করোনা ভাইরাস: কোথাও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু, কোথাও মৃত্যু নিয়ে গুজব
মহামারি করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে দিনাজপুর ও কুষ্টিয়ায় দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পিতা-পুত্র মারা গেলে করোনায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, করোনার কোনো উপসর্গ নিয়েই তাদের মৃত্যু হয়নি।
তবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরার সোমবারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৭২ ঘন্টায় দেশে করোনা ভাইরাসের কারণে কারও মৃত্যু হয়নি; আক্রান্ত হয়েছেন একজন।
এরমধ্যেও করোনার ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেই প্রতিদিনই মৃত্যুর সংবাদ আসছে। জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
করোনার উপসর্গ নিয়ে দিনাজপুরে একজনের মৃত্যু, ৫০ পরিবার কোয়ারেন্টিনে
দিনাজপুরের বিরামপুরে জ্বর-সর্দি ও করোনার উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি কুমিল্লায় এক প্রবাসীর বাড়িতে কাজ করতেন। ওই ঘটনার পর নিহত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেছে আইইডিসিআর।
একইসঙ্গে ওই এলাকার ৫০টি পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। পাশাপাশি গত কয়েকদিনে নিহত ব্যক্তি যাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তারও তালিকা প্রস্তুত করছে প্রশাসন। তবে তার পরিবারের বাকী সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে কি না এ ব্যাপারে কিছুই জানাতে পারেনি প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন- সংগৃহীত নমুনায় পজেটিভ রিপোর্ট আসলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এছাড়াও পরিবার কিংবা এলাকার কারও মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কিনা এজন্য স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি তদারকি করছেন।
সোমবার ভোররাতে বিরামপুর উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নের ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ওই ব্যক্তি কুমিল্লার লাকসামের এক সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে কৃষি জমি দেখাশোনার কাজ করতেন। কিছুদিন আগে সৌদি প্রবাসী বাড়িতে ফিরে আসেন। সেখানে কাজ করার সময়ই নিহত ব্যক্তির সর্দি-জ্বর দেখা দেয়। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেয়েও জ্বর না সারায় গত ২২ মার্চ তিনি নিজ বাড়িতে ফেরেন। এরপর তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না গিয়ে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলেও তার জ্বর-সর্দি সারেনি। রোববার থেকে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। সোমবার ভোর রাতে নিজ বাড়িতেই মারা যান তিনি।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. আবদুল কুদ্দুছ বলেন, সকালে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে মৃত্যুর বিষয়টি জানার পরপরই আইইডিসিআর'কে অবহিত করা হয়েছে। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা- নিরীক্ষা করা হবে। তার পরিবারের সদস্যদেরকে কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, নিহত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করার বিষয়টি দেখবে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে ইতিমধ্যেই নিহতের পরিবারের আশেপাশের ৫০টি পরিবারকে কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এখন পর্যন্ত সে এলাকার কারও সঙ্গে মিশেছে কি না এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়ায় শ্বাসকষ্টে ঝালমুড়ি বিক্রেতার মৃত্যু
কুষ্টিয়ায় সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে এক ঝাল-মুড়ি বিক্রেতার মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ওই ব্যক্তিকে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তিনদিনের সর্দি,কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই ব্যক্তিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়। তার দেহে করানো ভাইরাসের জীবাণু আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া তার পরিবারের সদস্যদেও হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
সিভিল সার্জন আরও জানান, আইইডিসিআসের নিয়মকানুন মেনে ওই ব্যক্তির লাশ দাফন সম্পন্ন করা হবে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মাঝবয়সী এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে তার পরিবারের সদস্যরা। তবে জরুরি বিভাগে নিয়ে আগেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসকদের জানিয়েছে ওই ব্যক্তি (৪০) পেশায় ঝালমুড়ি বিক্রেতা। শহরের চৌড়হাস সাহাপাড়া এলাকায় পরিবারে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। গত শুক্রবার তার সর্দি দেখা দেয়। এরপর কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। আজ সকালে শ্বাসকষ্ট বেশি হলে একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে তারা হাসপাতালে নিয়ে আসে।
ওই মৃত ব্যক্তির স্ত্রী জানান, বাসা থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুই থেকে তিনবার রক্ত বমিও করেছেন তিনি।
তবে ওই মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাদের পরিবারে কোনো বিদেশি নেই। তারপরেও তার শরীরে করোনা ভাইরাস আছে কি-না সেটা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরপর লাশ সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তবে এই ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কয়েকজনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন জানান, ওই ব্যক্তির বাড়িতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নমুনার প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির বাড়িসহ তার পরিবারের সদস্যরা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।
কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পিতা-পুত্রের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পিতা-পুত্রের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের সীতাহরণ গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন ওই গ্রামের দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার (৯২) ও তার ছেলে ফজল হক (৪৫)।
পিতা-পুত্রের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
পরবর্তীতে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি মেডিকেল টিম পাঠানো হয় ওই বাড়িতে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তাজুল ইসলাম জানান, বৃদ্ধ সাত্তার দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানান রোগে ভুগছিলেন। সোমবার সকাল ৭টার দিকে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বাবার মৃত্যুর খবরে ছেলে ফজল হক হৃদরোগে আক্রান্ত হন। বাবার মৃত্যুর এক ঘণ্টা পর সকাল ৮টার দিকে তিনিও মারা যান।
সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নোমান মিয়া জানান, খবর পেয়ে ওই গ্রামে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়। ওই পরিবারে কারও জ্বর ও সর্দি- কাশি ছিল না। দুইজনের মৃত্যুই স্বাভাবিকভাবে হয়েছে।