১০ ঘন্টার ব্যবধানে ‘করোনার উপসর্গ’ নিয়ে পটুয়াখালীতে দু’জনের মৃত্যু
পটুয়াখালীতে ১০ ঘন্টার ব্যবধানে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
এরমধ্যে একজনের বয়স ৬৫ যিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক এবং অন্যজনের বয়স ৪০ যিনি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা।
৬৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি শহরের নতুন জেলাখানা সংলগ্ন মেয়ের ভাড়া বাসায় শনিবার রাতে মৃত্যুবরণ করেন। আর ৪০ বছর বয়সী ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোববার সকাল আটটায়।
স্থানীয় প্রশাসন ওই দু'জনের শহর ও শহরতলীর বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে। এছাড়া, মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হতে উভয়ের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে আজ।
৬৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বিষয়ে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ওই ব্যক্তি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুর পর তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পরে রাত ১০টার দিকে জানাজার পর আইইডিসিআরে নির্দেশনা মেনে তার লাশ দাফন করা হয়। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ওই বাড়িটি জেলা প্রশাসনের নির্দেশে লকডাউন করা হয়।
বরিশাল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি (৪০) সম্পর্কে সিভিল সার্জন বলেন, ওই ব্যক্তি অনেকদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। পটুয়াখালী সদর উপজেলার শ্বশুরবাড়ি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সর্দি জ্বর কাশি নিয়ে শনিবার তিনি পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালে তাকে বরিশাল মেডিকেলে রেফার করা হয়। বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গেলে তাকে সাথে সাথে করোনা ইউনিটে তাকে ভর্তি করা হয়। রবিবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
সিভিল সার্জন আরও জানান, আইইডিসিআরের নির্দেশনা অনুযায়ি গলাচিপার গ্রামের বাড়িতে ওই ব্যক্তির দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দাফনের পরে বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে। দাফন ও জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে।
বরিশাল মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক ডা. মোঃ বাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ওই ব্যক্তি শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও সর্দিকাশি নিয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে তার মৃত্যু করোনায় কিনা সেটা বলা যাচ্ছেনা। নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী না থাকার কারণে পটুয়াখালী সদর হাসপাতালসহ ৬ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র এখন ডাক্তার ও রোগী শুন্য। ডাক্তারা বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যক্তিগত চেম্বার করাও। গত এক সপ্তাহ ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে।
পটুয়াখালী সদর হাসপাতাল সুপার ডাঃ আব্দুল মতিন জানান, করোনা আতঙ্কের কারণে রোগীরা এখন বাড়ীতে বসেই সেবা নিচ্ছেন। ডাক্তার ও নার্সদের অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ডাক্তার জানান, পটুয়াখালীতে এ পর্যন্ত মাত্র ৩'শ পিপিই দেয়া হয়েছে। যা করোনা রোগী সনাক্ত হলে সে ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য। পটুয়াখালী সদর হাসপাতাল ও ৬ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, একটি টিবি ক্লিনিক এবং একটি মা ও শিশু কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক রাখতে হলে প্রতি দিন কম করে হলেও ৬'শ পিপিই দরকার। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদেরও পরিবার আছে। সে ক্ষেত্রে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা বাসায় অবস্থান করবেন।
হাসপাতালের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক ডায়াগোনোস্টিক সেন্টার গুলোও এখন রোগীশূন্য।