নৌ-ধর্মঘট: জাহাজে আটকা ১৬ লাখ টন পণ্য
নৌ-যান শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে নৌপথে পণ্য পরিবহন দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রেখেছে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ। শ্রমিকদের এই ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দরের বহিনোঙ্গরে ৩৫টি মাদার ভেসেলে আটকা পড়েছে ৭ লাখ ৮ হাজার ৯০৭ মেট্রিকটন আমদানি পণ্য।
এছাড়া মাদার ভেসেল থেকে খালাস করে নিয়ে যাওয়ার পথে ২ হাজার ৫৯৩টি লাইটার জাহাজে আটকা পড়েছে আরও সাড়ে ৯ লাখ টন পণ্য।
একারণে বন্ধ আছে সারাদেশে ভোগ্যপণ্য আর উৎপাদনের কাঁচামালসহ নানা উপকরণ সরবরাহ। শিপিং এজেন্ট অ্যাশোসিয়েশন ও ব্যাবসায়িদের হিসেবে ধর্মঘটে প্রতিদিনের ক্ষতি কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা।
শনিবার মধ্যরাত থেকে দশ দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করে নৌ শ্রমিকরা। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে পণ্য পরিবহন করে প্রায় ১৬০০টি লাইটারেজ জাহাজ।
লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশে নদীপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন শিপিং এজেন্ট ও ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ি, ধর্মঘট শুরুর আগে ২২টি মাদার ভেসেল থেকে পণ্য আনলোড ও পরিবহণের কাজ চলছিলো। যা শনিবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ আছে। এরমাঝেও ব্যক্তিগত লাইটার জাহাজে ১৭ টি জাহাজ থেকে পন্য খালাস চলছিলো।
সোমবার সকাল থেকে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের নেতাকর্মীরা এসব জাহাজের পণ্য খালাসও বন্ধ করে রাখে। ফলে বর্তমানে বহির্নোঙর অবনস্থানরত জাহাজগুলোতে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
একই সঙ্গে কর্ণফুলি নদীর মাঝিরঘাট ও সদরঘাট এলাকার ১৮টি বেসরকারি ঘাটেও লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাসের কাজ বন্ধ রয়েছে। অলস সময় কাটাচ্ছে জাহাজ ও ঘাটের ৩০ হাজারের বেশি শ্রমিক।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ধর্মঘটের কারণে বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ আছে। অপেক্ষমান জাহাজে আমদানি করা চাল নিয়ে একটি, গম নিয়ে তিনটি ও ক্লিংকার বোঝাই ১০ টি জাহাজ রয়েছে। জাহাজ গুলো থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জাহাজ মালিক, আমদানিকারকদের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
'ডলার ক্রাইসিসসহ বিভিন্ন কারণে দেশে এমনিতেই বিরুপ পরিস্তিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থা খাদ্যপণ্যসহ নানা উপকরণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া তাদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। দিন শেষ যা ভোক্তাদের উপরই আসবে,' যোগ করেন তিনি।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'দাবি দাওয়া থাকলে শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানাবো, কিন্তু দেশের এমন ক্রাইসিস মুহুর্তে এভাবে ধর্মঘট কখনোই কাম্য হতে পারে না। কয়েকদিন আগেও তারা ধর্মঘট করেছিলেন, তখন সব সমস্যাগুলো সমাধান না করে আবারও ধর্মঘট করছেন। এটা শিপিং এজেন্ট হিসেবে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তেমনি দেশের ভাবমুর্তিও সংকটে পরছে।'
'একটি জাহাজ একদিন আউটারে অবস্থান করলে তাদের ২৫ থেকে ৩০ হাজার ডলার ডেমারেজ গুনতে হবে। একারনে জাহাজ গুলো আমদানিকারকদের বাড়তি চার্জ করবে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে তারা। এই পরিস্থিতি থেকে বেরুতে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নিতে হবে,' বলেন সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ।
লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নবী আলম বলেন, 'দশটি দাবির মধ্যে প্রধান দাবি হলো শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি। সব কিছুর দাম বাড়লেও শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। তাই নূন্যতম ২০ হাজার টাকা মজুরি করা না নেওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।'
নৌ-যান শ্রমিকদের ধর্মঘটের দাবিগুলোর মধ্য অন্যতম হলো চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চলমান কার্যক্রম বন্ধ করা।
এ দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে নবী আলম বলেন, পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হলে লাইটার জাহাজগুলো কর্মহীন হয়ে যাবে, শ্রমিকরা বেকার হবে তাই আমরা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করেছি।'
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, 'কিছুদিন আগেও নৌ-যান শ্রমিকরা চট্টগ্রামে ধর্মঘট পালন করেছে, এবার সারা দেশে করছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে। ধর্মঘটের কারণে কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরী হলে দিন শেষে সাধারণ মানুষকেই ভুগতে হবে।'
অন্যদিকে ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচলের মূল কেন্দ্র চট্টগ্রাম ও ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও। দুই শতাধিক লঞ্চের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে থেকে বিভিন্ন নৌপথে প্রতিদিন প্রায় ৮০ থেকে ৮৫টি লঞ্চ চলাচল করে। তবে গতকাল থেকে জাহাজ গুলো বন্ধ থাকায় তাদের প্রতিদিন জাহাজগুলোকে ৪০ থেকে ১ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।