প্রথমবারের মতো মেরুদণ্ড জোড়া লাগা দুই শিশুকে আলাদা করবে বিএসএমএমইউ
আট মাস আগে জন্ম নুহা-নাবার। যমজ এই দু'বোনের মাথা-হাত-পা সবই আলাদা। তবে তাদের কোমর একটিই, মেরুদণ্ডের নিচের অংশ জোড়ালাগা।
এই দুই শিশুকে আলাদা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে। আজ (বৃহস্পতিবার) মেডিকেল বোর্ড জানাবে জোড়ালাগা দুই জমজ বোনকে পৃথক করার জন্য কবে তাদের অপারেশন করা হবে। দেশে কোনো মেরুদণ্ড জোড়ালাগা শিশুর প্রথম অপারেশন হতে যাচ্ছে এটি।
নুহা-নাবা নামের যমজ শিশুদুটি বর্তমানে বিএসএমএমইউ-তে চিকিৎসাধীন আছে। অপারেশনের জন্য তাদের সব ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন।
জটিল ও স্পর্শকাতর এ অপারেশনের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএসএমএমইউ'র নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "গত ৫ মাস ধরে নুহা ও নাবা বিএসএমএমইউতে আমার অধীনে ভর্তি আছে। ছোট বাচ্চার স্কিন ম্যাচিউর না হওয়ায় অপারেশন করা কঠিন, সেজন্য আমরা সময় নিয়েছি। আরো জন্মগত ত্রুটি ছিলো, তা ঠিক করে আমরা এখন অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে গেছে। বোর্ড যদি আরো কিছু সাজেশন দেয় তা ফলো করা হবে। এর আগেও দুইটা বোর্ড মিটিং হয়েছে।"
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে নুহা-নাবার মেডিকেল বোর্ডে পেডিয়াট্রিক সার্জারি, নিউরোসার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক মেডিসিন, ভাসকুলার সার্জারি, অ্যানেসথেশিয়া, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন।
"সব ঠিক থাকলে শিগগিরই প্রথম ধাপের অপারেশন করা হবে। কয়েক ধাপে তাদের অপারেশন হবে। মেরুদণ্ড জোড়ালাগা শিশুর অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল স্পর্শকাতর, তবে আমরা আশাবাদী", বলেন ডা. মোহাম্মদ হোসেন।
কুড়িগ্রামের পরিবহন শ্রমিক আলমগীরের মেয়ে নুহা-নাবা। আট মাস আগে কুড়িগ্রামের একটি ক্লিনিকে তাদের জন্ম হয়। সে সময় ডা. মোহাম্মদ হোসেন একটি বৈজ্ঞানিক সেমিনারে অংশ নিতে কুড়িগ্রামে ছিলেন। এক চিকিৎসকের মাধ্যমে নুহা-নাবার বিষয়ে জানতে পেরে শিশু দুটিকে দেখতে যান। তিনি তাদের ঢাকায় নিয়ে আসতে বলেন এবং বিএসএমএমইউতে ভর্তি ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
এতোদিন নুহা-নাবার চিকিৎসার ব্যয় বহন করছে বিএসএমএমইউ ও ডা. মোহাম্মদ হোসেন। তবে তাদের চিকিৎসা ব্যয়ের বিষয়ে নতুন ঘোষণা আসবে বলে জানান ডা হোসেন।
এর আগে ২০১৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জোড়া লাগানো জমজ শিশু তোফা-তহুরা এবং ২০১৭ সালে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার অপারেশন হয়। তারা সবাই এখন সুস্থ আছে। রাবেয়া-রোকাইয়া ও তোফা-তহুরার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।