ইংলিশ শাসনে বিধ্বস্ত ইরান
নিজ দলের খেলোয়াড়ের সঙ্গে সংঘর্ষে নাকে আঘাত পেয়ে মাঠে লুটিয়ে পড়লেন আলীরেজা বেইরানভান্ড। খেলা বন্ধ থাকলো বেশ কিছুক্ষণ। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে খেলা শুরু করলেও পারলেন না আলীরেজা। স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হলো তাকে। ক্যামেরা তখন ইরানের কোচ কার্লোস কুয়েরোসের ওপর, আফসোসে পর্তুগিজ কোচের তখন মাথায় হাত। আলীরেজার মাঠ ছাড়ার সাথে সাথে যেন বিশ্বকাপ স্বপ্নেও আঘাত লাগলো তাদের। বাছাই পর্বে যে তার বিশ্বস্ত গ্লাভসজোড়ার কারণেই ১৮ ম্যাচে মাত্র ৮ গোল হজম করেছিল ইরান।
আলীরেজা বেরিয়ে গেলেন, ইরানের খারাপ সময়ের শুরুও তখন থেকেই। সময় গড়াতেই মুহুর্মুহু আক্রমণে ইরানকে পাগল করে দিতে লাগলো ইংল্যান্ড। বদলি গোলরক্ষক হিসেবে নামা হোসেইন হোসেইনি কিছুই করতে পারলেন না, তাদের জালে গোল উৎসব করে গেলেন বুকায়ো সাকা, রহিম স্টার্লিং, জুড বেলিংহামরা। ইরান দুবার জালের ঠিকানা পেলেও তা কেবল ব্যবধান কমালো। বিশাল জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করলো গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা।
সোমবার দোহার খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে 'বি' গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইরানকে ৬-২ গোলের ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে একবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। যেকোনো প্রতিযোগিতায় এবারই প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল। অভিজ্ঞতাটা ইংল্যান্ডের জন্য ভবিষ্যতের সুখস্মৃতি হবে, তবে ইরানের জন্য তা দুঃস্বপ্নের স্মৃতি। ইংল্যান্ডের পক্ষে জোড়া গোল করেন বুকায়ো সাকা। একটি করে গোল করেন জুড বেলিংহাম, রহিম স্টার্লিং, মার্কাস রাশফোর্ড ও জ্যাক গ্রিলিশ।
পুরো ম্যাচে দাপট ধরে রেখে খেলে ইংল্যান্ড, প্রতিপক্ষের আক্রমণ ফেরাতেই ব্যস্ত থাকতে হয় ইরানকে। ম্যাচে ৭৯ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখেন হ্যারি কেইন, স্টার্লিংরা। গোলমুখে ১৩টি শট নেয় ইংলিশরা, এর মধ্যে ৭টি শট লক্ষ্যে ছিল। শেষ দিকে গিয়ে আক্রমণ সাজানো ইরান গোলমুখে ৮টি শট নেয়, এর মধ্যে ৩টি শট লক্ষ্যে ছিল।
প্রথম কয়েক মিনিটে কোনো দলই পরিষ্কার আক্রমণ করতে পারেনি। অষ্টম মিনিটে দারুণ আক্রমণ সাজায় ইংল্যান্ড। ডান কোণা ধরে বল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে চমৎকার এক ক্রস করেন অধিনায়ক হ্যারি কেইন। বাম পাশ থেকে এগিয়ে যাওয়া রহিম স্টার্লিং হেডের চেষ্টা করেও বলে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি। কিছুক্ষণ পরই মাজিদ হুসেইনির সঙ্গে সংঘর্ষে নাকে মারাত্মক আঘাত পান ইরানের গোলরক্ষক আলীরেজা বেইরানভান্ড। এতে সাড়ে সাত মিনিটের মতো খেলা বন্ধ থাকে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর খেলা শুরু করলেও টিকতে পারেননি তিনি, স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। এ সময় আরও কয়েক মিনিট খেলা বন্ধ থাকে।
খেলা শুরুর পর অনেকটা সময় ঢিমে তালে এগোয় খেলা। অবশ্য নিজেদের গুছিয়ে নিতে সময় নেয়নি ইংল্যান্ড, ছন্দ পেয়ে একের পর এক আক্রমণ সাজাতে থাকে তারা। ২৭তম মিনিটে বুকায়ো সাকার বাঁ পায়ের দুর্বল শট সহজেই গ্লাভসবন্দি করেন ইরানের বদলি গোলরক্ষক হোসেইনি। ৩০তম মিনিটে দারুণ সম্ভাবনা তৈরি করে ইংলিশরা। ডি-বক্সের ডান প্রান্ত থেকে বল বাড়ান সাকা। কিন্তু ম্যাসনমাউন্টের নেওয়া শট একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৩২তম মিনিটে ম্যাচের প্রথম কর্নার পায় ইংল্যান্ড। ট্রিপিয়ারের নেওয়া কর্নারে দারুণ হেড নেন হ্যারি ম্যাগুয়ের। কিন্তু কপাল পোড়া, গোলবারে লেগে ফিরে আসে বল। ধারাবাহিক আক্রমণে ৩৫তম মিনিটে গোলের দেখা পেয়ে যায় ইংল্যান্ড। বাম প্রান্ত থেকে লুক শয়ের বাড়ানো ক্রস থেকে বল পেয়ে হেডে ইরানের জালে বল জড়ান ১৯ বছর বয়সী মিডফিল্ডার জুড বেলিংহ্যাম।
দাপুটে ফুটবলে ব্যবধান দিগুণ করতেও সময় নেয়নি হ্যারি কেইনের দল। ৪৩তম মিনিটে কর্নার শট থেকে ম্যাগুয়েরের নেওয়া হেড থেকে ডি-বক্সে বল পান বুকায়ো সাকা। বাঁ পায়ের অসাধারণ ভলিতে গোল আদায় করে নেন ইংলিশ এই উইঙ্গার। ইরানের জালে তৃতীয়বারের মতো বল পাঠাতে আরও কম সময় নেয় ইংল্যান্ড। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ডান প্রান্ত থেকে হ্যারি কেইনের ক্রস থেকেই সহজেই বল জালে জড়ান রহিম স্ট্রার্লিং।
আগে সময় নষ্ট হওয়ায় প্রথমার্ধে ১৪ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। কেবল ইংল্যান্ডের আক্রমণ সামলে আসা ইরান এ সময়ে ব্যবধান কমানোর দারুণ সুযোগ পায়। বাঁ প্রন্ত থেকে দারুণ এক ক্রস বাড়ান মিলাদ মোহাম্মদি। ডি-বক্সে তখন অরক্ষিত আলীরেজা জাহানবক্স। কিন্তু একেবারে ফাঁকায় বল পেয়েও গোলবারের অনেক উপর দিয়ে শট নেন ইরানের এই উইঙ্গার। ইংল্যান্ডের শাসনেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটা সময় মাঝমাঠেই বল ঘুরপাক খায়। কোনো দলই সেভাবে আক্রমণ সাজাতে পারছিল না। ৬০ মিনিট পেরোতেই দাপুটে ইংল্যান্ডের দেখা মেলে। ৬২তম মিনিটে রহিম স্টার্লিংয়ের পাস থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ে প্লেসিং শটে নিজের দ্বিতীয় ও দলের পক্ষে চতুর্থ গোল করেন সাকা। কিছুক্ষণ পর জালের ঠিকানা পায় ইরান। আলী গোলিজাদেহর পাস থেকে দারুণ শটে গোল করেন মেহদি তেরেমি।
ব্যবধান কমিয়ে অবশ্য লাভ হয়নি, বদলি খেলোয়াড়ি হিসেবে মাঠে নেমেই গোল করেন মার্কাস রাশফোর্ড। ৭১তম মিনিটে হ্যারি কেইনের পাস থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে কাতারের একজনকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান ইংলিশ এই ফরোয়ার্ড। ৭৭তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে যায় ইরান। লম্বা পাস থেকে বল পেয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে গিয়ে শট নেন তেরেমি, কিন্তু তার শট গোলবারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়।
৮৯ মিনিটে আরও এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ক্যালাম উইলসনের পাস থেকে বল পেয়ে গোল করেন বদলি হিসেবে নামা জ্যাক গ্রিলিশ। বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়লেও শেষ দিকে আক্রমণ সাজাতে থাকে ইরান। যোগ করা সময়ে (৯০+১৩) পেনাল্টি পায় ইরান। স্পট কিক থেকে নিজের ও দলের পক্ষে দ্বিতীয় গোল করেন তেরেমি।