অভিযানের মুখে লিবজেন ও জেড-লাইব্রেরির আশ্রয় এখন ডার্ক ওয়েব
কমে যাচ্ছে বিনামূল্যে চোরাই পথে অ্যাকাডেমিক বই, নিবন্ধ ও গবেষণা পত্রের বৃহত্তম সংগ্রহশালা লাইব্রেরি জেনেসিস বা লিবজেন-এর ওয়েব অ্যাক্সেস। ফলে বিনামূল্যে দুষ্প্রাপ্য বইয়ের এই বিশাল সম্ভারকে টিকিয়ে রাখতে ডার্ক ওয়েবই শেষ আশ্রয় হয়ে উঠবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
মার্কিন ম্যাগাজিন ভাইস-এর প্রতিবেদন অনুসারে, মাত্র তিন বছর আগেও লাইব্রেরি জেনেসিসের অন্তত পাঁচটি ছায়া এইচটিটিপি ওয়েবসাইট থাকত। প্রতিটি ওয়েবসাইটেই সব বই ও নিবন্ধ ব্যাকআপ হিসেবে আপলোড করা হতো। পাঠক যেকোনো সাইট থেকে নিজের পছন্দের ফাইল ডাউনলোড করতে পারতেন। ফলে এই সংগ্রহশালা একদিন হুট করে বন্ধ হয়ে যাবে, এমন ভয় ছিল না।
কিন্তু চলতি সপ্তাহেই রেডিট ব্যবহারকারীরা দেখান লিবজেনের এই ছায়া ওয়েবসাইটের সংখ্যা এখন মাত্র দু'টিতে নেমে এসেছে।
তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের মধ্যে লাইব্রেরি জেনেসিস তুমুল জনপ্রিয়। বিনামূল্যে এখানে দামি সব বই ও নিবন্ধ পেতে পারেন তারা। লিবজেনের মতো জেড লাইব্রেরি, সাইহাব-সহ আরও কিছু সাইটে বিনামূল্যে পাওয়া যাই বই ও গবেষণা প্রবন্ধ। চোরাই এই ওয়েবসাইটগুলো শ্যাডো লাইব্রেরি নামেও পরিচিত।
সম্প্রতি জেড লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর চিন্তায় পড়েছেন এর পৃষ্ঠপোষক ও নিয়মিত পাঠক। চলতি মাসের শুরুতে জেড লাইব্রেরির প্রধান দুই কর্ণধারকে গ্রেপ্তারের পর তাদের বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘন, অনলাইন জালিয়াতি ও অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়।
এফবিআই-এর অভিযানের মাঝেই লিবজেন ও জেড-লাইব্রেরিতে ওয়েব অ্যাক্সেস মেলা মুশকিল হয়ে পড়েছে। আর তাই সংগ্রহশালার জন্য এখন টর এবং আইপিএফএসের মতো বিকল্প ব্রাউজার ও নেটওয়ার্ক বেছে নিতে হচ্ছে।
টরের মতো ব্রাউজারগুলো দিয়ে সাধারণত ডার্ক ওয়েবের বিশাল জগতে বিচরণ করা যায়। শ্যাডো লাইব্রেরির মতোই বেনামী নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইন্টারপ্লেনেটারি ফাইল সিস্টেম (আইপিএফএস), বিটটরেন্ট ও টর-এর হোস্টিম সিস্টেমগুলো উন্মুক্ত তথ্যপ্রাপ্তির আন্দোলনে নতুন গতি দিয়েছে। লিবজেনের এইচটিটিপি ছায়া সাইটের সংখ্যা কমলেও এই বিকল্প নেটওয়ার্কগুলোতে ছায়া সাইটের সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে ডার্ক ওয়েবের অংশ হওয়ায় এই সাইটগুলোতে অ্যক্সেস নেওয়া কিছুটা কঠিনই হবে।
রেডিটে একজন লিখেন, 'এগুলো সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটা দুঃখজনক যে লোভ, স্বার্থ আর ক্ষমতা লিপ্সার কারণে এমন একটি সংগ্রহশালা বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন এই জ্ঞান ও সম্পদগুলো তালাবদ্ধ করে রাখার পরিবর্তে উন্মুক্ত করে দিলে সমগ্র মানবজাতিই উপকৃত হতো। অথচ এখন ৮০০ কোটি মানুষের এই পৃথিবীতে খুব সামান্য মানুষই এসবের অ্যাক্সেস পাবেন'।
এদিকে লিবজেনের ছায়া এইচটিটিপি ওয়েবসাইটগুলো কোথায় যাচ্ছে তার ব্যাখ্যাও মিলেনি। তবে এটা নিশ্চিত যে এত বৃহৎ একটি সংগ্রহশালা পরিচালনা করতে ব্যাপক পরিসরে কাজ করতে হয়। সেজন্য হয়তো অনেক সময় হতাশ হয়েই হাল ছেড়ে দেন অনেক আর্কাইভিস্ট। আবার এমনও হতে পারে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবছেন তারা। কয়েক বছর আগে সাইহাব উদ্ধার করতে আর্কাইভিস্টরা মিলিতভাবে যে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছিল এবারও তেমন কিছু ঘটতে পারে।
জেড-লাইব্রেরির বন্ধ হওয়ার খবরে সংগ্রহশালাটিকে বাঁচাতে সমর্থনকারীরা অনেকেই আর্থিকভাবে সহায়তার ঘোষণা দেন। জেড লাইব্রেরি দলও দুই লাইব্রেরিয়ানের গ্রেপ্তার নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে এক আনুষ্ঠানিক বার্তায় সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান বলে টরেন্ট ফ্রিকের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে।
এতসব অভিযানের মধ্যে লিবজেনের মতো শ্যাডো লাইব্রেরিগুলো টিকে থাকবে কী করে তা বলা মুশকিল। তবে জ্ঞানপিপাসু যারা প্রচলিত ধারায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জ্ঞান সংরক্ষণের বিরোধিতা করেন, তাদের আন্দোলনে যে আরও অনেক শ্যাডো আর্কাইভিস্ট যুক্ত হবেন তা নিশ্চিত। ফলে, লিবজেন বা জেড লাইব্রেরির মতো ভবিষ্যতে হয়তো বিকল্প আরও ছায়া সংগ্রহশালা তৈরি হবে।