রিচার্লিসনের চোখ ধাঁধানো বাইসাইকেল কিকের গোলই এখন পর্যন্ত সেরা
ফুটবল কতোটা সুন্দর? অপ্রস্তুত অবস্থায় এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হলে আপনার উত্তর হতে পারে, 'রিচার্লিসনের গোলটি দেখে দিন।' আগে থেকেই আক্রমণের ভরসা হিসেবে বিবেচিত হওয়া রিচার্লিসনের এই গোলের পর ব্রাজিল বলছে, ৯ নম্বর জার্সিটা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম 'ওলে' তাদের টুইটে লিখেছে 'অন্য মাত্রার।'
অন্য মাত্রার ভূমিকম্পও বলা যায় হয়তো। নয়নাভিরাম বাইসাইকেল কিকে সার্বিয়ার জালে বল পাঠিয়ে রিচার্লিসন যখন উদযাপনের জন্য ছুটছিলেন, কাতারের লুসাইল স্টেডিয়াম তখন কাঁপছিল। গ্যালারি ফেটে পড়ছিল উল্লাসে, উন্মাদনায়। কারও কারও অনুভূতির প্রকাশ এমন ছিল যে, 'কী দেখলাম এটা।' গোলটির মাহাত্ম্য এতেই স্পষ্ট। আর হ্যাঁ, নিশ্চিতভাবেই রিচার্লিসনের গোলটি এখন পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপের সেরা।
এখন পর্যন্ত বলায় মাহাত্ম্য কিছুটা কমতে পারে। সে ক্ষেত্রে একটু ঝুঁকি নিয়ে হলেও বলা যায়, পুরো বিশ্বকাপেরই সেরা পাঁচ গোলের মধ্যে থাকবে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারের করা অবিশ্বাস্য এই গোলটি। 'গোল অব দ্য টুর্নামেন্ট' হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এই এক গোলের বর্ণনা দিতে গিয়েই যে ব্রাজিলকে অনেকে বলছে, 'এই দলটি এখনই ভয়ঙ্কর।'
সার্বিয়ার বিপক্ষে শাসন করে খেলেছে ব্রাজিল। সেলেসাওদের ২-০ গোলের জয়ে দুইবারই জালে বল পাঠিয়েছেন রিচার্লিসন। প্রথমার্ধের শুরুতে কিছুটা অগোছালো মনে হলেও সময়ের সাথে সাথে ছন্দ খুঁজে নিয়েছে ব্রাজিল। যদিও মুহুর্মুহু আক্রমণের পরও সুযোগ হাতছাড়া করায় এই অর্ধে গোলের দেখা পায়নি পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
কিন্তু বিরতি থেকে ফিরেই একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ব্রাজিল। 'জোগো বনিতা'র পুরো ছাপ না থাকলেও হলুদ ঢেউয়ে ঢেউয়ে সাম্বার ছন্দ দেখা গেছে। যে ছন্দ বুঝে উঠতে না পেরে সার্বিয়া হয়ে উঠেছে দিশেহারা। আর এই ছন্দের নেতৃত্বে ছিলেন জোড়া গোল করা রিচার্লিসন। যদিও শুরুর গোলটায় তার বিশেষ কৃতিত্ব ছিল না, সুযোগসন্ধানী হওয়ায় জালের ঠিকানা পান ব্রাজিলের এই তারকা।
৬২তম মিনিটে দারুণ দক্ষতায় বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন নেইমার। সেখান থেকে ভিনিসিয়ুসের নেওয়া কোণাকুণি শট ঝাঁপিয়ে ফেরালেও দলকে বিপদমুক্ত করতে পারেননি সার্বিয়ান গোলরক্ষক ভানিয়া। ফিরে আসা আলগা বলে শট নিয়ে অনায়াসে গোল করেন রিচার্লিসন।
এমন গোলে তার মন ভরেনি। ৭৩তম মিনিটে তাই জাদুকর হয়ে উঠলেন রিচার্লিসন। ভিনিসিয়ুসের হাল্কা উঁচু করে বাড়ানো পাস প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শূন্য থেকেই ডান পায়ের অবিশ্বাস্য অ্যাক্রোব্যাটিক শটে বল জালে জড়ান রিচার্লিসন। এই গোল করে যেন রিচার্লিসন মনে করিয়ে দিলেন, যোগ্য হিসেবেই ব্রাজিলের বিখ্যাত ৯ নম্বর জার্সিটি পেয়েছেন তিনি।
৯ নম্বর জার্সির আবেদন রিচার্লিসন মেটাতে পারবেন কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। টটেনহ্যামে যে ১৫ ম্যাচে মাত্র ২ গোল করেন করেন তিনি। কিন্তু দেশের হয়ে ৩৯ ম্যাচে ১৫ গোল করা এই ২৫ বছর বয়সীর ওপর ভরসা রাখেন ব্রাজিলের কোচ তিতে। তার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, প্রথম ম্যাচেই তা প্রমাণ করে দিলেন রিচার্লিসন।
দলের উড়ন্ত জয়ে নিজে এমন পারফরম্যান্স করতে পারায় উচ্ছ্বাসের শেষ নেই রিচার্লিসনের। ম্যাচের পর তিনি জানালেন, শৈশবে এমন কিছুর স্বপ্নেই বিভোর ছিলেন, 'শৈশবের স্বপ্ন পূরণ হলো। আমরা ভালো ম্যাচ খেলেছি, বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে। প্রতিপক্ষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল এবং আমরা সেই সুযোগ নিয়েছি।'