বাংলাদেশ হয়ে জ্বালানি পরিবহন বাড়াতে আগ্রহী ভারত
বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি রাজ্য - ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং মণিপুরে জ্বালানি পরিবহনের চুক্তি সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী ভারত সরকার।
এ বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ভারতীয় জ্বালানি খুচরা বিক্রেতারা যে চুক্তির অধীনে আসামের শিলচরের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি পথ এড়িয়ে চলতেন সে চুক্তিটি শেষ হবে ৩০ নভেম্বর। লাইভমিন্টের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য।
অন্যদিকে, আসামের ডিমা হাসাও জেলাকে মিজোরাম, মণিপুর এবং ত্রিপুরা এবং দেশের বাকি অংশের সাথে সংযোগকারী একমাত্র রেল সংযোগটি এই বছরের শুরুর দিকে ভারী বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে ভেঙে গেছে।
কর্মকর্তাদের একজন বলেন, "শিলচরে পরিবহনে কোনোপ্রকার বিঘ্ন ঘটলে আমরা ভারত-বাংলাদেশের পাশ দিয়ে যাব।"
"আমরা এলপিজি এবং জ্বালানি পরিবহনের জন্য এই চুক্তিটি দৃঢ় এবং প্রসারিত করার কাজ করছি। শিলচর এবং এর পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা থাকায় আমরা ওই পথের পরিবর্তে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে সরাসরি ত্রিপুরা সীমান্তে যেতে পারি," বলেন তিনি।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নয়াদিল্লি এ বিষয়ে ঢাকার সঙ্গে আলোচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই চুক্তির অধীনে রুট ব্যবহারের পরিবর্তে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে টোল ট্যাক্স দেয় জ্বালানি পরিবহনকারী ওএমসি। "যদি এই পথ দিয়ে জ্বালানি ত্রিপুরায় আসে, তাহলে আমরা মিজোরাম এবং মণিপুরে আরও নির্ভরযোগ্যভাবে সরবরাহ করতে পারব," যোগ করেন তিনি।
রাজ্য-চালিত ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল) প্রথমবারের মতো ২০১৬ সালে গুয়াহাটি থেকে ৮৪ হাজার লিটার কেরোসিন এবং ডিজেল বহনকারী সাতটি ট্যাঙ্কার বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরায় পাঠিয়েছিল।
সেসময় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আসামের সাথে ত্রিপুরার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এটি একটি স্বল্পমেয়াদী চুক্তির অধীনে এই পথে জ্বালানি পাঠায় তারা।
গত মাসে আইওসিএল একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যার মেয়াদ শেষ হবে নভেম্বরে। তবে তারা আবারও জ্বালানি পরিবহনের জন্য ট্রায়াল রান করবে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।
একটি প্রশ্নের উত্তরে আইওসিএল-এর একজন মুখপাত্র বলেন, "বাংলাদেশ হয়ে আসাম থেকে ত্রিপুরা/মিজোরামে পেট্রোলিয়াম পণ্যের চলাচলের জন্য সাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তির মেয়াদ ৩০ নভেম্বর শেষ হচ্ছে। আমরা এই চুক্তির মেয়াদ সম্প্রসারণের প্রস্তাব করেছি।"
"এই বিষয়ে আমরা বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস এবং ভারতের মিনিস্ট্রি অব পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস এবং ভারত সরকারের সাথে সমন্বয় করতে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অনুরোধ করব," মুখপাত্র বলেন।
মূলত বর্ষাকালে এবং বর্ষা-পরবর্তী সময়ে যখন ভারতের আন্তঃরাজ্য রুট প্লাবিত হয়ে যায়, সেসময় এই রুট ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু ভারতের সরকার এখন বাংলাদেশের রুটের ব্যবহার বাড়াতে চায় যাতে তাদের ট্রাক এবং ট্যাঙ্কার মেঘালয়ের ডাউকি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।
আসামের বন্যা মিজোরাম ও ত্রিপুরায় জ্বালানি সরবরাহ বরাবরই ব্যাহত করেছে। এই বছরের শুরুর দিকে বন্যার মধ্যে ত্রিপুরা এবং আসামের সাথে সংযোগকারী একটি রেললাইন এবং জাতীয় হাইওয়ে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে উভয় রাজ্যই জ্বালানি সংকটের মধ্যে পড়েছিল। এর ফলে দুই রাজ্যকেই মে মাসে পেট্রোলিয়াম পণ্যের রেশনিংয়ের আশ্রয় নিতে হয়।