রাজা চার্লসের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় প্রয়াত রানি ও পুত্র উইলিয়াম!
রাজা হওয়া এক অদ্ভুত কাজ! একজন রাজা, পদ পাওয়ার জন্য আবেদন করেন না বা এর জন্য তাকে কোনো নির্বাচন কিংবা সাক্ষাৎকারের মুখোমুখি হতে হয় না; জন্মসূত্রে বা বংশানুক্রমিকভাবেই তিনি এ পদ পেয়ে থাকেন। হতে পারে যিনি রাজা হচ্ছেন, তিনি হয়তো সেই পদের জন্য একেবারেই যোগ্য নন কিংবা হতে পারে, তিনি এই পদ চানই না; কিন্তু তাকে দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ বংশানুক্রমিকভাবে তিনিই এই দায়িত্বের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর রাজার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তার বড় ছেলে তৃতীয় চার্লস। নতুন রাজাকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন খবর বিশ্লেষণ করে বলা যায়, রাজা তৃতীয় চার্লসকে এই মুহূর্তে যে দায়িত্ব নিতে হলো, সেই দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে তাকে কখনোই খুব বেশি উৎসাহী বলে মনে হয়নি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, "আপনি রাজা হতে চলেছেন- এই উপলব্ধিটি হল এমন একটি ব্যাপার, যা আপনার ওপর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অদম্য এক অনুভূতি নিয়ে আসে।"
এ ব্যাপারে চার্লসের প্রথম স্ত্রী প্রিন্সেস ডায়ানাও একবার বলেছিলেন, রাজা হওয়াটা চার্লসের কাছে অনেকটা 'শ্বাসরুদ্ধকর' ব্যাপার বলে মনে হতে পারে।
এদিকে, চলতি বছরের মে মাসে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট-ভিত্তিক বাজার গবেষণা ও তথ্য বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান 'ইউগভ'-এর এক জরিপে দেখা যায়, প্রয়াত রানি এলিজাবেথ এবং প্রিন্স উইলিয়ামের তুলনায় বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের জনপ্রিয়তার অনেক কম। জরিপে দেখা যায় রানি এলিজাবেথের জনপ্রিয়তা ৮১ শতাংশ এবং উইলিয়ামের (বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের বড় ছেলে) জনপ্রিয়তা ৭৫ শতাংশ। অথচ সেখানে রাজা তৃতীয় চার্লসের জনপ্রিয়তা মাত্র ৫৪ শতাংশ। রাজা হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে জনসমর্থনের এই বিষয়টি হয়তো তার কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে, হয়তো একজন রাজার কাছ থেকে জনসাধারণ যা আশা করেন, তা যথাযথভাবে দিতে ব্যর্থ হতে পারেন বর্তমান রাজা।
এই মুহূর্তে ঠিক নতুন কী দায়িত্ব পালন করবেন রাজা তৃতীয় চার্লস, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। রাজকীয় দায়িত্বগুলো প্রায়শই অনিশ্চিত হয়ে থাকে। প্রয়াত রানিও তার সাত দশক এমন অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েই দায়িত্ব পালন করে গেছেন। কেনিয়ায় অবস্থানকালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে তাকে সিংহাসনে বসতে হয়েছিল।
এ খবর তার কাছে পৌঁছানোর পর তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, "আমি যখন বাড়ি ফিরবো তখন ঠিক কী ঘটবে?" সিংহাসনে বসা এমনই এক আদ্যম অনুভূতি!
'রাজা কখনই মরে না'- ব্রিটেনের এই পুরনো প্রবাদটির তাৎপর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন রাজার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই আরেকজন রাজা তার দায়িত্ব বুঝে নেন। প্রায়াত রাজার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগেই পরবর্তী নির্ধারিত রাজাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ কারণেই বলা হয়, 'একজন রাজা শ্বাস ত্যাগ করেন, আর অন্যজন শুরু করেন শ্বাস নেওয়া'।
- সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, ইউগভ ওয়েবসাইট