের তুলনায় কমে গেছে।"
কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় পাঠাও চালক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, "১৫ দিন আগে ১১০ টাকায় দুপুরে ভাত খেতাম ছোট এক পিস মাছ দিয়ে। এখন সেই খাবার খেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৫০ টাকা। খরচ বাঁচাতে ভাতের সঙ্গে শুধু ডাল আর সবজি খাই।"
কল্যাণপুর বাসস্টান্ডের কাছে আল্লার দান বিরিয়ানী হাউজ এর ম্যানেজার সোহাগ হোসেন বলেন, "আমাদের বিক্রি কমেছে ৫০ শতাংশ। এখন কোনোমতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখছি।"