কেন অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ জরুরী?
আমরা এমন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, যে সময় আমাদেরকে কোভিড-১৯ এর মতো অতিমারীর পাশাপাশি অসংক্রামক রোগের বিরুদ্ধেও মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রতি ২ সেকেন্ডে একজন করে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, শ্বাসরোগের মতো এসব অসংক্রামক রোগে প্রতিবছর দেড় কোটি মানুষ মারা যান, যাদের বয়স ৩০ থেকে ৬৯ এর মধ্যে। এই অকালমৃত্যুর ৮৫ শতাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঘটে। বাংলাদেশও তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর মোট মৃত্যুর ৬৭% সংঘটিত হয় অসংক্রামক রোগের কারণে। এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের যথেচ্ছ ব্যবহার। বাংলাদেশে বছরে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫ লাখ ৭২ হাজার; যার মধ্যে ১ লাখ ৬২ হাজার মৃত্যু হয় সরাসরি তামাকজনিত রোগের কারণে।
অসংক্রামক রোগ কেবল শারীরিক দিক থেকেই নয়, পুরো একটি পরিবারের অর্থনৈতিক ভিতকে নাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। অর্থনৈতিকভাবে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছি বটে, কিন্তু এখনও দেশের আপামর মানুষের আর্থিক সঙ্গতি অসংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত নয়। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এসব রোগব্যাধি প্রতিরোধ করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ জরুরী। আর তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যুগোপযোগী সংশোধন ও তার বাস্তবায়ন।
বাংলাদেশে তামাকের বর্তমান চিত্র ও স্বাস্থ্যগত হুমকি
'নন কমিউনিকেবল ডিজিজেস রিস্ক ফ্যাক্টর সার্ভে: বাংলাদেশ ২০১০' এর তথ্য অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৯৮.৭% মানুষ অন্তত একটি অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এছাড়া, অন্তত দুটি অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন ৭৭.৪% মানুষ। এসব রোগের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করে তামাক ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার।
বিশ্বব্যাপী অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত মোট মৃত্যুর ১৪% তামাক ব্যবহারের কারণে হয়ে থাকে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে ভুগছেন, যার মধ্যে ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে অসুস্থ। দেশের ৩৫.৩ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লক্ষ) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে (১৫ বছর ও তদুর্ধ্ব)। কখনই তামাক ব্যবহার করেনি এমন ব্যক্তিদের তুলনায় তামাক ব্যবহারকারীদের তামাকজনিত রোগ যেমন- হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি, ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি (৫৭%) এবং অন্যান্য ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি আরো বেশি (১০৯%)।
এ তো গেল মোটাদাগে পরিসংখ্যান। এর বাইরে রয়েছে ভৌগলিক ও সামাজিক বিষয়গুলোও। তামাক ব্যবহারের ব্যপকতার দিক থেকে প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশ আছে বেশ উপরের দিকেই। আবার নারী-পুরুষের বিবেচনায় তামাকে আসক্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। গ্লোবাল টোবাকো এটলাস, ২০১৭ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশের ২৫.২% নারী কোন না কোন তামাকপণ্য ব্যবহার করেন; যেখানে ভারতে তা ১৪.২%, থাইল্যান্ডে ৭.৬%, পাকিস্তানে ৫.৪% এবং চীনে ২.১%।
এরসঙ্গে রয়েছে পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাব। ভৌগলিকভাবেই এ দেশের নারীদের শতকরা ৫০ শতাংশের উপরে রক্তস্বল্পতায় ভোগেন। তার ওপর তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আসক্ততা জরায়ু ক্যান্সার, গর্ভধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো নতুন নতুন সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কম ওজন, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী বা খর্ব শিশু জন্ম হওয়ার যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলোতেও প্রভাব রয়েছে তামাকের।
তাছাড়া, শহুরে শিশুদের মধ্যে কম বয়সে ধূমপানের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সাথে রয়েছে পরোক্ষ ধূমপানের প্রকোপ। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত নিকোটিন অ্যান্ড টোব্যাকো রিসার্চ সাময়িকীতে 'বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার' শীর্ষক এক জরিপে উঠে এসেছে, ঢাকার ৯৫ শতাংশ শিশু কোনো না কোনোভাবে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। বছরে ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু (১৫ বছরের নিচে) পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সৃষ্ট রোগে ভুগছে।
তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগসমূহ
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকার বরাবরই ওয়াকিবহাল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এছাড়াও সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে মানুষের জীবনের অধিকার রক্ষণ করা হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)- এ স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ বাংলাদেশ। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে সর্বপ্রথম তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের পর ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে যুগোপযোগী করে বর্তমান সরকার। এরপর ২০১৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধিমালা পাস করা হয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আইনে মিলেছে নানান অসঙ্গতি।
২০১৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করা হবে। শুরু থেকে নানান বেসরকারি সংস্থা তামাকের বিরুদ্ধে নিয়মিত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলেও, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর সরকারি সংস্থাগুলোও নড়েচড়ে বসে। তৈরি হয় জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি), যারা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারি কাজ করে চলেছে।
উত্তরণের উপায় ও তামাক আইন সংশোধনের গুরুত্ব
অসংক্রামক রোগের জন্য যেসব বিষয়গুলো দায়ী, তার মধ্যে অন্যতম হলো ধূমপান ও অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার, অস্বাস্থ্যকর বা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, চিনি ও ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাদ্য গ্রহণ, কায়িক শ্রমের অভাব, বায়ুদূষণ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিক, শ্বাসরোগ ইত্যাদি। এগুলো নিয়ন্ত্রণের কিছু বিষয় আমাদের হাতে আছে, কিছু বিষয় নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে। আমরা নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস কিংবা কায়িক পরিশ্রম করতে পারলেও, ব্যক্তিগতভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। এগুলোর জন্য নীতিমালা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের এসব ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগগুলো প্রতিরোধের দিকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আমাদের দেশে স্বাস্থ্য খাতের পেছনে যে বরাদ্দ থাকে, তার বেশির ভাগই চিকিৎসাসেবার পেছনে খরচ করা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যকর জীবনাচরণের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিসহ যথাযথ আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন এবং প্রয়োগের পেছনে নজর কম দেওয়া হয়।
এসব জায়গা থেকেই তামাক নির্মূলের গুরুত্ব উঠে এসেছে। সফল হলে আমরা কয়েকটা বিষয়ে এগিয়ে থাকতে পারবো। একদিকে যেমন অসংক্রামক রোগব্যাধি প্রতিরোধ সম্ভব হবে, তেমনই আর্থিক দিক থেকেও লাভবান হওয়া সম্ভব হবে। তামাকের করাল গ্রাস থেকে দেশকে মুক্ত করতে তাই বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি আরও শক্তিশালিকরণের জোর দাবি উঠছে। বিদ্যমান আইনটি সংশোধিত হলেও সময়ের সাথে সাথে আইনে একাধিক অসংগতি দেখা দিয়েছে, যে কারণে নতুন করে সংশোধন জরুরী।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো, ১. ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্তসহ সকল পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও গণপরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা; ২. তামাকজাত পণ্য বিক্রয়স্থলে দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; ৩. তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা; ৪. খুচরা সিগারেট বিক্রি বন্ধ করা; ৫. সি-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস (এইচটিপি)-এর মতো ক্রমশ বিস্তার লাভ করা পণ্যসমূহের আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ৬. সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা।
আমরা বলছি, তামাকদ্রব্য বিক্রির স্থানে পণ্য প্রদর্শন করা যাবে না। কিন্ত এখনও হাসপাতাল আঙ্গিনা কিংবা বিদ্যালয়ের আশেপাশেসহ প্রায় সকল স্থানে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নান্দনিকভাবে তামাকপণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হলেও, বিক্রয় স্থলে এ রকম করে প্যাকেট বা কৌটা প্রদর্শনে সুযোগ রয়ে গেছে। এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করা জরুরী। এর মাধ্যমে ধূমপানের হার ৭% পর্যন্ত কমতে পারে। ইতোমধ্যে বিশ্বের ৫০টি দেশ এই বিধি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তামাক কোম্পানির কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধের দাবি আছে তৃতীয়তে।
বর্তমানে তামাক কোম্পানি সিএসআর পরিচালনা করলে সেখানে তাদের নাম, লোগো ইত্যাদি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ৬২টি দেশে ইতোমধ্যেই এ রকম সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। তামাকপণ্যের প্যাকেটে সচিত্র সতর্ক বার্তা দেয়ার বিধানটি যথেষ্ট কার্যকর। বিদ্যমান আইনে প্যাকেটের ৫০ শতাংশ জুড়ে এমন সচিত্র সতর্ক বার্তা রাখার বিধান আছে। আমরা এর সুফলও পেয়েছি। তবে প্রতিবেশি দেশ শ্রীলঙ্কায় প্যাকেটের ৮০ শতাংশ, ভারতে ৮৫ শতাংশ এবং নেপালে ৯০ শতাংশ এলাকা জুড়ে সচিত্র সতর্ক বার্তা থাকে। আমাদেরও তাই ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশের আইন করা দরকার বলে মনে করি।
বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম অন্তরায় খুচরা সিগারেটসহ সকল তামাকপণ্যের খুচরা বিক্রি। এতে করে সিগারেট সহজলভ্য হওয়ায় যেমন নতুন ধূমপায়ীর সংখ্যা বাড়ছে, তেমনই দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের তামাকপণ্যের পেছনে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্ততপক্ষে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, খুচরা তামাকপণ্য বন্ধ করা খুব জরুরী। ইতোমধ্যে বিশ্বের ১১৮টি দেশ এই কাজটি করে দেখিয়েছে, এবং সুফল পাচ্ছে।
সর্বশেষ দাবিটি হলো ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা। আমরা সবাই মিলে যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করছি, তখন ই-সিগারেট ও হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্টসসহ (এইচটিপি) সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রডাক্টের মতো নতুন ধরনের পণ্যের সহলভ্যতা মেনে নেওয়ার মতো নয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এ ই-সিগারেটে মূলত তরুণরাই আকৃষ্ট হচ্ছেন। আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা জানাচ্ছে, ই-সিগারেটে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ৭১ শতাংশ পর্যন্ত। কণ্ঠনালি ও হূদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় যথাক্রমে ৫৯ ও ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফ্লেভারিং এজেন্টের কারণে শ্বাসতন্ত্র, লিভার, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এরই মধ্যে এর ক্ষতিকর প্রভাব টের পেয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ মোট ৩৩টি দেশে ই-সিগারেট বা ভেপিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এসবের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি একটি বড় কাজ। সমাধান হিসেবে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই-
- অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজন যথাযথ নীতিমালার। নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে দেশের বর্তমান অবস্থায় যেসব রোগ বেশি অকালমৃত্যু ও বৈকল্য ঘটায়, সেগুলো ঠিকমতো নির্ণয়, প্রতিরোধ নির্ধারণ করে প্রতিরোধ এবং আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে।
- দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে বাস্তবায়ন করতে হবে।
- তরুণদের মধ্যে ধূমপানের হার বাড়ছে। তাদেরকে সুরক্ষিত করতে হবে। নতুন ধূমপায়ী যেন তৈরি না হয়, সে বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। এর জন্য যেমন সংশোধিত আইনের প্রয়োগ দরকার, তেমনই ই-সিগারেটসহ সকল ধরণের হিটেড ট্যোবাকো উৎপাদন, আমদানি বন্ধ করতে হবে।
- সমন্বয়ের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি এবং স্যোসাইটির সকল পক্ষের মাল্টি-সেক্টরাল উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি, স্থানীয় সংসদ সদস্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, এনজিও, সিএসও ও সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা থাকতে হবে।
স্বাস্থ্যকর জীবনব্যবস্থা আমাদের সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। তবে অসংক্রামক রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করতে পারলে প্রতিরোধ করা সহজ হবে। কারণ, এটা ব্যয়বহুল চিকিৎসা। পরিবার, অর্থনীতি ও সমাজকে সাথে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাই মূল কারণগুলো নিয়ে শুরু থেকে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজ করা জরুরী। আমরা তাতে সফল হলে কেবল তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নই সম্ভব হবে না, স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রেও সাধারণ মানুষ ভরসা পাবে।
- লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
নির্বাহী পরিচালক, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন
ভাইস-চেয়ার, গ্যাভি সিএসও স্টিয়ারিং কমিটি