করোনাভাইরাসে নারীর মৃত্যু: ১০০ পরিবার লকডাউন
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক নারীর মৃত্যুর পর তার সংস্পর্শে আসা সদর হাসপাতালের এক ওয়ার্ডবয়কে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ওই নারীর চিকিৎসা প্রদানকারী এক ডাক্তারসহ আরও ১০ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
লকডাউনে থাকা ওই পরিবারের সদস্যদের ওপর পুলিশ ও জেলা প্রশাসন কঠোর নজরদারি রেখেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এলাকাটি নিয়মিত পাহারায় রেখেছেন।
নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, করোনাভাইরাসে মৃত্যু হওয়া নারীর বাড়িসহ আশপাশের ১০০ পরিবারকে ১৪ দিনের লকডাউনে রাখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পরিবারগুলোর সকল সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। তবে ওই নারী কিভাবে এবং কার মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সেটি এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনায় পুরো নারায়ণগঞ্জ এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে সিভিল সার্জন আরও জানান, মৃতের পরিবারের সদস্যসহ তাকে চিকিৎসা প্রদানকারী সদর জেনারেল হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তিনজনসহ মোট ১০ জনকে আইসোলেশনে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তাদের মধ্যে হাসপাতালের সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক, নার্স, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, প্রাইভেট ল্যাবের টেকনিশিয়ান, এক্সরে টেকনিশিয়ান, আয়া ও চেম্বার অ্যাসিস্ট্যান্ট রয়েছেন। পাশাপাশি আইইডিসিআর-এর মাধ্যমে আজ-কালের মধ্যেই লকডাউনের আওতায় রাখা ১০০ পরিবারের সকল সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। তাদের কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, লকডাউন এলাকাটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। লকডাউনে রাখা পরিবারগুলোর খাবারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী জেলা প্রশাসন থেকে সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি তিনি সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানান।
এদিকে শুক্রবার সকালে লকডাউন এলাকাসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার এবং জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলমসহ প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা। এলাকা জীবাণুমুক্ত করতে সকাল থেকেই জীবাণুনাশক স্প্রে করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন।
এ ব্যাপারে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলবাগ এলাকায় আক্রান্ত হয়ে যে নারীর মৃত্যু হয়েছে, ওই এলাকার ১০০ পরিবারকে লক ডাউনে রাখা হয়েছে। নিহত নারী জানাজায় লাশ দাফনসহ যেসব আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী ওই বাড়িতে এসেছিলেন, তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি, সেটি নিয়ে কাজ করছি। আক্রান্তের সংখ্যা যেন না বাড়ে, সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই প্রশাসন কাজ করছে।
গত ২৯ মার্চ বন্দর উপজেলার রসুলবাগ এলাকায় হৃদরোগ ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া ওই নারীকে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকের নিউমোনিয়া সন্দেহ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৩০ মার্চ ওই নারীকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই সেখানে তার মৃত্যু হয়। পরে আইইডিসিআরকে খবর দিলে তারা রোগীর মৃতদেহ হতে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। ২ এপ্রিল রিপোর্ট আসে, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।