ব্রাজিলের গোল্ডেন বয়: কেন নয় নাম্বার তারই প্রাপ্য মাঠে জবাব দিলেন রিচার্লিসন
রিচার্লিসন অন্যান্যদের কাছে নাম্বার নাইন হিসেবে পাকাপোক্ত হয়ে গেলেও বিশ্বকাপ ম্যাচে তার অভিষেকের পারফরম্যান্স দিয়ে তিনি দেখিয়ে দিলেন কেন কোচ টিটে তার ওপর আস্থা রেখেছিলেন।
আর্সেনালের গ্যাব্রিয়েল জেসুস এবং রিয়াল মাদ্রিদের রদ্রিগো, এমনকি বিশ্বকাপ দলে ডাক না পাওয়া লিভারপুলের রবার্তো ফিরমিনোর সাথে দলে জায়গা পাওয়ার জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নেমেছিলেন রিচার্লিসন, মূল একাদশের আক্রমণভাগের কাণ্ডারি কে হবেন তা নিয়ে। একপাশে নেইমার আর অন্যপাশে ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে রেখে নাম্বার নাইন পজিশনে টিটে ভরসা রাখলেন রিচার্লিসনের ওপরেই। রিচার্লিসনও সেই আস্থার জবাব দিলের মাঠে পারফর্ম করে। তার দেওয়া দুই গোলের ওপর ভর করেই লুসাইল স্টেডিয়ামে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা সার্বিয়াকে হারায় ২-০ গোলে।
সার্বিয়ার রক্ষণভাগ ভাঙতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলো হেক্সাজয়ের মিশনে নামা ব্রাজিলীয়রা, তবে শেষমেশ ডেডলক ভাঙে ঘড়ির কাঁটা একঘণ্টা পার হওয়ার পর। ৬২ মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের শট সার্বীয় গোলরক্ষক ভানিয়া মিলিঙ্কোভিচ-সাভিচ ঠেকিয়ে দেওয়ার পর ফিরে আসা বল ডান পায়ের জোরালো ভলিতে মুহূর্তের মধ্যেই জালে জড়িয়ে হলুদ শিবিরে স্বস্তির পরশ এনে দেন রিচার্লিসন।
ঠিক ১১ মিনিট পরেই ভিনিসিয়াস জুনিয়রের কৌশলী পাস একটি টাচ দিয়ে উপরে উঠিয়ে নিজের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে অ্যাক্রোবেটিক স্টাইলে শট করে একই ম্যাচে দ্বিতীয়বার সার্বিয়ার জালে বল জড়ান সাদা চুলের রিচার্লিসন। দ্বিতীয় গোলটি তার হলুদ জার্সির হয়ে মাঠে নামা শেষ সাত ম্যাচের গোলের ট্যালিতে নবম গোল হিসেবে যোগ হয়েছে। এর দ্বারাই প্রমাণ হয় কেন টিটের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছিলেন তিনি, যে কারণে ২০১৪ সালে নেইমারের পর দেশের হয়ে বিশ্বকাপ অভিষেক ম্যাচেই জোড়া গোলের রেকর্ড গড়লেন তিনি। এখনো পর্যন্ত ব্রাজিলের হয়ে রিচার্লিসন মাঠে নেমেছেন ৩৯ ম্যাচে, গোল করেছেন ১৯টি।
আক্রমণভাগের অন্যান্য খেলোয়াড়দের তুলনায় তাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা না গেলেও রিচার্লিসন তার সেরা সময়ে একজন পরিপূর্ণ স্ট্রাইকার, স্কিলের পাশাপাশি অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাঠে নিজের উপস্থিতি প্রতি মুহূর্তে জানান দেন। পেনাল্টি বক্সের মধ্যে তিনি ঠিক কতটুকু ভয়ঙ্কর তা অভিষেক ম্যাচেই প্রমাণ করে গেলেন।
৬০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে এই গ্রীষ্মে এভারটন থেকে টটেনহ্যাম হটস্পারে যোগ দেওয়ার পর ইঞ্জুরির জন্য মৌসুমজুড়ে বেশ বাজেভাবে ভুগতে হয়েছে তাকে। সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন মাত্র দুইটি। তবে এই ম্যাচের পর তিনি জানান দিলেন জাতীয় দলের হয়ে তিনি কত বড় সম্পদ। ক্লাবও তার কাছ থেকে কী আশা করতে পারে তারও টুকরো বার্তা দিলেন।
বিবিসি স্পোর্টে সাবেক ইংরেজ স্ট্রাইকার অ্যালান শিয়ারার ম্যাচের পর মন্তব্য করেছেন, "হলুদ জার্সি গায়ে তিনি ফর্মের চূড়ান্ত অবস্থায় আছেন। প্রিমিয়ার লীগে এখনো গোল না করলেও ব্রাজিলের জার্সিতে রিচার্লিসন জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড। অসাধারণ দ্বিতীয় গোলের মতো প্রথম গোলের সময়েও তার চমৎকার পজিশনিং সেন্সও আমাকে দারুণ আনন্দ দিয়েছে। ও একেবারে ঠিক পজিশনে ছিল। ওর মুভমেন্ট লক্ষ্য করুন। ও-ই সবার আগে ফিরতি বল জালে জড়ানোর জন্য এগিয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিক বা সাধারণ বিষয় মনে হলেও এটি মোটেই তা নয়। আপনাকে বলটি জালে জড়াতে হবে। একজন অসাধারণ স্ট্রাইকারের এই সেন্সটিই জরুরি।"
৭৯ মিনিটে রিচার্লিসনকে মাঠ থেকে তুলে নেন টিটে, নামান গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে। ম্যাচ জেতা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর গোড়ালিতে ব্যথা পাওয়া রিচার্লিসনকে নিয়ে আর ঝুঁকি নেননি তিনি। কারণ ষষ্ঠবার উঁচিয়ে ধরতে গেলে রিচার্লিসনকে বারবার প্রয়োজন হবে ব্রাজিলের।