বাংলাদেশ থেকে আরও শ্রমিক নিয়োগ দিবে ফিজি
বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নিতে যায় ফিজি। কোভিড পরবর্তী উন্নয়ন কার্যক্রমে শ্রমিক ঘাটতিতে ভুগছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দ্বীপদেশ। মূলত নির্মাতখাতে দেশটির দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া-ফিজি বিজনেস কাউন্সিলের জয়েন্ট ফোরামের সাম্প্রতিক আলোচনায় ফিজির অ্যাটর্নি জেনারেল ও অর্থমন্ত্রী আইয়াজ সাঈদ-খাইয়ুম বলেন, 'আমাদের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনার জন্য আবেদন করছে কেননা এই খাতে দক্ষ জনবলের বড় ঘাটতি রয়েছে।'
ফিজিভিলেজের গত ৫ সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ইট এবং টাইলস খাতগুলোতে শ্রমিকের বিশাল ঘাটতি রয়েছে।
বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৩,৫০০ বাংলাদেশি ফিজির বিভিন্ন শহর ও গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন। তাদের বেশিরভাগই পোশাক কারখানা, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, নির্মাণ খাত, কৃষি ও অন্যান্য সেবা খাতে কাজ করেন।
বর্তমানে ফিজিতে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশন ফিজিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
'ফিজিতে শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-র কার্ড নিয়ে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বৈধভাবে এখানে আসছেন তারা,' অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) ও ফার্স্ট সেক্রেটারি মো. সালাহউদ্দিন টিবিএসকে বলেন।
'আমরা ফিজিতে প্রতি বছর ৪০,০০০ টাকা থেকে ৪৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতনের ১,০০০ কর্মী নিয়োগ দিতে পারব বলে আশা করি,' তিনি যোগ করেন।
বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ ছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসল) ফিজিতে এ/সি টেকনিশিয়ান, অর্থ নিয়ন্ত্রক এবং নির্মাণখাতের ফোরম্যানসহ বিভিন্ন পদে ছয়জন পুরুষ কর্মচারী নিয়োগে গত ৭ সেপ্টেম্বর একটি চাকরির বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
২০১৭ সালের বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফিজির জনসংখ্যা ০.৯ মিলিয়ন বা প্রায় ৯ লাখ এবং মাথাপিছু জিডিপি ৫,৫৮৯ ইউএস ডলার।
ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের মতে, পর্যটন খাত ফিজির আয়ের প্রধান উৎস, যা থেকে দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৩৮ শতাংশ আসে।
খাতটি কৃষি, নির্মাণ খাত, সাংস্কৃতিক খাতসহ আরও কিছু স্থানীয় সাপ্লাই চেইনে এক লাখ ১৮ হাজার কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি করেছে।
অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের মতে, বাংলাদেশিদের জন্য ফিজির টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প বিনিয়োগের একটি সম্ভাবনাময় খাত। অন্যান্য খাতের মধ্যে রয়েছে ওষুধ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।
২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ফিজিতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ২.৬৪ মিলিয়ন ডলার।
প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলো হল পোশাক ও নিটওয়্যার, ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য, কার্পেট ও অন্যান্য টেক্সটাইল ফ্লোর কভারিং, ফুটওয়্যার, সিরামিক পণ্য, লোহা ও ইস্পাতের সামগ্রী, খেলনা এবং গেমস ইত্যাদি।
বাংলাদেশিদের প্রশংসায় ফিজি সরকার
ফিজির এফবিসি নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অবদান রাখা বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রশংসা করেছে ফিজি সরকার।
সম্প্রতি বাংলাদেশ-ফিজি অ্যাসোসিয়েশন কমিটি প্রতিষ্ঠার সময়, ফিজির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইনিয়া বাতিকোতো সেরুইরাতু বাংলাদেশি কর্মীদের ফিজির নিয়োগকর্তাদের হাতে অভিবাসন নথি না দেওয়ার পরামর্শ দেন।।
কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিকের সাথে কথা বলার সময় তিনি জানতে পারেন যে তারা ফিজিতে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগদাতারা তাদের পাসপোর্ট নিয়ে যায়।
'যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে, দয়া করে কর্তৃপক্ষকে জানান কারণ আমরা চাই আপনি ফিজি'র জীবন উপভোগ করুন। আপনাদের অবদান অনেক,' বলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজি'র দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান ফিজিতে কর্মরত বাংলাদেশিদের যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ডকুমেন্টগুলো সঙ্গে রাখার আহ্বান জানান।