চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতাল: করোনার ভয়াল সময়ের সেই ‘সাহসীরা’ একদিনের নোটিশেই চাকরিচ্যুত!
করোনা মহামারি চলাকালীন ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালে চালু করা করোনা ইউনিটে কর্মরতদেরকে গতকাল (২৭ সেপ্টেম্বর) একদিনের নোটিশে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করছেন চাকরিচ্যুতরা।
'যখন স্ত্রী স্বামী ছেড়ে গিয়েছিলো, সন্তান বাবার মরদেহ ফেলে ঘরের কোনে আশ্রয় নিয়েছিলো। ঠিক সেই সময়ে নিশ্চিত মৃত্যুকে পায়ে মাড়িয়ে আমরা দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলাম। পরিবার-পরিজন ফেলে দিনের পর দিন হাসপাতালে কাটিয়েছি। আজ সেই আমাদের একদিনের নোটিশে চাবুরিচ্যুত করা হলো! মানবতার জন্য যে জীবন উৎসর্গ করেছিলাম, আজ আমাদেরই অমানবিক ভাবে ছুঁড়ে ফেলা হলো…'
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালের করোনা ইউনিট থেকে চাকরি হারানো হামিদা আক্তার মৌসুমি।
২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারি করোনা প্রতিরোধে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তাদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালের চালু করা হয় করোনা ইউনিট। সে বছরের ২৪ জুন চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ডবয়, আয়াসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হয় ১২০ জনকে।
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এক চিঠিতে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। মানববন্ধনে শতাধিক ভুক্তভোগী অংশ নেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, "করোনা মহামারির সময় নিজ জীবনকে বিপন্ন করে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারিদের সুরক্ষা দিয়েছি। চাকরি দেওয়ার সময় আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল পরিস্থিতির উন্নতি হলে বন্দরের ভেতরেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এখনও হাসপাতালে করোনা রোগীরা আসছেন। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের জোর করে বাড়ি পাঠিয়ে আমাদের চাকুরিচ্যুত করেছে।"
চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আয়া রুনা মল্লিক বলেন, "করোনার ভয়াবহ সময়ে আমরা যাদের সেবা দিতাম, তারাই আমাদের আজ চাকুরিচ্যুত করেছে। কোভিড ওয়ার্ডে ডিউটি করার সময় টানা আট ঘণ্টা আমরা চাইলেও কোনো বিরতি নিতে পারিনি। করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা নিজের পরিবারকে বিপদে ফেলেছি, আমাদের অনেকের স্বজন মারা গেছেন। সেই আত্মত্যাগের এই প্রতিদান দিলো বন্দর কর্তৃপক্ষ?"
তিনি আরো জানান, করোনা পরিস্থিতি উন্নতির পর বন্দরের কর্মকর্তারা হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়-নার্সদের দিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে আসছিল।
হেলাল উদ্দিন বলেন, "চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক পদেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে নতুন করে। খালি আছে প্রায় এক হাজার পদ। আমরা চাই হাসপাতালসহ বন্দরের বিভিন্ন সেকশনের শূন্যপদগুলোতে করোনা ইউনিটের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের চাকরিতে পূনর্ববহাল করা হোক। এটা যদি করা না হয়, তবে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান টিবিএসকে বলেন, "যাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তারা আমাদের অস্থায়ী কর্মচারি ছিল।" সুবিধা পেতে চাইলে তাদেরকে কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে বলে যোগ করেন তিনি।