কেন নেপাল যাননি, কারণ জানালেন সালাউদ্দিন
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সাফেরও সভাপতি। সেদিক থেকে মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে থাকাটা ছিল তার দায়িত্বের অংশ। বাফুফে সভাপতি হিসেবেও নেপাল যেতে পারতের তিনি, আর মাঠে বসে বাংলাদেশের মেয়েদের শিরোপা জয়ের মুহূর্ত দেখার প্রবল ইচ্ছাও ছিল তার। কিন্তু সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, মেয়েদের চাপে ফেলতে চাননি বলেই নেপাল যাননি তিনি।
প্রথমবারের মতো সাফের শিরোপাজয়ী দলটি বুধবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌছাঁবে। সাবিনা খাতুনের দলকে সংবর্ধনা জানাতে নানা আয়োজনের প্রস্তুতি সেরেছে বাফুফে। কিন্তু মেয়েদের বরণ করে নিতে বিমানবন্দরেও যাবেন না বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন। লাইম লাইট থেকে মেয়েদের আড়াল করতে চান না বলে এমন সিদ্ধান্ত তার।
সাফের এবারের আসরে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের মুকুট জিতেছেন কৃষ্ণা, সপ্না, সানজিদারা। ইতিহাস গড়ার মুহূর্তে সেখানে ছিলেন না সালাউদ্দিন। এমন বিশেষ মুহূর্তে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের না থাকাটা প্রশ্নের জন্ম দেয়। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সালাউদ্দিন।
বাফুফেতে এক সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন বলেন, 'একেকজন কাজ করে একেক স্টাইলে ও মানসিকতায়। আমি নেপালে যাওয়ার টিকেট তিনবার করে তিনবারই আবার বাতিল করেছি। ফাইনালে যাওয়া আমার কর্তব্য ছিল, সাফের সভাপতি হিসেবে আমি কাপটা দেব।'
'কিন্তু অনেক চিন্তা করে, নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে দেখলাম, আমি গেলে মেয়েগুলো বাড়তি চাপে পড়বে। কারণ তারা দারুণ ফুটবল খেলছে। যতোটা সুন্দর খেলা যায়, সবই আছে। আমি গেলে ভালো হতে পারে, খারাপও হতে পারে। আমি গেলে যদি তাদের বাড়তি চাপ হয়! তাই সবাইকে বললাম, বাফুফেতে বসে খেলা দেখব।' যোগ করেন সালাউদ্দিন।
সাফের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের চেয়ে দেশাত্ববোধ ও দেশের ফুটবলের প্রতি নিবেদন বেশি কাজ করেছে বলে দাবি সালাউদ্দিনের। তার ভাষায়, 'সাফ সভাপতি হিসেবে কাপ দেওয়াটা আমার কর্তব্য। আমি গর্ব নিয়ে কাপটা দেব, কিন্তু এটার চেয়ে আমার দেশকে আমি বেশি ভালোবাসি। আমি চেয়েছি দলটা যেন জেতে। কারণ, এই দেশে ফুটবলের একটা ব্রেক দরকার। আমরা খুব ভালো করছি না, ভালো করার চেষ্টা করছি। আমি তাই ওটাকে স্যাক্রিফাইস করেছি।'
দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতা দলটিকে বর্ণাঢ্য সংবর্ধানা দেওয়া হবে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও বাফুফে যৌথভাবে মেয়েদের বরণ করে নেওয়ার আয়োজন করছে। বিমানবন্দর থেকে ছাদ খোলা বাসে শোভাযাত্রা করে বাফুফে ভবনে নিয়ে যাওয়া হবে সাবিনাদের। ছাদ খোলা বাসে উদযাপন বাংলাদেশে এবারই প্রথম হতে যাচ্ছে। থাকবে আরও কিছু আয়োজন। কিন্তু বিমানবন্দরে না গিয়ে বাফুফে ভবনে দলকে অভ্যর্থনা জানাবেন বাফুফে সভাপতি।
বিমানবন্দরে না যাওয়ার কারণ হিসেবে সালাউদ্দিন বলেন, 'আমি মেয়েদের এখানে (বাফুফে ভবনে) অভ্যর্থনা জানাব। এরপর ওদের সঙ্গে বসে ভালো-মন্দ আলাপ করব। এয়ারপোর্টে যাওয়া আমার জন্য সুবিধা। আমার বাসা থেকে ১৫-২০ মিনিট। কিন্তু আমি এখানে থাকব। কালকে বিমাবন্দরে যাবে বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির একটি দল, ক্রীড়ামন্ত্রী ও সচিব, স্পন্সরদের অনেকে। আমি এখানে দলকে রিসিভ করব।'
'কেন আমি ওখানে যাব না, কারণটা বলি। আমার খুব ইচ্ছা যাওয়ার, চ্যাম্পিয়ন কাপ নিয়ে এসেছে প্রথমবারের মতো। কিন্তু আমি ওখানে যদি যাই, আপনারা (সংবাদমাধ্যম) আমাকে অনেক প্রশ্ন করবেন, অনেক কিছু করবেন। তাতে হবে কী, মেয়েদের লাইমলাইট ভাগ হয়ে যাবে। কিন্তু কাল মেয়েদের দিন। এটা সভাপতির দিন নয়, সাধারণ সম্পাদকের দিন নয়, সহ-সভাপতি, সদস্যদের দিন নয়।' বলেন তিনি।
সব চোখ যেন মেয়েদের ওপর থাকে, এ কারণেই বিমানবন্দরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাফুফে সভাপতি, 'আমি চাই মেয়েরা যেন এক্সক্লুসিভ আপনাদের আদর পায়, মিডিয়া কভারেজ পায়। কারণ, আমরা জিতিনি, আমরা পেছন থেকে কাজ করেছি। কাল লাইমলাইট যেন মেয়েরা পায়। ইংরেজিতে একটা কথা বলে, 'ডোন্ট স্টিল হার থান্ডার।' কাল ওদের ওটাই, আমরা যেন ভাগ না নিই।'