অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কমতে পারে: পরিকল্পনামন্ত্রী
চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ার আশঙ্কা থাকলেও অক্টোবরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমতে শুরু করবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) আয়োজিত এক সংলাপে মন্ত্রী বলেন, "চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।"
"দেশে ২০ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য মজুদ আছে। চালের দাম কমে আসছে, তার ওপর আমন চাল চলে আসবে, রবি শস্য (শীতকালীন ফসল যেমন-বোরো ধান, গম, আলু, মসুর, তৈলবীজ এবং শাকসবজি) চলে আসবে। সবমিলিয়ে আশা করি, অক্টোবর থেকে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে," যোগ করেন তিনি।
আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ না হলেও মন্ত্রী আভাস দিয়েছেন, এই দুই মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়বে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৭.৪৮ শতাংশ হয়। এর আগের মাস জুনে এই হার ছিল ৭.৫৬, যা গত ৯ বছরের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ।
খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে দরিদ্র এবং নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫.৬ শতাংশ।
পরিকল্পনা মন্ত্রীবলেন, "কোভিড ও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমাদের অর্থনীতির খাদে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেখানে থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে। আমাদের এখন স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি খাদ্য মজুদ রয়েছে, ২০ লাখ মেট্রিক টন। চালের দাম কমে আসছে। আমরা আইএমএফ থেকেও সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাবো।"
অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় আইএমএফের ঋণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, "সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়া আমাদের অধিকার। আমরা ঋণের আবেদন করার পর, প্রথম দিকেই তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আইএমএফেরও আমাদের প্রতি দায়-দায়িত্ব আছে। কোনো সদস্য বিপদে পড়লে তারা ঋণ, উপদেশ, সহযোগিতা দেবে। এখন আমাদের ঋণের প্রয়োজন বেশি।"
তিনি বলেন, "আমার একটা ভয় হয়, এখন যে সামাজিক স্থিতিশীলতা আছে সেটি যেন সামনেও বজায় থাকে। স্থিতিশীলতা না থাকলে কোনো কিছুই ঠিক থাকবে না।"
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশে দুর্নীতির মূল কারণ দারিদ্র্যের হার বর্তমানে প্রায় ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সরকার দারিদ্র্যের হার কমিয়ে দুর্নীতি দমনের চেষ্টা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রতিটি প্রকল্পের জন্য একজন করে ব্যবস্থাপক নিয়োগের পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রকল্প ব্যবস্থাপককে ভালোভাবে তদারকি করতে প্রকল্প এলাকাতেই থাকতে হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমরা প্রকল্প অনুমোদন করে দিয়ে থাকি। আর এটি দেখভাল করেন প্রকল্প পরিচালক। একজন ঠিকাদার প্রকল্পে ১০ ইটের পরিবর্তে ৮টি দিয়ে দিলে আমাদের সেটি ধরতে কষ্ট হয়।"
"আমরা স্বীকার করছি অনেক কিছু এখনও বাস্তবায়ন করতে পারি না। এখনও প্রকল্প পরিচালকরা প্রকল্প এলাকায় থাকেন না, এখনও একজন একাধিক প্রকল্পের পরিচালক। তবে এটিও ঠিক, যে পরিমাণে প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করছি তা ঐতিহাসিক। নিকটবর্তী সময়ে এত বেশি প্রকল্প কখনও নেওয়া হয়নি," যোগ করেন তিনি।
লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) কর্মসূচির অধীনে ভারত এখন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার।
এলওসি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, "আমার যা অভিজ্ঞতা এসব আমলানির্ভর। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক অতটা আমলানির্ভর নয়। আমাদের সচিবালয় বা দিল্লির সচিবালয়ে যারা থাকেন, তাদের ভারতের প্রধানমন্ত্রীতো বলবেনই, আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলবেন। স্বাভাবিকভাবে এগুলোর গতি কমে যায় বলে আমার ধারণা। তবে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে এসব কাজে গতি আসবে।"
ডিজেএফবি সভাপতি হামিদ-উজ-জামান মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী আরও জানান, সরকার পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে এবং এরজন্য অবকাঠামো নির্মাণ এখন সরকারের কাছে অগ্রাধিকারের বিষয়।