দাপুটে জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু ব্রাজিলের
অবিরত আক্রমণে সার্বিয়াকে দিশেহারা করে তুললো ব্রাজিল। কিন্তু রাফিনহার সহজ সুযোগ হাতছাড়াসহ আরও কয়েকটি মিসে গোলের দেখা মিললো না। শাসন করেও তাই হতাশায় প্রথমার্ধ শেষ। বিরতি থেকে আরও ধার বাড়ানো ব্রাজিলের ত্রাতা হয়ে উঠলেন রিচার্লিসন। সুযোগ হাতছাড়ার হতাশা কাটিয়ে সার্বিয়ার জালে বল পাঠানো ব্রাজিলিয়ান এই স্ট্রাইকার পরে চোখ জুড়ানো আরেকটি গোল করলেন। দাপুটে জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করলো ব্রাজিল।
বৃহস্পতিবার রাতে লুসাইল স্টেডিয়ামে 'জি' গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়েছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময় সার্বিয়াকে পরীক্ষায় রাখা ব্রাজিল ঠিক সেভাবেই শুরু করলো, যেভাবে তারা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। উড়ন্ত এই জয়ে ব্রাজিলের হয়ে জোড়া গোল করেন রিচার্লিসন।
পুরো ম্যাচে দাপট জারি রেখে খেলে শিরোপা প্রত্যাশী ব্রাজিল। সার্বিয়া তাদের রক্ষণ সামলে মাঝে মাঝে আক্রমণ সাজালেও তা ব্রাজিলের তুলনায় অনেক কম ছিল। মুহুর্মুহু আক্রমণ সাজানো নেইমার-রাফিনহারা ৫৯ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখেন। সেলেসাওদের নেওয়া ২২টি শটের ৮টি ছিল লক্ষ্যে। সার্বিয়া গোলমুখে ৫টি শট নেয়, এর মধ্যে একটিও লক্ষ্যে ছিল না।
শুরু থেকেই আক্রমণ সাজাতে থাকা ব্রাজিল নবম মিনিটে সার্বিয়ার রক্ষণে হানা দেয়। ডি-বক্সের মধ্যে দারুণ পাসে নেইমারকে বল দেন কাসেমিরো। কিন্তু প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের বাধায় শট নিতে পারেননি ব্রাজিল প্রাণভোমরা। ১৩তম মিনিটে ব্রাজিলের আক্রমণ কর্নারের বিনিময়ে ফেরায় সার্বিয়া। বাঁকানো শট নেন নেইমার, বল সরাসরি গোলপোস্টের দিকে যাচ্ছিল। আরেকটি কর্নারের বিনিময়ে শটটি ফেরান সার্বিয়ার গোলরক্ষক ভানিয়া মিলিনকোভিচ-স্যাভিচ।
ব্রাজিলের আক্রমণ সামাল দিতেই ব্যস্ত থাকতে হয় সার্বিয়াকে, নিজেদের রক্ষণ সামলে আক্রমণ সাজানো হচ্ছিল না তাদের। ২৫তম মিনিটে গিয়ে ব্রাজিলের রক্ষণে হানা দেয় সার্বিয়া। বামপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণ করে ডি-বক্সে ক্রস বাড়ান দুসান তাদিচ। মিত্রোভিচকে সামলে বল নিয়ন্ত্রণে ব্রাজিলের গোলরক্ষক আলিসন বেকার।
তিন মিনিট পর থিয়াগো সিলভার চতুর পাস খুঁজে নেয় ভিনিসিয়ুসকে। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তারকা এই খেলোয়াড় শট নেওয়ার আগেই বল ফিরিয়ে দেন সার্বিয়ান গোলরক্ষক ভানিয়া। ৩০তম মিনিটে লুকাস পাকেতা কাছ থেকে বল পেয়ে ছোট বক্সে পাস দেন রাফিনহা। কিন্তু সিলভা চেষ্টা করেও বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি।
৩৫তম মিনিটে সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন রাফিনহা। পাকেতার সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় বল দেওয়া-নেওয়া করে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। তার সামনে কেবল সার্বিয়ার গোলরক্ষকই ছিল। কিন্তু দুর্বল এক শট নেন তিনি, যা সহজেই গ্লাভসবন্দি করেন ভানিয়া। ৪১তম মিনিটে আবারও ব্যর্থ হয় ব্রাজিলের চেষ্টা। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের ভুলে বল পান ভিনিসিয়ুস। কিন্তু ডি-বক্সে ঢুকে জালের ঠিকানা করে নিতে পারেননি তিনি। তার শট রুখে দেন মিলেনকোভিচ। প্রথমার্ধ গোলশূন্যভাবেই শেষ হয়।
বিরতির পর পাল্টে যায় ম্যাচের চেহারা। এই অর্ধে সার্বিয়াকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করা ব্রাজিল অবিরত আক্রমণ সাজাতে থাকে। একই ধারায় থেকে ৬২তম মিনিটে গোল আদায় করে নেয় সেলেসাওরা। দারুণ দক্ষতায় বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন নেইমার। সেখান থেকে ভিনিসিয়ুসের নেওয়া কোণাকুণি শট ঝাঁপিয়ে ফেরালেও দলকে বিপদমুক্ত করতে পারেননি সার্বিয়ান গোলরক্ষক। ফিরে আসা আলগা বলে শট নিয়ে অনায়াসে গোল করেন রিচার্লিসন।
প্রথম গোলের দেখা পেয়ে আরও ধার বাড়ে ব্রাজিলের খেলার। গতি ও ছন্দের দারুণ মিশেলে টানা আক্রমণে সার্বিয়াকে দিশেহারা করে তোলে কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিটরা। ৭ততম মিনিটে গিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করে তারা। ভিনিসিয়ুসের হাল্কা উঁচু করে বাড়ানো পাস প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে উপর থেকেই ডান পায়ের অ্যাক্রোব্যাটিক শটে বল জালে জড়ান রিচার্লিসন। এরপর আরও কয়েকবার সার্বিয়ার রক্ষণে হানা দেয় ব্রাজিল। কিন্তু অল্পের জন্য গোলের দেখা পায়নি তারা। দ্বিতীয় ম্যাচে আগামী সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ব্রাজিল।