বিটিআরসির সিদ্ধান্ত ‘অস্বাভাবিক’ আর ‘নজিরবিহীন’ : গ্রামীণফোন সিইও
তাগাদা দেওয়ার পরও নিরীক্ষা আপত্তির ‘পাওনা’ টাকা পরিশোধ না করায় বিআরটিসি কর্তৃক গ্রামীণফোন ও রবির ব্যান্ডইউথ কমিয়ে দেয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে একে ‘অস্বাভাবিক’ এবং ‘নজিরবিহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল প্যাট্রিক ফোলে।
রোববার (৭ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তিনি বলেন, বিআরটিসি এবং গ্রামীণফোন একসাথে একটি বৈঠকে বসেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই), গ্রামীণফোনের ৩০ ভাগ এবং রবির ১৫ ভাগ ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দিতে দেশের সবগুলো আইআইজিকে (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) নির্দেশনা দিয়েছিলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের বিরুদ্ধে এই প্রথমবারের মতো কোন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিটিআরসি।
যদিও এই শিল্প-সংশ্লিষ্ট লোকজন মনে করছেন এই নির্দেশনা কার্যকর হলে মোবাইল ব্যবহারকারীরা বড় ধরনের সমস্যায় পড়বেন, বিশেষ করে কল করা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এর ফলে কল ড্রপের সংখ্যা বাড়বে ও ইন্টারনেটের গতি কমে যাবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মোঃ জহিরুল হক বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) কে বলেছিলেন, “সাধারণ জনগণের টাকার কথা চিন্তা করেই গ্রামীনফোন ও রবির ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি আমরা।”
তিনি বলেছেন, এর ফলে মোবাইল ব্যবহারকারীরা সমস্যার মুখে পড়বেন তবে তা অসহনীয় হবে না। অপারেটরগুলো বকেয়া পরিশোধ করার সঙ্গে সঙ্গে এই নিয়ন্ত্রণ উঠিয়ে নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে ১২ হাজার ৫৭৯ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা বকেয়া দাবি করে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন এবং ৮৬৭ দশমিক ২৩ কোটির জন্য রবিকে নোটিশ পাঠায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। গত এপ্রিল মাসে অপারেটর দুটিকে চিঠি পাঠানো হয়। টাকা পরিশোধের জন্য অপারেটর দুটিকে দুই সপ্তাহের সময় দেওয়া হয়। বিটিআরসি থেকে তখন বলা হয়, গ্রামীণফোন ও রবির সর্বশেষ অডিটের পরে এই ডিমান্ড লেটার পাঠানো হয়েছে।
তবে রবির দাবি, হিসাব নিরীক্ষকরা যেসব কারণে বকেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন, তা এখনও বিচারাধীন রয়েছে।
রবির করপোরেট ও রেগুলেটরি চিফ শাহেদ আলম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেয়া খুবই দুঃখজনক হবে কেননা এতে সমস্যায় পড়বেন গ্রাহকরা।
তিনি বলেছেন, “ বিটিআরসির এমন কড়া পদক্ষেপে আমরা হতাশ হয়েছি। ত্রুটিপূর্ণ নীরিক্ষার বিরুদ্ধে আমাদের অনাস্থার কথা আমরা বিটিআরসিকে ইতোমধ্যে জানিয়েছি।”
তবে সীমিত ব্যান্ডউইথ দিয়েও সন্তোষজনক সার্ভিস দিতে পারবে রবি বলে জানান শাহেদ।
গ্রামীনফোনের জনসংযোগ বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক মোঃ হাসান বলেছেন, “এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের লাখ লাখ ডাটা ব্যবহারকারীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই পদক্ষেপের নৈতিকতার প্রশ্নে আমরা অবাক হচ্ছি।”
এই সিদ্ধান্তের আগে ফোন অপারেটর মার্কেটে শীর্ষ গ্রামীনফোন ২০৯.৯৩ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করতো। এখন গ্রামীনফোন ব্যবহার করবে ১৪৬.৯৫ জিবিপিএস।
এবং আগে রবির বরাদ্দ ছিল ১৫০.৬৭ জিবিপিএস আর এখন পাবে ১২৮ জিবিপিএস।
বিটিআরসির হিসেব অনুযায়ী গত মে মাস পর্যন্ত গ্রামীনফোনের ৭.৪৮ কোটি এবং রবির ৪.৭৭ কোটি কার্যকর গ্রাহক বা সংযোগ আছে। এবং এই গ্রাহকদের অর্ধেকই ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন।