৬ মাসের মধ্যেই মানব মস্তিষ্কে চিপ বসাবে ইলনের নিউরালিংক!
কল্পবিজ্ঞানের সাইবর্গ হয়তো এবার আসলেই বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছে। আর মাত্র ৬ মাসের মধ্যে মানব মস্তিষ্কে চিপ 'ইমপ্ল্যান্ট' করার পরিকল্পনা করছে ইলন মাস্কের কোম্পানি নিউরালিংক।
মানুষের মাথায় একটি কয়েন আকৃতির কম্পিউটিং ডিভাইস বসাবে বলে জানিয়েছে ইলন মাস্কের নিউরালিংক কর্পোরেশন।
বুধবার সন্ধ্যায় কোম্পানিটি তাদের সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা করে, মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই চিপ সংস্থাপন বাস্তবায়িত হতে চলেছে।
মানুষের মাথার খুলির একটি অংশ খোদাই করে এ চিপ স্থাপন করা হবে। আপাতত এর অনুমোদনের বিষয়ে ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
তার মধ্যেই কোম্পানি জানালো, আগামী ছয় মাসের মধ্যেই তারা প্রথমবার কোনো মানুষের উপর পরীক্ষা চালাতে প্রস্তুত।
তবে শুধু মস্তিষ্কই নয়। নিউরালিংক শরীরের অন্যান্য অংশেও ইমপ্লান্ট করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।
ইভেন্ট চলাকালীন ইলন মাস্ক নিজেই এই মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেস ছাড়াও দু'টি প্রোডাক্টের উপর কাজ হচ্ছে বলে জানান। বর্তমানে সংস্থা এমন একটি ইমপ্লান্ট তৈরি করছে, যা কিনা মেরুদণ্ডে বসানো হতে পারে। এ চিপ প্যারালাইসিসে ভুগছেন এমন ব্যক্তির স্নায়ুর গতিবিধি পুনরুদ্ধার করতে পারবে বলে দাবি করেছেন ইলন মাস্ক।
অন্যদিকে একটি অকুলার ইমপ্লান্টের বিষয়ে কাজ হচ্ছে বলে জানান তিনি। এর মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টিশক্তি উন্নত বা পুনরুদ্ধার করা যাবে বলে দাবি ইলন মাস্কের।
ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেসকে সংক্ষেপে বিসিআই বলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের শক্তি হারিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সুবিধা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্কলেরোসিস (এএলএস) বা স্ট্রোকের পরবর্তী প্রভাবে ভুগছেন, এমন ব্যক্তিদের চিন্তাভাবনাকে লেখা বা শব্দের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য এই চিপ ব্যবহার করা হবে। খুব সহজ ভাষায়, নিউরালিংকের এই ডিভাইস স্নায়ুর উত্তেজনাকে ডেটাতে অনুবাদ করে।
ইলন মাস্কের বিশ্বাস, অদূর ভবিষ্যতে এই ডিভাইস একদিন মূলধারার প্রতিবন্ধী সহায়ক হিসাবে ব্যবহৃত হবে। মানুষ এবং মেশিনের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থাই পাল্টে দেবে এই প্রযুক্তি।
মানুষের উপর ট্রায়ালের ক্ষেত্রে নিউরালিংক-ই যে প্রথম, তা একেবারেই নয়। এর আগে সিঙ্ক্রোন ইঙ্ক নামের এক সংস্থা অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রোগীদের মস্তিষ্কে এমন ছোট স্টেন্ট-সদৃশ যন্ত্র ইমপ্লান্ট করে। এর মাধ্যমে রোগীরা কম্পিউটারের দ্বারা ভাবনা প্রকাশ করতে বা কথা বলতে সক্ষম হচ্ছেন।
এছাড়া, অনওয়ার্ড ইঙ্ক নামের আরেক সংস্থা মেরুদণ্ডের আঘাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চলনক্ষমতা পুনরুদ্ধার করার বিষয়ে যুগান্তকারী কাজ করছে।
তবে, নিউরালিংকের প্রস্তাবিত মস্তিষ্ক অস্ত্রোপচারের ধরণ সিঙ্ক্রোন বা অন্যান্য প্রতিযোগীদের তুলনায় অনেকটাই বড়সড়। নিউরালিংকের এই ডিভাইস বসাতে রোগীর মাথার খুলির একটি অংশ অপসারণ করতে হবে। এরপর এই ডিভাইসের তারগুলো মস্তিষ্কের টিস্যুতে সূক্ষ্ণভাবে বসাতে হবে।
ব্রেন-কম্পিউটার সংযোগকারী প্রযুক্তি নিয়ে গত বেশ কয়েক দশক ধরেই গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তবে আগে এই বিষয়ে তহবিল প্রদান নিয়ে কোনো বিনিয়োগকারীর তেমন আগ্রহ ছিল না।
বছর কয়েক আগে ইলন মাস্কের প্রবেশের পর পুরো বিষয়টি পাল্টে যায়। যুগান্তকারী ব্যবসার সম্ভাবনা দেখে এই বিষয়ে গবেষণা ও প্রোডাক্ট নির্মাণে কোটি কোটি টাকা ঢালতে শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। ইলন মাস্কের এই প্রচেষ্টা কতটা সফল হয়, তা দেখতে আপাতত আরও মাস ছয়েক অপেক্ষা করতে হবে।