ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া স্থগিত করার দাবি ক্যাবের
সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। তার উপর কয়েক মাস আগেও ১৩% থেকে ৭৫% বাড়ানো হয়েছে ওষুধের দাম। তাই নতুন করে ওষুধের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
বুধবার 'ওষুধের অযৌক্তিক ও অনৈতিকভাবে মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ' শীর্ষক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান।
তিনি বলেন, "ওষুধের মূল্য যদি বাড়ানো হয় তাহলে আমরা আইনের আশ্রয় নিব। প্রতিকার পেতে ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় মামলা করবো।"
গোলাম রহমান বলেন, "নিম্নআয়ের মানুষের এখন ওষুধ কেনার সামর্থ হারিয়ে গেছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে সঠিকভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে। কেউ যেন অতিমুনাফা না করতে পারে। এই মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানা উচিত।"
ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ মো. মুঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার বলেন, "গত ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণের জন্য গঠিত টেকনিক্যাল সাব-কমিটির সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। ৬টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ২১টি জেনেরিক ৫৮টি পদের কস্টিং শিট পর্যালোচনা করা হয়।"
তিনি বলেন, "এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে কলেরা স্যালাইন, হার্টম্যান সলুশন, সোডিয়াম ক্লোরাইড, ডেক্সটোজ, ডেক্সটোজ প্লাস সোডিয়াম ক্লোরাইড, মেট্রোডিজানল ও হিউম্যান ইনসুলিন। দেশে যখন প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী তখন ওষুধের মতো এতো প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সরকারের উচিত হিডেন কস্ট কমিয়ে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা।"
ক্যাবের সদস্য এবং ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, "ওষুধ কোম্পানিগুলো মার্ক-আপ বা হিডেন কস্টের নামে ফার্মেসি পর্যায়ে কমিশন, গিফট, চিকিৎসকদের বিভিন্নভাবে গিফট দেয়। এছাড়া বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের বিনোদনের জন্য, বিদেশ সফরের জন্য স্পন্সর করে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। এসব খরচ মূল ঔষধের উপর তিন-চার গুণ মার্ক-আপ বলে আইভি ফ্লুইডের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব ব্যয়কে যদি হ্রাস করা হয় তাহলে মূল্যবৃদ্ধির হাত থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে পারি।"
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, "সরকারি পর্যায়ে দেশের একমাত্র স্যালাইন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট (আইপিএইচ)। যেখানে জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন আইভি ফ্লুইড (ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড), স্যালাইন, ব্লাডব্যাগ ও রি-এজেন্ট উৎপাদন করে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু এটা এখন বন্ধ।'
তিনি বলেন, 'একটা তদন্ত কমিটি করা হোক কেন এটা বন্ধ করা হয়েছে। এটা বন্ধ হওয়ায় কোম্পানিগুলো এসব ওষুধে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ পাচ্ছে।"
ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, "ইচ্ছেমতো ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর রেগুলেটরি বডি হিসেবে ব্যর্থ হয়েছে। এটা তাদের সীমাবদ্ধতা নাকি ওষুধ কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দিচ্ছে তারা, সেটি সরকারকে তদন্ত করে দেখতে হবে।"
তিনি বলেন, "১৯৯৪ সালের তৎকালীন সরকার ওষুধ শিল্পের ওপর কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ চালু করে। এক আদেশে দেশের উৎপাদিত ওষুধের মধ্যে মাত্র ১১৭টি জেনেরিক ওষুধ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রেখে বাকি ওষুধ কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণে দেয়। এ আদেশ বাতিল করতে হবে।"
ক্যাব জানায়, গত ২০ জুলাই ৫৩টি ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য সরকার পুনঃনির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর ক্যাব সরেজমিনে ফার্মেসিতে খুচরা ওষুধের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখে গত ছয় মাসের ব্যবধানে এসব ওষুধের ১৩% থেকে ৭৫% পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ছয় মাসের ব্যবধানে শুধু প্যারাসিটামল সিরাপের দাম বেড়েছে ৭৫%।