কারখানা বিক্রি করে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করল বেপজা
ডিইপিজেড এর আওতাধীন বন্ধ ঘোষিত তৈরি পোশাক কারখানা আভান্ট গার্ড ফ্যাশন লি. নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির ছাঁটাইকৃত ১০৪৯ জন শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার মোট ১৬ কোটি ১০ লক্ষ ৪১ হাজার ৬৮৪ টাকা বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) বেপজা কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম দফায় প্রতিষ্ঠানটির ১০ জন শ্রমিকের হাতে বকেয়া বেতনের চেক তুলে দেন ডিইপিজেড এর নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুস সোবহান।
বাকি ১০৩৯ জন শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের পাওনা সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
বেপজার শ্রম আইন ২০১৯ মোতাবেক প্রত্যেক শ্রমিকের প্রাপ্ত এককালীন পরিশোধ করা হবে।
আজ প্রথম দফায় ১০ জনের হাতে চেক তুলে দেওয়া হলেও বাকি ১০৩৯ জন শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় পাওনাদি তাদের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে, যা আগামীকাল থেকেই তাদের হিসাবে জমা হবে।
এসময় বকেয়া পাওনা ও সকল সুবিধাদিসহ ৩ লক্ষ ৪ হাজার ৯০৭ টাকা বকেয়া পাওনার চেক হাতে পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক নারী শ্রমিক টিবিএস'কে বলেন, 'কারখানাটির বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বেশ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। তার ওপর করোনাকালীন সময়ে খুব কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে। আজ একসাথে সকল পাওনার টাকার চেক হাতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। মাত্র ১৫ মাসের মধ্যেই এই টাকা হাতে পাবো তা ভাবতেও পারিনি"।
এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর একই মালিকানাধীন বন্ধ হয়ে যাওয়া অপর কারখানা শাইন ফ্যাশন লি. এর ২০৮৩ জন শ্রমিকের ৩০ কোটি ২ লক্ষ টাকা আমরা পরিশোধ করে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ।
২০২০ সালের ১৭ই জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়ান মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সাং ওয়েই মিনসহ প্রতিষ্ঠানটির সব বিদেশি কর্মী বেপজা কর্তৃপক্ষকে কিছু না জানিয়েই বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকেই বেপজার কোন পাওনা পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
পরবর্তীতে বেপজা কর্তৃপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালককে দেশে ফিরিয়ে আনলেও ২০২০ সালের মার্চে দেশব্যাপী করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর প্রথম দফায় কারখানাটি ৪৫ দিন ও দ্বিতীয় দফায় ৫ দিন লে-অফ ঘোষণা করে।
সে-সময় সাব কন্ট্রাক্ট এর মাধ্যমে কারখানাটিতে উৎপাদন চালু রাখা হলেও কাজ কমে যাওয়ায় বকেয়া পড়তে থাকে কারখানাটিতে কর্মরত ১০৪৯ জন শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা। কাজ না থাকায় ২০২০ সালে দীর্ঘদিন লে-অফে ছিল প্রতিষ্ঠানটি।
এসময় কারখানাটিতে কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া বেতন-ভাতার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬ কোটি ১০ লক্ষ ৪১ হাজার ৬৮৪ টাকা। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৯ মে বেপজা কর্তৃপক্ষ কারখানাটির ভূমি ইজারা চুক্তি বাতিল করে। এসময় প্রতিষ্ঠানটির কাছে বেপজার পাওনা ছিলো ৪ লক্ষ ৬৭ হাজার ১৭২ ডলার।
ডিইপিজেড এর নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুস সোবহান দ্য বিজনেস স্ট্যন্ডার্ড'কে বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের জন্য বেপজা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক চলতি বছরের ৭ এপ্রিল কারখানাটির স্থাপনা, মেশিনারিজ ও সকল মালামাল বিক্রির লক্ষে একটি উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
আব্দুস সোবহান বলেন, "আমরা সবসময় শ্রমিকদের পাওনার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। এরই ধারাবাহিকতায় এর আগে আমরা বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা এ-ওয়ান বিডি লি. এর শ্রমিকদের মোট পাওনা ১৮ কোটি ২২ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেছি"।
"গত রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) শাইন ফ্যাশন লি. এর ২০৮৩ জন শ্রমিকের ৩০ কোটি ২ লক্ষ টাকা আমরা পরিশোধ করা হয়েছে, আর আজ আমরা আভান্ট গার্ড ফ্যাশন লি এর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে", যোগ করেন তিনি।