অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য পরিকল্পিত শিল্পায়ন গড়ে তোলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আবাদি জমি রক্ষায় পরিকল্পিত শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে যুব ও নারীদের এ খাতে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, "যত্রতত্র কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। আবাদি জমি ও তিন ফসলি জমির কোনো ক্ষতি করা যাবে না। শিল্পায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনবো।"
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সারাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) ৫০টি শিল্প ইউনিট, প্রকল্প ও সুযোগ-সুবিধা উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগদান করে বলেন, "রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও ৫০টি শিল্প ইউনিট ও অবকাঠামোর উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে গিয়ে আজ আমি খুবই আনন্দিত।"
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময় বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দেন এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের মান ও মর্যাদা বিশ্বে যেনো আরো বৃদ্ধি পায় সে পদক্ষেপ নেন।
তিনি বলেন, "আমরা সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছি বলেই ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটি ধরে রাখতে হবে। সেজন্য আমাদের ব্যাপক শিল্পায়ন দরকার। কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধিসহ আমাদের নতুর নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে এবং জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি করে তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে নিজস্ব বাজার সৃষ্টি হয়। সরকার সে কারণেই সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে এবং প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই বেশ কয়েকটি ইপিজেড নির্মাণ করেছে।"
তিনি উত্তরবঙ্গে প্রথম নীলফামারির উত্তরা ইপিজেড প্রতিষ্ঠার কথা স্মরণ করেন বলেন, সারাদেশে ইতোমধ্যে ইপিজেড করতে ৯৭টি জায়গায় তার সরকার ঠিক করে রেখেছে। সেখানে পর্যায়ক্রমে বিনিয়োগ আসবে। কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক ধাক্কা সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশে লাগলেও তার সরকার সেটি সামলে নিয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখায় সচেষ্ট রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, "এরপর মরার ওপর খরার ঘা, রাশিয়া-ইউক্রের যুদ্ধ এবং অবরোধ, পাল্টা অবরোধের ফলে আমাদের ক্রয় ক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা নেমে এসেছে। আমদানি পণ্যের দাম এবং পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। ফলে অনেক দেশ মন্দায় ভুগছে।"
শিল্প মালিকদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, "নিজের ইন্ডাস্ট্রি চালিয়ে অন্তত দেশের মানুষের চাহিদা পূরণের প্রচেষ্টা চালাবেন আপনারা। আওয়ামী লীগ সরকার আপনাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। এখন আর হাওয়া ভবন নেই যে, আপনাদের কোনো কাজ পেতে হলে সেখানে পাওনা ঘুচাতে অথবা এখানে ওখানে ছোটাছুটি করতে হবে। আমরা দেশকে নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।"
তিনি বলেন, "ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন। ব্যবসার ক্ষেত্র প্রস্তুত এবং সুযোগ-সুবিধা আমরা করে দিচ্ছি। আপনারা প্রত্যেকেই দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন, যত বেশি মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন, আমার সরকার তত বেশি আপনাদের সহযোগিতা করবে। কিন্তু এমন কিছু করবেন না, যাতে মানুষ কষ্ট পায় বা দুর্ভোগ পোহাতে হয়।"
তিনি বলেন, কৃষিজমি যেমন আমাদের বাঁচাতে হবে, তেমনি শিল্পোৎপাদনও করতে হবে। সেজন্য যত্রতত্র যেনো শিল্প গড়ে না ওঠে সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
৫০টি শিল্প সুবিধার মধ্যে চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে (বিএসএমএসএন) চারটি কারখানা এবং বেসরকারিভাবে পরিচালিত বিভিন্ন ইজেডে আটটি কারখানা খোলা হয়েছে।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি, চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান চট্টগ্রামের বিএসএমএসএন প্রান্তে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কর্মকান্ডের ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন একযোগে মোট আটটি ভেন্যুতে হয়। ভেন্যুগুলো হচ্ছ, গণভবন, ঢাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর (বিএসএমএসএন মিরসরাই, চট্টগ্রাম), শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল (মৌলভীবাজার), কর্ণফুলী ড্রাইডক এসইজেড (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম), মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল (সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ), জামালপুর অর্থনতিক অঞ্চল (জামালপুর সদর), সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক (সাবরাং, কক্সবাজার) ও হোসেন্দি অর্থনৈতিক অঞ্চল (গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ)।