বাইডেনের শিক্ষাঋণ মওকুফের পরিকল্পনায় কী আছে?
বুধবার (২৪ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফেডারেল সরকারের মার্কিনীদের দেওয়া শিক্ষাঋণ জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত মওকুফের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে যাদের ঋণ আছে তাদের সবাই এ মওকুফের আওতায় আসবেন না।
নতুন এ পরিকল্পনা অনুযায়ী যারা আগে ঋণ নিয়েছেন, তাদেরকে এখন আর প্রতি মাসে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না। এ সুবিধা তারা পাবেন কমপক্ষে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত। এছাড়া ব্যক্তির আয়ের সঙ্গে সমন্নয় করে ঋণ পরিশোধ সুবিধা তৈরি করার প্রস্তাবও রয়েছে বাইডেনের পরিকল্পনায়।
বাইডেনের পরিকল্পনায় দুই ধরনের ঋণ মওকুফের কথা রয়েছে। একটি হচ্ছে ১০ হাজার ডলার মওকুফ, আর অন্যটিতে ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত ঋণমুক্তি দেওয়া হবে।
যেসব ব্যক্তি একা বাস করেন ও বছরে এক লাখ ২৫ হাজার ডলারের কম আয় করেন, তারা ঋণের ১০ হাজার ডলার মওকুফ পাবেন। আর বিবাহিত হলে, একত্রে ট্যাক্স দিলে, কোনো পরিবারের প্রধান হলে- এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তির আয় আড়াই লাখ ডলারের কম হলে তিনিও ১০ হাজার ডলার মওকুফ সুবিধাটি গ্রহণ করতে পারবেন। তবে এর যোগ্যতা নির্ধারণ করা হবে ২০২০-২০২১ সালে ব্যক্তির অ্যাডজাস্টেড গ্রস ইনকামের ওপর।
অন্যদিকে কেউ যদি 'পেল গ্র্যান্ট'-এর অধীনে শিক্ষাঋণ পেয়ে থাকেন, তাহলে এসব শর্তপূরণ সাপেক্ষে তিনি মোট ২০ হাজার ডলার ঋণ-মওকুফ পাবেন। তবে আগামী ৩০ জুনের পর নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে মওকুফের সুবিধা পাওয়া যাবে না। যেসব শিক্ষার্থী অত্যাধিক আর্থিক সমস্যায় থাকেন, তাদেরকে পেল গ্র্যান্টের আওতায় ঋণ দেওয়া হয়। এ ঋণ পরিশোধ করতে হয়না গ্রহীতাকে।
কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি শিক্ষাঋণ (ফেডারেল স্টুডেন্ট লোন) এ মওকুফের আওতাভুক্ত। বেসরকারি উৎস থেকে ঋণগ্রহণকারী কেউ এ সুবিধা পাচ্ছেন না। কেউ যদি পড়ালেখা মাঝপথে থামিয়ে দেন, তাহলে তার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ এক্ষেত্রেও ঋণ মওকুফের সুবিধাটি পাওয়া যাবে।
ঋণগ্রহীতাদের অনেকেরই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রতিশ্রুত ঋণ মওকুফ হয়ে যাবে। তবে কারও কারও হয়তো আমলাতান্ত্রিকভাবে প্রমাণ করতে হতে পারে যে তিনি ঋণ মওকুফের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য। এক্ষেত্রে দেশটির শিক্ষাবোর্ডের কাছে দরখাস্ত দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করবে সরকার।
ঋণগ্রহীতাদের অনেকে এখন পড়ালেখা শেষ করে চাকরিজীবনে প্রবেশ করেছেন। তাই তাদেরকে ঋণের কিস্তি আয় অনুযায়ী (ইনকাম-ড্রিভেন) পরিশোধ করতে হয়। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ১০ বা ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত মওকুফ পেলেও কিস্তি তাদেরকে আগের মতোই পরিশোধ করতে হবে।
তবে কিস্তির নতুন কোনো প্ল্যান গ্রহণ করলে হয়তো পরিমাণ আগের চেয়ে কমে যেতে পারে। বাইডেনের এ পরিকল্পনায় নতুন একটি নিয়ম তৈরি করা হবে যার ফলে ব্যক্তির আয়ের কেবল পাঁচ শতাংশ কিস্তি হিসেবে দিতে হবে। তবে কেউ চাইলে আগের মতো হারেই কিস্তি পরিশোধ চালিয়ে যেতে পারবেন।
যেসব ব্যক্তি ইতোমধ্যে ঋণখেলাপি হয়েছেন তারাও এ ঋণ মওকুফ সুবিধা পাবেন। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রক্ষেপণে জানা গেছে, জনপ্রতি ১০ হাজার ডলার মওকুফ করতেই ফেডারেল সরকারের খরচ বাড়বে প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৯৮ হাজার কোটি ডলার। তাই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত এ ধরনের ঋণ মওকুফের সম্ভাবনা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাঋণ নিয়ে কিছু একটা করতে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের মধ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে মতভেদ চলেছে। সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের নেতা চাক শুমার এবং এলিজাবেথ ওয়ারেনের মতো প্রগতিশীল ডেমোক্রেটরা ঋণ মওকুফের চাপ তৈরি করেছেন।
তবে এ পরিকল্পনার বিরোধিতাকারীরা মনে করছেন, সরকারের এ পদক্ষেপের কারনে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে।
সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস