'খেলাপি বেশি, তাই সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদেরও ঋণ দিতে ভয় পাচ্ছে ব্যাংকগুলো'
দেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেশি হওয়ায় ছোট উদ্যোক্তাদেরও এখন ঋণ দিতে ভয় পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। ঋণ দেওয়ার পর সেই টাকা ফেরত পাবে কিনা সেকথা ভেবে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে দ্বিধায় ভুগছে তারা। ছোট উদ্যোক্তাদের তুলনায় বড়রা সুবিধা নিচ্ছে বেশি। ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও জামানত-আইন-কানুনসহ নানা অফিশিয়াল অনেক বেশি বাধা পাচ্ছেন সিএমএসএমই উদ্যোক্তারা- এমনটাই বলছিলেন খাত বিশ্লেষক ও উদ্যোক্তারা।
রবিবার বিকালে 'সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ সহজীকরণ ও বিকল্প অর্থায়ন' শীর্ষক সেমিনার অয়োজন করে এসএমই ফাউন্ডেশন। সেমিনারে বক্তারা বলেন,নারীদের বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা পরিচালনা করেন তাদের ঋণ পেতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। নানাবিধ আইনের কারণে তাদের ঋণ পেতে দেরি হয়, এর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় ঋণের জামানতদার।'
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, "দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এত অ্যাডভান্সড টেকনোলজি আছে, তবুও নতুন উদ্যোক্তাদের ঝামেলার অন্ত নেই। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও এটুআইকে এগিয়ে এসে এগুলোর সমাধান করতে হবে।"
ব্যাংকারদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, "ছোট একটা লোন নেয়ার ক্ষেত্রেও এসএমই উদ্যোক্তাদের 'গ্যারান্টি' আরেক মহাযন্ত্রণা। আমি সরকারকে বলবো আপনারাই তাদের গ্যারান্টর হন। সরকার কেন গ্যারান্টি দেয় না। এর ঝুঁকি সরকারকেই নিতে হবে। এজন্য পথ ও কৌশল খুঁজে বের করেন।"
উদ্যোক্তাদের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, "সুদ নিয়ে উদ্যোক্তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের প্রয়োজন আজকেই ঋণ। কিন্তু একেকটা ব্যাংকে ঋণ নিতে গেলে ফর্মের নিচে এত লেখা, দেখলে মাথা ঘুরে যায়। এগুলো কমাতে হবে।"
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জটিলতা কমানোর আহ্বান জানিয়ে এম এ মান্নান বলেন, "কিছু কিছু জায়গায় অ্যাকসেস আছে কিন্তু কাজের গতি নেই। প্রতিটা ক্ষেত্রেই যেখানেই যাবো হাজারটা নীতিমালা। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়ে এসব জঙ্গল ছেটে ফেলতে হবে।"
মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশেন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, "দুর্ভাগ্যক্রমে ছোটদের তুলনায় বড়রা সুবিধা নিচ্ছে বেশি। ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও বাধা পাচ্ছি খুব বেশি। এসএমই ঋণ ক্যাশ ফ্লো ভিত্তিক হওয়া উচিত, কিন্তু সেটা হচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে বড় অসুবিধা হলো বড় বড় কোম্পানিগুলো ঋণ নিয়ে সময়মতো পরিশোধ করে না। উদাহরণস্বরূপ, বিদ্যুৎ খাতে ঋণ দিয়ে ব্যাংকগুলো ঋণ ফেরত পাচ্ছে না। আর ব্যাংকগুলোতে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া সম্ভব না।"
এদিকে ঢাকার বাইরের উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ঋণ ও নীতি সহায়তা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান।
সহজ শর্তে ট্রেড লাইসেন্স বিতরণ, জামানতদারীবিহীন ঋণ প্রদানসহ কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) ব্যবসা পরিচালনার জন্য অভিমত দিয়েছে খাত বিশ্লেষক ও ছোট উদ্যোক্তারা।
মেলায় ভালো সাড়া পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলছে শতভাগ দেশী পণ্যের জাতীয় এসএমই মেলা। এই মেলায় ৩২৫ টি প্রতিষ্ঠানর ৩৫০টি স্টল রয়েছে। ১০ দিনব্যাপী এই মেলা চলবে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
পাটজাত পণ্য, খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী, হালকা প্রকৌশল পণ্য, আইটি পণ্য, প্লাস্টিক ও সিনথেটিক, হস্তশিল্প পণ্য, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যার ইত্যাদি প্রদর্শন ও বিক্রি করছেন উদ্যেক্তারা।
মেলার শুরুতেই সাপ্তাহিক ছুটির দিন পাওয়ায় ক্রেতা দর্শনার্থীদের আগমনে জমজমাট মেলা। মেলার শেষ দিকে আবার শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় এবার মেলায় ক্রেতা দর্শনার্থী অন্য যে কোন মেলার চেয়ে বেশি আসবে আশা ব্যবসায়ীদের।
এসএমই ফাউন্ডেশন এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. মফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের মেলার প্রতি মানুষের আগ্রহ আছে। যেহেতু কোয়ালিটি পণ্য আছে যারা মেলায় আসবে তারা হতাশ হবে না। এবার দশম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় ২৫ কোটি টাকার নগদে বিক্রি আর ৫০ কোটির বেশি অর্ডার হবে বলে আশা করছি।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা উদ্যেক্তাদের পণ্য প্রচারে বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের প্রটোকল দিলে মেলায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি।"