এক বছরের টেকসই অর্থায়ন খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে ৮৭%
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে সাস্টেইনেবল ফিন্যান্স বা টেকসই অর্থায়ন খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। যা গত ২০২১ সালের জুনে ছিল ১৬ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে অর্থায়নের পরিমাণ বেড়েছে ৮৭.২০ শতাংশ।
জুনের শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এই খাতে অর্থায়ন দেশের মোট ঋণ বিতরণের ১২ শতাংশ বেড়েছে। তবে গত বছরের জুনে এ খাতে অর্থায়ন ছিল মোট ঋণের মাত্র ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইস্পাত, কাগজ, সিমেন্ট, রাসায়নিক, সার, বিদ্যুৎ, টেক্সটাইল ইত্যাদির মতো শিল্পে অর্থায়নের অন্যতম প্রধান উৎস হলো ব্যাংকিং খাত। আর এ ধরনের শিল্প থেকেই সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণ হয়। তাই পরিবেশগতভাবে টেকসই এবং সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকিং খাত অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, দেশের অর্থনীতে টেকসইয়তা বা স্থায়ীত্ব আনতে হলে সাস্টেইনেবল ফিন্যান্স ও গ্রিন ফাইন্যান্সিং খাতে বিনিয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পরিবেশগত ঝুঁকি, সামাজিক ও কর্পোরেট গভর্নেস ঝুঁকি ইত্যাদি কাটিয়ে উঠতে হলে এ খাতে বিনিয়োগ করতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, "যে ব্যাংকগুলো নীতিমালা মেনে এই খাতে অর্থায়ন করবে, তারাই ভবিষ্যতে ভালো করবে। এছাড়া, এসব খাতে বিনিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক কিছু মানদণ্ড রয়েছে, সেগুলো অনুসরণ করলে আরও অগ্রগতি আসবে।"
এদিকে, দেশে গ্রিন ফাইন্যান্সিং বা সবুজ অর্থায়ন আরও বিস্তৃত করতে ২০১৬ সাল থেকে দেশের মোট টার্ম লোনের (মেয়াদী ঋণ) ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেখা যাচ্ছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সবুজ অর্থায়নে চলতি বছরের জুন শেষে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছেছে।
চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সবুজ অর্থায়নে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬২১ কোটি টাকা, যা দেশের মোট টার্ম লোনের ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। যদিও গত বছর একই সময়ে ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা, যা ছিল মোট টার্ম লোনের ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উক্ত প্রান্তিকে ১৪টি ব্যাংক মোট টার্ম লোন বিতরণের ক্ষেত্রে সবুজ অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা (৫ শতাংশ) অতিক্রম করেছে। এছাড়া, ৭টি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানও (এনবিএফআই) তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে।
একইসঙ্গে, এপ্রিল থেকে জুন, ২০২২ ত্রৈমাসিকে ১১টি ব্যাংক তাদের মোট ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে টেকসই অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রার (২০ শতাংশ) বিপরীতে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই উদ্যোগের ফলাফল হিসেবে আশা করা যায়, ব্যাংক এবং এনবিএফআইগুলো ধীরে ধীরে টেকসই অর্থায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।"
এদিকে, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) গতমাসে টেকসই অর্থায়নে সেরা পারফরম্যান্সের জন্য ১০টি ব্যাংক এবং ৫টি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দিয়েছে।
ব্যাংক ক্যাটাগরিতে এই সম্মাননা পেয়েছে- ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, এনআরবি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং সিটি ব্যাংক। অন্যদিকে, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে- অগ্রণী এসএমই ফিন্যান্সিং, বাংলাদেশ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিন্যান্স ফান্ড, আইডিএলসি ফিন্যান্স এবং আইপিডিসি।