ফিদেল কাস্ত্রো: এক জননেতা, তার সাক্ষাৎকার
প্রথম অংশের পর...
ডমিনোর যুদ্ধ?
এভাবেই দুই পক্ষের মানুষগুলো একসাথে কিছু সময় কাটাত। অনেকটা গুয়ারেসচির বিখ্যাত উপন্যাস ডন ক্যামিলোর মত, যেখানে দুই পক্ষ ছিল পাদ্রী আর কম্যুনিস্টরা।
তবে আমি জানতে পারিনি স্কুলে থাকার সময় গার্সিয়াকে কে খবর পড়ে শোনাত। তার তো কোন রেডিও ছিল না।
তাহলে আপনার স্পেনের গৃহযুদ্ধ নিয়ে সম্যক ধারণার জন্য ম্যানুয়েল গার্সিয়াকেই আমাদের ধন্যবাদ জানানো উচিত-
হ্যাঁ। এভাবেই সেই গৃহযুদ্ধের স্মৃতি আমার মাঝে এত তাজা, এর পরে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও যখন প্রজাতন্ত্র এবং পশ্চিমাদের গণতন্ত্রের ( এই গণতন্ত্রের পাশে অবশ্য আমি একটি বিশেষ জিজ্ঞাসাবোধক চিহ্ন রাখব) তত্ত্ব নাৎসিদের হত্যা-দমন- দখলের মুখোমুখি হল।
স্পেনে আসলে কী ঘটেছিল এবং কেন স্প্যানিশ প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটেছিল, পশ্চিমারা আসলে কী কারণে এখানে কোন রকম উদ্যোগই নিল না? এবং হিটলার- মুসোলিনির যৌথ মহড়া চলল যুদ্ধের প্রায় শুরু থেকেই, এই জিনিসগুলোর অর্থ কী? এই জিনিসগুলোও বিশ্বযুদ্ধ ঘটাতে ভূমিকা রেখেছে।
প্রথমদিকে যুদ্ধ ঘটেছে স্পেনে, সেখানে ছিল ডান (হিটলার এবং মুসোলিনির মদদপুষ্ট জাতীয়তাবাদীরা) এবং বামেরা, যার ছিল কিছুটা গণতন্ত্রঘেষা। স্পেন তখনো সত্যিকার অর্থে শিল্পসম্পদে সমৃদ্ধ হয়নি, উপনিবেশের টাকা দিয়েই তারা চলেছে যুগের পর যুগ। সেই সময়ে বামদের ঐ ধারণাই ছিল তাদের সেই সমাজের পক্ষে বিশাল অগ্রসর কিছু, যা হয়েছিল বেশ জনপ্রিয়। স্প্যানিশরা খুবই সংগ্রামশীল এক জাতি।
যুদ্ধে দুই পক্ষেরই ব্যপক রক্তপাত ঘটতে লাগল, এমনকি তারা পাদ্রীদেরও খুন করেছিল। সেই সময়ে আমার স্কুলের স্প্যানিশ শিক্ষকেরা যুদ্ধ নিয়ে বয়ান দিত, তারা ছিল জাতীয়তাবাদী, বা আরো শুদ্ধ করে বলে ফ্রাঙ্কোর সমর্থক। তারা আমাদের কানে ঘণ্টা বাজানোর মতো বলে যেত যুদ্ধে প্রজাতন্ত্রীদের তাণ্ডব, নৃশংসতা। কিন্তু তারা ফ্রাঙ্কোর সৈন্যদের গণহত্যা সম্পর্কে কিছু বলত না। আর স্পেনের গৃহযুদ্ধ ছিল ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায়, দুই পক্ষই শত্রুর শেষ দেখে নেওয়ার শপথ নিয়েছিল।
যুদ্ধ শেষের পর আমার এক শিক্ষক কত মানুষ যে ফ্রাঙ্কোর সেনাদের হাতে খুন হয়েছে তার বিশাল ফিরিস্তি দিতেন। যুদ্ধের সময় তিনি হাসপাতালের সাথে যুক্ত ছিলেন। তার কাজ ছিল ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে মারা হাজার হাজার মানুষের (কত হাজার কারো জানা নেই) দেহ পুঁতে ফেলার পূর্বে তারা জীবিত না মৃত তা পরখ করে দেখা। এই কাজ তাকে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে ফেলেছিল।
এখন পর্যন্ত আমি কেবল স্মৃতি ঘেঁটে কথা বলছি, পরে অবশ্য এই বিষয়টি নিয়ে অনেক পড়েছি কিন্তু এখানে বলছি সেই কৈশোরে আমি কী জানতাম ।
১৯৩৮ সালে এব্রোর যুদ্ধের পরপরই সব শেষ হয়ে যায়, সেই ঘটনা নিয়ে অনেক চলচ্চিত্র হয়েছে, লেখা হয়েছে অসংখ্য বই। কিন্তু খবরের কাগজ ১০ বছরের এক বালককে তখন দেখিয়েছিল কী করে যুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল।
আপনার কী মনে হয়, সেই ছোট্টকালে স্পেনের গৃহযুদ্ধ নিয়ে জানার আগ্রহ পরবর্তী জীবনে প্রভাব ফেলেছে?
অবশ্যই! আন্তর্জাতিক বিষয়ের একটা আলাদা গুরুত্ব থেকেই যায়। আর সব বালকই যুদ্ধ পছন্দ করে। আমিও সবার মতই সিনেমা বিশেষ করে ওয়েস্টার্ন এবং অন্যান্যগুলোতে মজে ছিলাম।
সেই সময়ে তারা তো ব্যপক বর্ণবাদী ছিল, বিশেষত রেড ইন্ডিয়ানদের ক্ষেত্রে?
আমরা তখন কাউবয়দের সমস্ত কিছুই মুগ্ধ হয়ে গিলতাম। যদিও খানিকটা বড় হবার পর সেই এক জিনিসকেই হাসির খোরাক হিসেবে দেখেছি- তাদের একজনের আরেকজনকে কাঁধের উপর দিয়ে ছুড়ে ফেলা, লাল হুইস্কির বোতল! সবকিছু আমার খুব মনে পড়ে, রিভলভারের গুলি কখনোই শেষ হত না, যদি না গল্পের প্রয়োজনে তা শেষ হবার দরকার হয়। সেই আমলে মেশিনগান না থাকলেও গোলাগুলির অভাব হত না আর ঘোড়ায় চড়ে পালানোর সময় কারো বুলেট শেষ হয়ে গেলে সে একটা গাছে ডাল ঠিকই পাকড়িয়ে ফেলত।
সব বালকেরাই এই সিনেমাগুলো দেখত। ছেলেরা জন্মের পরপরই হিংস্রতা দেখার জন্য হয়ত প্রস্তত থাকে। যাই হোক, যুদ্ধ সম্পর্কে এত এত খবর পড়ার পর সেই জানা জগত যেন পাল্টে গেল।
এর পরপরই শুরু হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
আমার মনে আছে ঠিক কোন দিন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর। তখন হয়ত আমি তের ছুঁয়ে ফেলেছি, এই নিয়ে অনেক পড়তাম। রুওরের দখল, অস্ট্রিয়ার সীমানা বাড়ানো, সুডেটেনল্যান্ডে জবরদখল, মলোটভ-রিবেনট্রপ চুক্তি, পোল্যান্ড আক্রমণ ইত্যাদি নিয়ে পড়লেও সবটা বুঝতাম না। যদিও সময়ের সাথে সাথে জেনেছিলাম প্রায় সবকিছুই।
মূল যুদ্ধসহ ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত কী কী ঘটেছিল তার প্রায় সবই মনে আছে, বিশেষ করে যখন জাপানে আণবিক বোমা ফেলা হল। এই বিষয় নিয়ে অনেক অনেক কথা বলতে পারি কারণ আমার আগ্রহ রয়েই গেছে সেই অধ্যায় নিয়ে। কিন্তু তারও আগে যখন কেবল স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি তখন শুরু হয়েছিল ইথিওপিয়ার যুদ্ধ।
ইথিওপিয়ার যুদ্ধের কথাও আপনার খেয়াল আছে?
আছে, সেই সময়ে ছোট ছোট বিস্কিট কিনলে পাওয়া যেত যুদ্ধের বিশেষ কার্ড, সেগুলোর নাম ছিল আবিসিনিয়ায় ইতালিয়ানরা!
তাহলে সেটিকে বলা হতো আবিসিনিয়ার যুদ্ধ?
সেই সময়ে তাই বলা হত। বিস্কিটগুলো কিনলে নানা ধরনের কার্ডের একটা সংগ্রহ গড়ে উঠত, যদিও কয়েক ধরনের কার্ডের দেখা প্রায় পাওয়ায় যেত না। আমার মনে হয়, কিছু কখনোই প্রিন্ট করা হয়নি, যাতে সেগুলো পাওয়ার লোভে বিস্কিট কিনতে কিনতে শিশুরা তাদের বাবা-মাকে ফকির বানিয়ে ফেলতে পারে!
সেই সমস্ত কার্ড সংগ্রহ করে তাদের নিয়ে খেলতে খেলতে বলা যায় আবিসিনিয়ার যুদ্ধ নিয়ে আমি ছোটখাট বিশেষজ্ঞ বনে গেছিলাম।
সান্তিয়াগো দ্য ক্যুবাতে থাকার সময়ে আমাদের সেই কার্ডের খেলা জমে উঠেছিল, জমা করা কার্ডের স্তুপ থেকে একটা আরেকটার উপর উড়িয়ে নিয়ে ফেলতে পারলে সেই কার্ডটির মালিক বনা যেত। কার্ডের চিহ্ন, বাতাসের গতি পরীক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে নিজস্ব কিছু কৌশল বাহির ক্রেছিলেম ফলে লাগাতার জিতেই যেতাম। কত কার্ড যে জিতেছিলাম তার লেখাজোখা ছিল না।
এখনো খুব স্পষ্ট মনে করতে পারি সেই কার্ডের রঙ এবং তাদের গায়ে ছাপানো চরিত্রগুলোর চেহারা, সব বালকেরাই সেই সেট সম্পূর্ণ করার জন্য চেষ্টা করেই যেত কিন্তু তা কোনদিন সম্ভব হয় নি।
সবসময়ই কিছু কার্ড বাকী থেকে যেত?
কিছু কিছু কার্ড কোনদিনই হয়ত ছাপা হত না, যাতে মানুষ সবসময়ই বেশি করে বিস্কুট কিনে যায় সেই বিশেষ কার্ড পাবার জন্য! ক্যাপিটালিজম! আমার নিজেরও কোন সম্পূর্ণ সেট ছিল না।
একদিন এক বালক এসে তার নেপোলিয়ান বোনাপার্টের চমৎকার একটা অ্যালবাম দেখায়, সেই বিস্কুটের কার্ডের মত পাতলা কার্ডবোর্ডে ছাপা নয়, অনেক দামী বিশেষ ধরনের কাগজে, ফলে সেগুলকে দেখতে অনেকটা আলোকচিত্রের মতই লাগে এবং তার সংগ্রহে ছিল সম্পূর্ণ সেট! সে আমার সাথে সেই অ্যালবামটি বিনিময় করতে চাইল, বদলে নিবে আমার সংগ্রহে সেই কয়েকশত কার্ড। সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম, নেপোলিয়নের সেও অ্যালবাম ছিল অনেকটা গুপ্তসম্পদের মতই! সেটি আমার সংগ্রহে এখনো আছে, এইতো কদিন আগেই ইয়সেবিও লিয়েল (ঐতিহাসিক) সেগুলো দেখে গেলেন।
তাহলে যুদ্ধ নিয়ে আপনি আসলেই উৎসাহী ছিলেন?
বাইবেলে কিন্তু বেশ কবার এমন নাটকীয় যুদ্ধ, নাটকীয় ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। স্কুল জীবনের শুরু থেকেই সেই তথাকথিত পবিত্র ইতিহাসের কাহিনী ক্লাসে পড়ানো হত- ব্যাবিলনের শাস্তি, ইহুদীদের দাসত্ববরণ, লোহিত সাগর অতিক্রম, জশুয়ার জেরিকোর দেয়াল ভাঙ্গা, স্যামসনের আসুরিক শক্তি, টেন কমান্ডমেন্ট, সোনার বৃষমূর্তিকে দেবতা রূপে পূজা করা- আমার মোনকাদা ব্যারাকে আক্রমণের জন্য বিচারে বলেছিলাম History will Absolve me , সেটি ছিল আসলে এক সোশ্যালিস্ট দর্শনের রূপক, এর মাধ্যমে আমি বলতে চেয়েছিলাম আমরা সোনার বৃষমূর্তিতে বিশ্বাস করি না। তবে সেই বিচার ছিল ১৯৫৩ সালের ঘটনা, আর আমরা এখন কথা বলছি
১৯৩৬ নিয়ে যখন আমার বয়স হয়ত ১০!
কিন্তু আবিসিনিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল স্পেনের যুদ্ধেরও আগে, তার মানে আপনার বয়স আরও কম ছিল?
ঠিকই, আবিসিনিয়ার যুদ্ধ খানিকটা আগেই শুরু হয়েছিল, তখন আমি সেকেন্ড গ্রেডে পড়তাম, বয়স ছিল মনে হয় ৯। আমি তো খানিক আগেই বললাম যুদ্ধ নিয়ে আগ্রহের কারণেই নেপোলিয়নের সেই অসাধারণ অ্যালবাম আমার সংগ্রহে এসে ছিল। সেগুলোর ছবি আমি বারংবার দেখতাম , বিশেষ করে আর্কোল যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহুতে যখন নেপোলিয়ন স্বয়ং পতাকা নিয়ে সেতু অতিক্রম করে সৈনিকদের উদ্দেশ্য আহ্বান করলেন- তোমাদের জেনারেলকে অনুসরণ কর! তা বিশ্বের যে কোনো বালককে অভিভূত করবে। সেখানে অন্যান্য যুদ্ধসহ নেপেলিয়নের জীবনের মূল ঘটনাগুলো প্রায় সবই ছিল, ছবির মাধ্যমে। সেটি ছিল এক অনন্য বিনোদন আর কয়েকজন নেতার আমি অন্ধভক্ত ছিলাম বিশেষ করে হানিবাল এবং আলেক্সান্ডারের ও সেইসব ব্যক্তিত্বের যাদের কথা স্কুলের ইতিহাসের বইতে লেখা থাকত।
বারবার মনে করতাম হানিবাল রোম জিতে নিলে বেশ হত, কিন্তু কেন এই সমর্থন তা বোঝা হয়ে ওঠেনি, হয়ত তার হাতির পিঠে চেপে আল্পস পর্বত অতিক্রমের কাহিনি ভাল লাগত, হয়ত উনি আন্ডারডগ ছিলেন তাই! স্পার্টানদের মাত্র ৩০০জন নিয়ে যুদ্ধের কাহিনিও খুব পছন্দ করতাম। বলতেই হবে, আমি এখন মনে করি সেই নেপোলিয়নের অ্যালবাম যে কোন ওয়াইল্ড ওয়েস্ট চলচ্চিত্রের চেয়ে অনেক অনেক গুণ ভাল ছিল।
আপনি যোদ্ধা ও সেনাপতিদের পছন্দ করতেন?
সব ছেলেরাই করে! এটি শুরু হয় ধর্মের ইতিহাস দিয়ে। ওল্ড টেস্টামেন্টে এমন জিনিসে ভরা- নূহের নৌকা, বন্যা, ৪০ দিনের একটানা বৃষ্টি, এবং জেনেসিসে বলা হয়েছে বন্যার পরে নূহ আঙ্গুরের বাগান তৈরি করে, আঙ্গুর থেকে ওয়াইন তৈরি করে একদিন মাত্রাতিরিক্ত পান করে মাতলামি করায় তার এক বংশধর তাকে উপহাস করেছিল। এত নূহ ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেয়, ফলে সে দাসে পরিণত হয় এবং গায়ের চামড়া হয়ে যায় ঘোর কৃষ্ণবর্ণের।
বাইবেলের এইখানে আমার মনে হয় চার্চের সংশোধন আনতে হবে, কারণ এই ঘটনায় মনে হচ্ছে কালো হওয়া ঈশ্বরের পক্ষ থেকে এক ধরনের অভিশাপ! যেমন নারী হওয়াও অভিশাপ এবং শাস্তি।
আপনি ক্যাথলিক চার্চকে এই ব্যাপারে বাইবেল সংশোধন করতে বলছেন?
আমি বলছি না চার্চকে এই বিশ্বাসের ব্যাপারে বইয়ের কথা পরিবর্তন করতে হবে কিন্তু পোপ ২য় জন পল অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে বলে গিয়েছিলেন বিবর্তনের তত্ত্ব কিন্তু সৃষ্টিতত্ত্বের শত্রু নয়।
আমি অনেক সময়ে বিশপ এবং কার্ডিন্যালদের সাথে কথা বলেছি এই ব্যাপারে। এইখানে মূল বিষয় দুইটা, আমি বিশ্বাস করি যে সংগঠন ২০০০ বছর ধরে তাদের কর্ম এবং প্রচার চালিয়ে আসছে তারা অবশ্যই নারীদের সমতা দিবে, নারীদের সমস্ত পাপকাজের হোতা হিসেবে অপরাধী বলে মনে করবে না। এবং কালো হওয়া যে অভিশপ্ত এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসবে।
আপনিও নিজেও প্রথম বিদ্রোহ বাবার সাথেই করেছিলেন তাই না?
আমি আসলে বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিনি, তার মত একজন সহৃদয় মানুষের সাথে এটি করা সম্ভবও ছিল না। আমি কতৃপক্ষ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়েছিলাম।
আপনার কর্তৃত্বপরায়ণতা ভাল লাগে না?
এটির পেছনে অবশ্যই ইতিহাস আছে। এমনি এমনিই দশ-বারো বছর বয়সে এটি হঠাৎ করে আসেনি, কারণ এর অনেক বছর আগেই হয়ত ছয় অথবা সাত বছরেই সেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল।
আপনার শৈশবের আর কোন স্মৃতি বেশি দোলা দেয়?
অনেক কিছুই মনে পড়ে, তাদের মাঝে কিছু কিছু ঘটনা অবশ্যই আমার মানসিক গড়নের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু আমার শৈশবে মৃত্যু কোনো কালো আঁচড় রেখে যায়নি, যদিও আমার এক খালা, আন্তোনিয়া, সন্তান প্রসবের সময় মারা যান, তখন আমার বয়স তিনও হয়নি কিন্তু পরিবারের সবার মাঝে সেই গাঢ় বিষাদ মনে পড়ে। তিনি মায়ের বোন ছিলেন এবং তার স্বামী, সোতো, বাবার সাথে বিরানে কাজ করতেন। বাড়িতে ঢোকার আগ পর্যন্ত সেই ছোট নোংরা রাস্তা ধরে মহিলাদের কান্নাকে সঙ্গী করে হাঁটার কথা মনে পড়ে, কিন্তু এর মূল কারণ ধরতে না পারায় সেই ঘটনা আমার ওপর এমন কোনো প্রভাব ফেলেনি, মৃত্যু সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না।
প্রথমবারের মত বাস্পশকট দেখার কথাও খুব মনে পড়ে। এর বিশাল চাকা, প্রচণ্ড গর্জন, প্রবল শক্তি, তীক্ষ হুইসেল- সব মিলিয়ে ছিল দর্শনীয় এক জিনিস। তারা আঁখ তোলার জন্য আসত, আর আমি ভেবেছিলাম বিশালাকার দৈত্যসব!
৭ বা ৮ বছর বয়সে প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় অনেককে বারবেরান এবং কোল্লারের ফ্লাইট নিয়ে কথা বলতে শুনি। তারা ছিলেন দুজন স্প্যানিশ বৈমানিক যারা আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে মেক্সিকোর দিকে যাচ্ছিল। স্থানীয়রা বলত, তারা নিশ্চয়ই বিমানের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে। যদিও বিমানযাত্রা শেষে তাদের কোনো খবর পাওয়া যায়নি, আজো মানুষেরা তর্ক করে তাদের সাগরে পতিত হবার সম্ভাব্য স্থান নিয়ে। কিন্তু এই অসমসাহসী দুইজন মানুষ, যারা একরত্তি বিমানে চড়ে মহাসাগর অতিক্রমের সাহস দেখিয়েছিল, তাদের আর কোন চিহ্নই মিলেনি। সেই ছোট্ট আকাশযানে তারা কয় ট্যাঙ্ক জ্বালানি নিয়েছিল তা আমার কল্পনায় ধরে না, কারণ সেই যুগে জ্বালানি নেবার একটা উপায়ই ছিল। তার স্পেন থেকে রওনা দিয়ে আটলান্টিককে পরাভূত করে কিউবায় অবতরণ করে। এবং কিউবা থেকে মেক্সিকোর উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে এবং উধাও হয়ে যায়।
শিশুকাল থেকেই হারিকেন, সাইক্লোনের সাথে বড় হয়েছি, চার-পাঁচ বছর বয়সের এক প্রবল ভূমিকম্পের স্মৃতি মনে খুব দাগ কেটে গেছিল, আমাদের সারা বাড়ি পেকে যাচ্ছিল তাতে, ভিতরের সবগুলো প্রাণীসহ! প্রকৃতির এই জিনিসগুলো নিঃসন্দেহে আমার ভিতরে কোনো না কোনো চিহ্ন রেখে গেছে।
আর কী কী জিনিস আপনার ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে?
একটি বিশেষ সুবিধা এবং এক টুকরো ভাগ্য। আমি একজন জমিদার স্থানীয় লোকের পুত্র হিসেবে জন্ম নিয়েছিলাম, নাতি হিসেবে নয়! যদি একটি ধনী পরিবারের নাতি হিসেবে জন্মাতাম তাহলে সোনার চামচ মুখ থাকত প্রথম থেকেই, আমার বন্ধু, বেড়ে ওঠা সব কিছুর মাঝেই অন্যদের চেয়ে বড় এই জিনিসটা থাকত। কিন্ত আমি জন্ম নিয়েছিলাম সেই ক্ষণে এবং স্থানে যেখানে সবাই ছিল দরিদ্র, খামারের শ্রমিকরা । কিংবা আমার নিজের পরিবার, মায়ের দিক থেকে ছিল অতি দরিদ্র, বাবার চাচাতো ভাইয়েরা, যারা গালিসিয়া থেকে এসেছিল ছিলেন দরিদ্র, এবং বাবার দেশের পরিবারও ছিল দারিদ্র্য জর্জরিত।
কোনো সন্দেহ নেই যে জন্মস্থানটিই আমার উপরে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে, যেখানে আমি বড় হয়েছিলাম সমাজের সবচেয়ে নিচু স্তরের চমৎকার মানুষগুলোর সাথে। সেই বেকার নিরক্ষর লোকটার কথা মনে পড়ে যে আঁখ ক্ষেতের ধারে কাজের সন্ধানে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থাকত, খর তাপে তার জন্য এক গ্লাস জল বা মাথার উপরে একটু ছায়ার ব্যবস্থা কেউ করত না, মিলত না নাস্তা, দুপুরের খাবার বা কোন পরিবহন।
সেই নগ্ন পায়ের বাচ্চাদের কথা কিছুতেই ভুলতে পারি না যারা ছিল আমার খেলার সাথী। যাদের সাথে আমি বেড়ে উঠেছি তাদের সবাইই ছিল দারিদ্রের সন্তান। মাঝে মাঝে আমি পরিবারের উদ্বৃত্ত খাবার একটা বড় পাত্রে করে সবার জন্য নিয়ে যেতাম। নদীর তীরে ঘুরতাম আমরা, পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ার পিঠে, সাথে কুকুর ছিল, সবখানেই ঘুরতাম, খামোখায় পাথর ছুড়তাম, পাখি শিকার করতাম ( খুবই জঘন্য একটা কাজ ছিল যা কিনা গুলতির মাধ্যমে করা হত)।
কিন্তু পরবর্তীকালে সান্তিয়াগোতে এবং হাভানাতে আমি বিশেষ ধরনের স্কুলে পড়ার সুবিধা পায় যা সাধারণত ধনীদের জন্যই বরাদ্দ ছিল।
তাহলে তাদের সাথে বাসও করতেন?
তারা সকলেই ছিল ধনী মানুষের সন্তান। তারা আমার স্কুল বন্ধু ছিল, আমরা একসাথে খেলতাম কিন্তু সত্যিকার ভাবে কোন অভিজাত এলাকায় তাদের সাথে বসবাসের অভিজ্ঞতা আমার ছিল না।
স্কুলে আমাদের কাজই হয় খেলা, না হয় পড়া, আর ঘোরাঘুরির বাহিরে কিছু ছিল না। আমি নানা ধরনের খেলায় উৎসাহী ছিলাম আর সেই সাথে পর্বতারোহণ করতাম, চমৎকার শখ এগুলো।
সমুদ্র সৈকতে কাছে এক জায়গায় সাঁতারের জন্য নানা পাম গাছ ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল হাঙরের ভয়ে! হাঙর খুবই বিপদজনক ছিল তবে অতটা নয়, মানুষ যতটা ভাবে। আর সেখানেই ছিল ঝাঁপ দেবার জন্য ডাইভিং বোর্ড, তিনটা! আমার হয়ত একজন ডাইভার হতে পারতাম, কারণ মনে পড়ে প্রথমবার সেখানে গিয়ে খানিকটা অন্যদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবার জন্যই তরতর করে সবচেয়ে উঁচু বোর্ডটিতে যেতে দিলাম এক ঝাঁপ! তাও ভাল, ঝাঁপ দেবার সময়ে পা নিচের দিকে রেখেছিলাম, মাথা নয়! বোর্ডটি আসলেই বেশী উঁচুতে ছিল আর আমি বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে ঝাঁপিয়ে পড়লাম!
সাঁতার জানা ছিল?
বিরানের যাদের সাথে সারাদিন টো টো করে বেড়াতাম তাদের সাথেই সেখানের পুকুরে আর নদীতে সাঁতার শেখা হয়ে গিয়েছিল, যদিও নিচের বয়স তখন কত তা আর মনে নেই।
আপনার সেই বন্ধুরা, দরিদ্রের সন্তানেরা?
হ্যাঁ, আমার বন্ধুরা, আমার খেলার সাথীরা। আসলে বুর্জোয়া সংস্কৃতি আমার ভিতরে আসেনি, কারণ বাবা ছিলেন অত্যন্ত বিচ্ছিন্ন একজন জমিদার। তারা প্রায় কোন সময়ই অন্যদের বাড়িতে বেড়াতে যেত না, এবং আমাদের বাড়িতেও অতিথি ছিল বেশ বিরল। ধনিক শ্রেণীর রীতিনীতি বা সংস্কৃতি তাদের মাঝে ছিল না। কাজের মাঝেই ডুবে থাকতেন সবসময়। আর আমাদের মেলামেশা ছিল সেই মানুষগুলোর সাথেই যারা বিরানের বাসিন্দা।
আপনার খেলার সাথীদের মাঝে কোনো কৃষ্ণাঙ্গ বালক ছিল?
আমাদের পরিবারে কোন সময়ই বলা হয় নি- ঐ ছেলের সাথে খেলা যাবে না, বা ওর সাথে মিশবে না। কখনোই না।
আমি প্রায়ই সেই কুঁড়ে ঘর আর সবচেয়ে হতদরিদ্র ছাউনিগুলোর দিকে যেতাম যেখানে হাইতিয়ানরা বাস করত। তবে এইজন্য পরে আমাকে শাসনের মুখোমুখি হতে হয়, না সামাজিক কারণে নয়, স্বাস্থ্যগত কারণে, কারণ আমি তাদের ওখানে সেদ্ধ ভুট্টা খেতে যেতাম! বাবা-মা আমাকে বলেন এমন করতে থাকলে তারা আমাকে সংশোধনাগারে পাঠাবেন।
বিদ্রোহের জন্য?
বাবা-মা শুধু বলতেন- তুমি যদি হাইতিয়ানদের ঐখানে সেদ্ধ ভুট্টা খাও তাহলে সংশোধনাগারে পাঠানো হবে। এছাড়াও অন্যান্য কারনেও আমাকে একাধিকবার সেই হুমকি দেয়া হয়েছিল।
যখন আমি বিশ্ব সম্পর্কে জানতে-বুঝতে শুরু করি, তখন থেকেই জানি গ্রামের সেই শৈশবই ছিল আমার সেরা স্কুল। সেই অঞ্চল ছিল স্বাধীন।
তবে পরে, একজন ধনীর ছেলে হিসেবে শোষণেরও শিকার হয়েছিলাম।
কী রকম?
বিরানের সেই স্কুলে আমার শিক্ষা জীবন শুরু হয়, যেখানে আমার এক বড় বোন এবং বড় ভাই, অ্যাঞ্জেলিতা ও র্যামন, পড়ত। যদিও আমার তখনো উপযুক্ত বয়স হয়নি কিন্তু তারা আমাকে সাথে নিয়ে যেয়ে সবচেয়ে সামনের বেঞ্চে বসিয়ে দিত। সেখানে ২৫ জনের মত ছাত্র ছিল, প্রায় সবাইই অতি দরিদ্র ঘরের। আমার ঠিক জানা নেই কি করে লিখতে শিখলাম, তবে সম্ভবত অন্য বাচ্চাদের দেখে দেখে, যেহেতু আমাকে প্রথম সারিতে বসতে বাধ্য করা হত। মনে হয় সেটা ছিল ১৯৩০ সাল
আপনার বয়স তখন ৪ বছর?
চার বছর বয়স! আমি অন্যদের দেখে ততদিনে পড়তে এবং অল্প বানান করতে শিখেছি, শিক্ষক যখন বোর্ডের চক দিয়ে কিছু বোঝাতেন দেখা গেল আমি খেলাতে মগ্ন, জমিদারনন্দন যেমন হয় আর কি! শিক্ষক সবসময়ই আমাদের বাড়ীতে আসতেন কারণ তার খাবার ব্যবস্থা ছিল আমাদের সাথেই। আর স্কুলে ছিল সাজার ব্যবস্থা। মাঝে মাঝেই বেতের আঘাত, মেঝেত নিলডাউন হয়ে থাকা, এর সাথে সাথেই সেখানেই পয়সা বা ভুট্টার দানা ছিটিয়ে দিত।
তার উপরে উবু হবার জন্য?
তাই-ই তো! স্কুলের সেই শারীরিক অত্যাচারের কথা খুব মনে আছে, যদিও তা প্রতিদিন হত না, এগুলো আসলে ছিল আমাদের ভয় দেখানোর একটি রাস্তা।
শারীরিক অত্যাচার?
সেই সময়ে আমি মারাত্মক প্রতিবাদী হয়ে উঠেছি, এটার পেছনে অবশ্য বিশদ কারণ আছে। আপনি চাইলে সেগুলো পরে বলে যাবে, তবে সেই জিনিসগুলোই আমাকে একজন বিপ্লবী হিসেবে গড়ে তুলেছে। খুব কম বয়সেই আমাকে নিজের সমস্যার সমাধান করতে হয়েছে, যার জন্য অন্যায় ও অবিচারের বোধ বুঝতে পেরেছি তখন থেকেই। কিন্তু এই ব্যাপারে আমার এখন কথা বলছি নি, আর এই নিয়ে আপনি আগ্রহীও হবেন না।
আমি খুবই আগ্রহী!
পরে হয়ত সেরকম কিছু ঘটনা বলতে পারব। কিন্তু যে ঘটনা নিয়ে আমরা কথা বলছি তা হচ্ছে কী কারণে আমি একজন বিপ্লবীতে পরিণত হলাম? একজন ধনী লোকের পুত্র হওয়া সত্ত্বেও কোন কোন জিনিস আমার জীবনে প্রভাব বিস্তার করল? এবং সেটি এই বিষয় বাদে যে বাচ্চারা কিন্তু আত্নকেন্দ্রিক, বাচ্চারা নিরর্থকও এবং
তারা সামাজিক অবস্থান বুঝতে পারে?
বিরানের সেই ক্ষুদে স্কুলে আপনিই ছিলেন এক ধনী মানুষের সন্তান?
আমার ভাইবোন বাদ দিলে আমি একাই। সেখানে আর কেউই ছিলনা যার অপেক্ষাকৃত ধনী ছিল বা একটি দোকানের মালিক ছিল। অন্য স্কুল সাথীদের বাবা-মা ছিলেন শ্রমিক, হয়তবা কেউ কেউ খুবই অল্প পরিমাণ জমিও মালিক ছিলেন। কিন্তু সেই সন্তানেরা ছিল দারিদ্রসীমার সবচেয়ে নিচে বাস করা ভয়াবহ দরিদ্র ঘরের ছেলেমেয়ে।
আপনাকে সান্তিয়াগো পাঠানোর সিদ্ধান্ত কি বাবা-মা নিয়েছিল যাতে অন্য ধরনের সমাজের সাথে ওঠাবসা শুরু হয়?
না, এমন চিন্তা মনে হয় তাদের মনে ঠাই পায় নি। ছয় বছর বয়সে তারা মাকে সান্তিয়াগো পাঠিয়ে দেন কারণ স্কুল শিক্ষক তাদের বলেছিলেন আমি খুবই ভাল একজন ছাত্র। সেই সাথে বিরানের সেই শিক্ষিকা যার নাম ছিল ইউফ্রেসিয়া ফেলিউ, তার সান্তিয়াগোর বাড়ীতে আমার বোন অ্যাঞ্জেলিকা ( যে ছিল আমার ৩ বছর ৪ মাসের বড়) থাকবে। যদি আমার বয়স ছয় হয়ে থাকে তার বয়স হয়ত দশ ছুঁই ছুঁই। তার সাথে সাথে আমাকেও সেই শহরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হল। প্রথমে এই খবর শুনে কৌতূহলের আতিশয্যে মাথা ঘুরতে থাকল, মহাআনন্দের সাথে চলে গেলাম সান্তিয়াগো।
খামারবাড়ি থেকে সরাসরি সান্তিয়াগোর মত শহর দর্শনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
বর্তমান সময়ের তুলনায় তখনো সান্তিয়াগো ছিল খুই ছোট্ট এক শহর, যদিও আমার মনের উপরে এর প্রভাব ছিল বিশাল। মনে হয়ে ছিল বিশাল এক মহানগরীতে আসলাম, অনেকটা একই অনুভূতির সাথ পরিচিত হয়েছিলাম ষোল বছর বয়সে প্রথমবারের মত হাভানা যেয়ে। রাজধানী হাভানা চার-পাঁচ তলা ভবনগুলো নিজের কাছে দানবীয় মনে হত। সেই তুলনায় সান্তিয়াগোর প্রায় সবই বাসভবনই ছিল এক তলা। তাই হাভানা দর্শনও মনের উপরে গভীর মুগ্ধতার ছাপ ফেলেছিল। যদিও ছয় বছর বয়সে সান্তিয়াগোতে আমি প্রথম বারের মত খোলা বিস্তৃত দিগন্তছোঁয়া সমুদ্র দেখি। সারাজীবন পাহাড়ি এলাকার গ্রামে কাটিয়ে সেই অসীম সমুদ্রের রূপ আমাকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল।
সান্তিয়াগোতে শিক্ষকের বাড়ি কেমন ছিল?
তিভলি এলাকায় অবস্থিত এক কাঠের বাড়ি। দরিদ্র এলাকায় সরু, স্যাঁতস্যাঁতে, আঁধারে ঢাকা খুবই ছোট এক বাসভবন যেখানে ছিল ক্ষুদে বসার ঘরে একটি পিয়ানো, দুটি শোবার ঘর, একটি স্নানের ঘর এবং সিয়েরা মায়েস্ত্রা পর্বতের অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায় এমন এক বারান্দা। উপসাগরটি ছিল বাড়ীর বেশ কাছে।
কাঠের দেয়ালের এবং ভাঙ্গাচোরা টালির ছাদের বাড়িটার সামনে ছিল ধুলোময় এক প্লাজা, গাছের অস্তিত্ব চোখ পড়ত না। প্রতিবেশী বাড়িগুলো সবই ছিল এক কামরার। পাশের ব্লকে একটি দোকানে নারকেলের মিষ্টি পাওয়া যেত, যা আসলে বাদামি চিনির তৈরি। সেইখানের বেশ বড় একটি বাড়ির কথা মনে পড়ে যার মালিক ছিল ধনী ইদি, লোকে বলত ইদি দ্য মুর। সেই বাড়ীর পিছনেই স্কুল। সেখানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এখনো মনে দাগ কেটে আছে। এক সময় সৈন্যরা সারা স্কুল দখল করে রেখেছিল কারণ স্কুলের বস ছাত্ররা ছিল মাচেদোর ( কিউবার স্বৈরাচারী শাসক) বিরুদ্ধে। সেই দখল সময় সৈনিকদের রাইফেলের বাট দিয়ে এক পথচারীকে পিটাতে দেখি, মনে হয় সে সৈন্যদের উদ্দেশ্যে কিছু বলেছিল। সেখানে বাস করার সুবাদে ঘটনাগুলো চাক্ষুষ দেখা হয়েছিল।
তখনকার বাতাসে কেমন যেন একটা উৎকণ্ঠা ঘুরে বেড়াত, সৈন্যরা ইচ্ছামত পথচারীদের দার করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করত। অ্যান্তোনিও নামের বিরানের একজন মেকানিককে গ্রেফতার করা হয়। শুনেছিলাম সে নিজেকে কম্যুনিস্ট বলে দাবী করার কারণে এই গ্রেফতার পর্বটি ঘটে। তার স্ত্রী কারাগারে স্বামীকে দেখতে যাবার সময় আমাকেও সাথে নিয়ে যেত। অ্যালামেদা এলাকার শেষ প্রান্তে ছিল সেই ধূসর, অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গা, অকল্পনীয় নোংরা ছিল তার ক্ষয়ে যাওয়া দেয়ালগুলো। সেখানকার জেলার, গরাদ, বন্দীদের চেহারা মনে হলে বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে।
সান্তিয়াগোর সেই ক্ষুদের বাড়ীতে বৃষ্টি হলেও ছাদ দিয়ে জল ঢুঁকে সবাইকে ভিজিয়ে ছাড়ত, এক হিসেবে বাহিরের চেয়ে ভিতরেই বৃষ্টির বেশী তান্ডব অনুভব হত। ছাদের ছিদ্রগুলোর নিচে তারা বালতি দিয়ে রাখত জল ধরার জন্য। ক্লেদময় জায়গাটিই ছিল আমাদের নতুন বাসস্থান। তারই এক ছোট কামরায় বেঁকে যাওয়া পুরনো খাটে থাকতেন শিক্ষিকার বাবা , নেস্টর। পাশের কক্ষে তার আরেক বোন, বেলেন, থাকতেন। বেলেন ছিলেন পিয়ানিস্ট এবং সহৃদয় একজন মানুষ, কোন তার কোন ছাত্র ছিল না।
সেখানে কি বিদ্যুৎ ছিল?
ছিল কিন্তু ব্যবহার করা হত খুব কম। তেলের বাতিরই প্রচলন ছিল মূলত, যেহেতু তাতে খরচ কম পড়ত।
কতজন বাসিন্দা ছিল বাড়িটিতে?
প্রথমে সেখানে ছিল তিন বোন, তাদের বাবা-মা ছিল হাইতির, অবশ্য তারা স্কুল ফ্রান্সে না হাইতিতে ছিল তা আমার জানা নেই। তাদের একজন হলেন স্কুলের শিক্ষিকা, একজন পিয়ানর শিক্ষক , শেষের জন্য ডাক্তার, আমরা সেখানে যাবার কিছুদিন পূর্বে তার মৃত্যু হয়। মা ছিল না, বাবার সাথে উনারা দুই বোনই থাকতেন। সেই সাথে আমি এবং অ্যাঞ্জেলিকা, সব মিলিয়ে পাঁচ জন। বিরানের শিক্ষিকাও ছুটিতে বাড়ি আসতেন। পরে তারা গৃহস্থালির কাজকর্ম করার জন্য এসমেরিদাকে নিয়ে আসে, যদিও তাকে এক পয়সাও বেতন দেওয়া হত না, এই নিয়ে ছিলাম ছয় জন। পরে র্যামন বেড়াতে আসলে আমি তাকে থাকত রাজি করাই, তাহলে শিক্ষিকা বাড়ীতে আসলে আমরা মোটমাট সাত জন ছিলাম। এক পাত্র থেকেই আমরা সেই পাঁচ বা ছয় বা সাত জন মানুষ খেতাম।
কোন সময়ের কথা এইগুলো?
ম্যাচাদোর শাসনের সময়ের কথা, সারা দেশে তখন দুর্ভিক্ষের ছোঁয়া। আসলে অন্যসব কারণ বাদেও ম্যাচাদোর পতন মানুষে ক্ষুধার কারণেই হয়েছিল। আরকিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার জন্মলগ্ন থেকেই তেমন ব্যবস্থা চালু করেছিল যাতে দ্বীপদেশটি পণ্য উৎপাদনে স্বাবলম্বী না হয়ে তাদের কাছ থেকে আমদানির উপরে নির্ভর থাকে। তারা কিউবার কাছ থেকে চিনি কিনলেও তা ছিল বাজারদরের সর্ব নিম্ন দামে, আর ১৯২৯ সালে তারা সেই চিনি রপ্তানি উপরেও কোটা আরোপ করে, ফলে উপার্জন কমে যেয়ে অর্থনীতির অবস্থা আরও ভঙ্গুর হয়ে যায়, ক্ষুধার বীভৎস চেহারা দেখা যায় সারা দেশজুড়ে।
সেটি অর্থনৈতিক মন্দা এবং রাজনৈতিক শাসনের কাল ছিল। ম্যাচাদো তার জাতীয়তাবাদী কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে অনেক মানুষের সমর্থন নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিল। সে মানুষের জন্য চাকরি ক্ষেত্রে এবং শিল্প কারখানা গড়ে তুলেছিল কিন্ত এত বেশী কতৃত্বপরায়ণ ছিল যে শীঘ্রই দমনের রাজনীতি দেখা দেয় সারা কিউবাতে। বিশেষ করে ছাত্ররা তার বিরুদ্ধে ছিল, হুলিও আন্তোনিও মেইয়া, যিনি মাত্র বিশ-একুশ বছর বয়সে কম্যুনিস্ট পার্টি স্থাপন করেন, ছাত্রদের, খেটে খাওয়ায় শ্রমিকের, সর্বোপরি জনসাধারণের জন্য অফুরান ত্যাগের এবং আদর্শের প্রতীক ছিলেন। তিনি মেক্সিকোতে খুন হয়ে যান ম্যাচাদোর হুকুমে।
মেইয়া ছিলেন একজন অসাধারণ দ্যুতিময় তরুণ, হোসে মার্তির পরে কিউবার ইতিহাসের অন্যতম প্রাণপুরুষ। সেই সময়েই তিনি শ্রমিকদের জন্য একটি বিশ্ব- বিদ্যালয়ের কথা বলেছিলেন। ছাত্ররা ইতিহাসের এবং প্রিয় মানুষদের উপরে তার দেওয়া ভাষণ শুনতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিড় করত। তার আগেই বিখ্যাত বলশেভিক বিপ্লব ঘটেছিল ১৯১৭ সালে, কোন সন্দেহ নেই সেই বিপ্লবের সাফল্য এবং আদর্শ ব্যপক আলোড়িত করেছিল তরুণ মেইয়াকে, আর মার্তি ছিলেন তার আদর্শ। তাই মার্তির মার্ক্সবাদী বন্ধু কার্লোস বালিনিওর সাথে তিনি কিউবার প্রথম কম্যুনিস্ট পার্টি স্থাপন করেন।
১৯৩৩ সালে ম্যাচাদোর পতন ঘটে, তাই না?
১৯৩৩ সালের আগস্তের তার পতন হয়, আর সেপ্টেম্বর থেকেই সার্জেন্ট আপরাইজিং শুরু হয়, আমি কেবল সাতে পা দিয়েছি। সার্জেন্টরা ম্যাচাদোর অফিসারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, সবাই আণ্ডারগ্রাউণ্ড থেকে বেড়ীয়ে আসে, তাদের মাঝে বামপন্থীরা যেমন ছিল, তেমচনি ছিল ডানেরাও, কেউ কেউ আবার মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী ধারণা নিয়েই পরিচালিত হত, আসলে সেখানে সব মতবাদের অল্পসল্প ভাগ ছিল।
বিশ্ব-বিদ্যালয়ের ছাত্ররা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের জন্য একটি সঙ্ঘ গড়ে তোলে, যার সদস্যদের মাঝে অনেক বিখ্যাত প্রফেসরও ছিলেন। তাদের মাঝ থেকেই র্যামন গ্রাউ স্যান মার্টিন নামের একজন দেহতত্ত্বের প্রফেসের কিউবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ম্যাচাদোর পতনের তিন সপ্তাহ পরে তার সরকারে অ্যান্তোনিও গুতিয়েরেজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ছিলে একজনের সত্যিকারের সাহসী তরুণ, যে বিশাল সাহসের পরিচয় দিয়ে সান লুইয়ের সেনা ব্যারাকের পতন ঘটিয়েছিল। ম্যাচেদোর বিরুদ্ধে স্বশস্ত্র সংগ্রামে তিনি সবসময়ই অনমনীয় ছিলেন।
অ্যান্তোনিও গুতিয়েরেজ?
উনিই প্রথমবারের মত কিউবাতে কিছু আইনের প্রচলন করেন যা মানুষের চিন্তার বাহিরে ছিল। শ্রমিকদের জন্য দিনে আট ঘণ্টার কাজের নিয়ম ছাড়াও নানা ধরনের ইউনিয়ন, সিণ্ডিকেট এমন কিছু প্রচলনের সাথে সাথে তিনি টেলিফোন কোম্পানিসহ অন্যান্য মার্কিন ব্যবসাকে একই আইনের আওতায় আনেন।
আসলে সেই আইনগুলো প্রণয়নের মাধ্যমে তারা কিউবান শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছিলেন, যাতে স্প্যানিশ ব্যবসায়ীরা তাদের অন্যায্যভাবে ব্যবহার না করতে পারে, এবং তারা যেমন স্পেন থেকে তাদের আত্মীয়দের যথেচ্ছ নিয়োগ না দিয়ে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান করে। যদিও এই আইন জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যই করা হয়েছিল কিন্তু হাইতিয়ান অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য তা বেশ ক্ষতির কারণ হয়েই দাঁড়িয়েছিল।
রাষ্ট্রপতি প্রফেরস গ্রাউ স্যান মার্টিনের মেয়াদ শুরু আগে মূলত সরকার চলছিল পাঁচ নেতার একটি কমিটির সমন্বয়ে, সেই তিন মাসেই তারা এই সমস্ত আইন প্রণয়নে সক্ষম হয় এবং এর মাঝেই মার্কিনীরা তাদের রাষ্ট্রদূত সুমনের ওয়েলেসের মাধ্যমে বাতিস্তাকে তাদের সুবিধার জন্য ক্ষমতার টোপ দেয়। অথচ তখন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ল্যাতিন আমেরিকার জন্য তার বিখ্যাত সহৃদয় প্রতিবেশী নীতি প্রচার করছিলেন!
যদিও ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক বিশাল সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছিল, যা কিনা বিশ্ব জুড়ে চলা অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়- সেই নীতি ছাড়া আমি মনে করি ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে চমৎকার রাষ্ট্রপতিদের একজন। স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে আমি থাকে খুবই পছন্দ করতাম, তার কাজ খেয়াল করতাম। অসুখে কারণে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছিলেন কিন্তু তার মন মাতানো কণ্ঠে ভাষণগুলো ছিল খুবই আকর্ষণীয়।
রুজভেল্ট হয়ত কিউবার মানুষের আকাঙ্খার মূল্য দিতেন এবং তিনি নিশ্চিতভাবেই ল্যাতিন আমেরিকার সাথে ভাল সম্পর্ক স্থাপনের আগ্রহী ছিলেন। দূরদর্শী এই মানুষটি হিটলারের ক্ষমতায় আগমন দেখেই কিউবার সাথে ভূখণ্ড ব্যবহারের জন্য নতুন চুক্তি করেন, আগের দখলদারি ব্যবস্থা বাতিল করে আইল্যান্ড অফ ইয়ুথ কিউবার কাছে ফিরিয়ে দেন।
সেটি তো মার্কিন মিলিটারিরা ব্যবহার করত?
১৮৯৮ সাল থেকে সেটি তারা দখল করে ছিল ।
তাহলে কিউবার সরকার সেটিকে পরিচালনা করত না?
না। প্ল্যাট অ্যামেন্ডমেন্ট নামের এক দখলদারী নিয়ম করে তারা এটি সম্পূর্ণ দখলে রেখেছিল। সেটা আমরা ফেরত পেলাম কিন্তু গুয়ানতানামো এখন মার্কিনদের দখলেই আছে। সেই নিয়মের ফলে মার্কিনীরা চাইলে কিউবার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে পারে।
প্ল্যাট অ্যামেন্ডমেন্ট সাক্ষরিত হয়েছিল ১৯০২ সালে?
এটি ১৯০১ সালে প্রয়োগ করা হয় এবং ১৯৩৪ পর্যন্ত কার্যকরী ছিল, বাতিলের দিনটি ঠিক মনে নেই।
গুতিয়েরেজ সরকার মাত্র তিন মাস টিকেছিল, এরপর বাতিস্তা ক্ষমতা দখল করে নিল। ১৯৩৫ সালে গুতিয়েরেজ গুপ্তহত্যার শিকার হন, তিনি মেক্সিকোতে যেয়ে একটি বাতিস্তা বিরোধী আন্দোলন গড়ার চিন্তা করছিলেন, মেইয়ার মতই, এবং আমরাও একই কাজ করেছিলাম।
১৯৩৩ সালের সেই সময়ে বেশ কিছু রক্তাক্ত সংঘর্ষ হয়ে ছিল, ম্যাচাদোর কিছু মিলিটারি সমর্থক হাভানার হোটেল ন্যাশনালে আশ্রয় নেয়, যাদের মাঝে কয়েকজন বেশ দক্ষ মার্কসম্যান ছিল। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে তাদের সকলকেই খতম করে সার্জেন্টের দল।
এছাড়াও একদল ফ্যাসিবাদী দল ছিল এবিসি নামে পরিচিত, এরা পুলিশ ষ্টেশন দখল করে এবং নানা স্থানে লড়াইতে জড়িয়ে পড়ে। সবকিছুই ছিল প্রগতিবাদী সরকার এবং গুতিয়েরেজের করা আইনের বিপক্ষে।
বাতিস্তা সেনাবাহিনীর মাঝে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়, একসময়ে এটি তার পোষাবাহিনীতে দাঁড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের চাপে সে সরকার পরিবর্তন করে নতুন রাষ্ট্রপ্রধানকে নিয়োগ দেয়। বাতিস্তা কর্নেল খেতাবে ভূষিত হয়, তার সার্জেন্টরা তার মাধ্যমেই লেফটেনেন্ট কর্নেল র্যামঙ্ক পাই, সেখানে কোন জেনারেল ছিল না। বাতিস্তা নিজের খেয়াল খুশি মতো অধীনস্থদের ক্যাপ্টেন, লেফটেনেন্ট, লেফটেনেন্ট কর্নেল, কমানদান্তে ইত্যাদি খেতাব দিতে থাকে। সেই সেনাবাহিনীতে কর্নেল ছিল মাত্র একজন- ফুলজেন্সিও বাতিস্তা।
এটি ১৯৩৪ সালের ঘটনা, বাতিস্তা এই ভাবে সাত বছর দেশ শাসন করে, ১৯৪০ সালে ভিন্ন ভাবে সরকার গঠন করে ক্ষমতা নেবার আগে। এই সবটা সময়ই আমি ছিলাম সান্তিয়াগোতে, প্রথমে সেই শিক্ষিকার বাড়িতে এবং পরে আরও দুই স্থানে। ১৯৪২ সালে বেলেন কলেজে পড়ার জন্য হাভানাযাত্রা শুরু হয়, যা ছিল সারা দেশের সেরা স্কুল। ১৯৪৫ সালে স্কুল পাশ করে বেরোই।
জীবনের প্রথম দিককার বছরগুলো নিয়ে এই-ই আমার বলার আছে।
[কমিউনিস্ট কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুদিবস উপলক্ষে ২৫ নভেম্বর এ লেখার প্রথম অংশ ছাপা হয়। আজ প্রকাশিত হলো এর বাকি অংশ]
- অনুবাদ–তারেক অণু