একজন অতিরিক্ত সচিবের ২৯ বই ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড়
সরকারি কর্মকর্তাদের 'জ্ঞানচর্চা ও পাঠাভ্যাস' বাড়ানোর জন্য বই কিনতে ৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৪৭৭টি বইয়ের তালিকা।
আর এই বিশাল তালিকায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নবীরুল ইসলামেরই ২৯টি বই স্থান পেয়েছে। অথচ তালিকায় ঠাঁই হয়নি পল্লিকবি জসীমউদ্দীন, শওকত আলী, আবু জাফর শামসুদ্দীন বা বদরুদ্দীন উমরের মতো গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের একটি বইও।
বইয়ের এই তালিকা তৈরির জন্য কোনো কমিটি গঠন, কিংবা বই ও পাঠাগারসংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকেও যুক্ত করা হয়নি।
জানা গেছে, মো. নবীরুল ইসলামের লেখা ২৯টি বইয়ের অধিকাংশই কবিতার বই। যার ২৪টিই প্রকাশিত হয়েছে মাত্র একটি প্রকাশনী থেকেই। তার বইগুলোর মধ্যে রয়েছে কেউ কারো জন্য দাঁড়িয়ে থাকে না, চলো একসাথে জলে রাখি পা, ইচ্ছেরা উৎসে ফিরে আসে, মুগ্ধ আলোয় দাঁড়িয়ে, অবাধ্য ইচ্ছের কম্পন, সেদিন সে বলেছিল খুব খোলামনে।
দৈনিক 'প্রথম আলো'তে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরপরই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে বই বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়েও।
একজন অতিরিক্ত সচিবেরই ২৯টি বই স্থান তালিকায় স্থান পাওয়ায় এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল, সমালোচনার বন্যা বয়ে গেছে।
এম এম শাহীন নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তার পোস্টে লিখেছেন: 'জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বই কেনার তালিকায় এক অতিরিক্ত সচিবের ২৯ বই! এই উঠতি আমলার জন্য রাষ্ট্রের নতুন পদক ঘোষণা করা হোক।'
ফারুক মঈনউদ্দীন একটি পোস্টে মন্তব্য করেছেন: 'অবশেষে ২৯টি বইয়ের তালিকা পাওয়া গেল। এই প্রতিভা এতদিন কোথায় লুকিয়েছিল?' তার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন নবীরুল ইসলামের কিছু বইয়ের ছবি।
আতিকা রহমান তার ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন তুলেছেন:
'১. যেখানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, সব কিছুতে ব্যয় কমানো হচ্ছে, দেশে হাজার রকমের সমস্যা তার মধ্যে সরকারী কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকা খরচ করে এই বি পড়া কর্মসূচি নেয়া কি খুব জরুরী?
'২. সরকারি আমলাদের এত বেতন ভাতা, গাড়ী বাড়ি সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। তাদের ২/৪ টা বই কেনার সামর্থ্য নাই? তারা বই কিনে পড়তে পারেনা?
'৩. মূল উদ্দেশ্য কি বই পড়ানো নাকি সরকারি টাকায় বই কিনে কোটি টাকা লুটপাট করা?
'৪. এই যে মহাকবি বিশিষ্ট অতিরিক্ত সচিবের এই কবিতার বইগুলো কর্মকতাদের কি জ্ঞান চর্চা বা উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে?'
আমিন আল রশীদ এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন: 'সরকারি কর্মকর্তাদের "জ্ঞানচর্চা ও পাঠাভ্যাস" বাড়ানোর জন্য ৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকার বই বরাদ্দ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নবীরুল ইসলাম বুলবুলের বই রয়েছে ২৯টি।
'বিশিষ্ট এই লেখক/কবির কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও কালজয়ী বইয়ের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
'আমি দুঃখিত এবং একইসঙ্গে লজ্জিত যে, দুই দশক গণমাধ্যমে কাজ করেও এবং লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থেকেও এই লেখককে আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হয়েছি এবং ওনার নাম এই প্রথম শুনলাম।
'ওনার বইগুলো ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা দরকার যাতে রবীন্দ্রনাথের পরে দ্বিতীয় বাঙালি কবি হিসেবে তিনি সাহিত্যে নোবেল পেতে পারেন। তার আগে কবিতায় বাংলা একাডেমি, একুশে এবং সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য তাকে স্বাধীনতা পদক দেয়ার জোর দাবি জানাই।'
মোরশেদ শফিউল হাসান এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন: 'এবার বোঝা গেল তো আমীর হামযারা এদেশে কীভাবে স্বাধীনতা পদক পান! অতিরিক্ত সচিবের কাব্যপ্রতিভার সঙ্গে সারা দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের পরিচিত হতে হবে বৈকি! তবে তিনি একাই নন, এরকম আরো অনেকেই লাইনে ছিলেন এবং আছেন। বছরের পর বছর ধরে সব সরকারের আমলেই নানা প্রকল্পের আওতায় মন্ত্রী, আমলা, সরকার দলীয় লোকজন, তাঁদের আত্মীয়স্বজন ও তল্পিবাহকরা কমবেশি এ কাজ করে আসছেন। বুদ্ধিজীবী ও প্রকাশকদেরও কেউ কেউ নিজস্ব স্বার্থ ও সুবিধার বিনিময়ে এসব অপকর্মে সহযোগী।'
উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরই একজন উপসচিবের পিতা আমির হামজাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়। যদিও তার ছিল না কোনো উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম। পরে এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা সৃষ্টি হলে আমির হামজার স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল করা হয়।