মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে ফুটবলের মাঠে: ক্যামেরুনের অনুপ্রেরণা কোচ রিগোবার্ট সং!
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আজ ব্রাজিলের মুখোমুখি হবে ক্যামেরুন। দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার জন্য আজকের ম্যাচটি অবশ্যই জিততে হবে আফ্রিকান দেশটিকে। সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে বিশ্বকাপে টিকে থাকতে তারা তাদের প্রধান কোচ রিগোবার্ট সং এর জীবনের গল্প তাদের অনুপ্রেরণা দিবে বলে মনে করা হচ্ছে।
খেলোয়াড় হিসেবে রিগোবার্ট সং ছিলেন ক্যামেরুনের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের একজন । প্রাক্তন এই লিভারপুল ডিফেন্ডার চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন খেলোয়াড় হিসেবে এবং বর্তমানে পঞ্চম আসরে উপস্থিত হয়েছেন ক্যামেরুনের কোচের ভূমিকায় । এ বছরের শুরুর দিকে পর্তুগিজ কোচ টনি কনসিকাওর স্থলাভিষিক্ত হয়ে ক্যামেরুনের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।
ক্যামেরুনকে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ করে দিতে সং-এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। চাপ সামলে উঠে সব সময় চিরচেনা ছন্দে খেলে গিয়েছেন রিগোবার্ট সং। তার সব চেয়ে বড় উদাহরণ, ২০১৬ সালে স্ট্রোক করে আবারও খেলার মাঠে তার ফিরে আসা। সেরে উঠার জন্য নিজের পোষা কুকুরের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই কোচ।
অসুখের কথা স্মরণ করে সং বলেন, "আমি টিভি দেখছিলাম, তখন আমি অনুভব করলাম আমি কিছুটা ক্লান্ত। আমি দরজা খোলা রেখেছিলাম কারণ আমি একজন দর্শনার্থীর প্রত্যাশা করছিলাম। যদি দরজাটা বন্ধ থাকতো তবে আমি সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতাম কারণ আমার পরিবার তখন প্যারিসে ছিলো। আমার কুকুর নিশ্চয়ই কিছু অনুভব করেতে পেরেছিলো এবং ঘেউ ঘেউ শুরু করেছিল। আমার সাথে যে লোক দেখা করতে আসার কথা ছিলো সে তখন এসে আমাকে নিচে পড়ে থাকতে দেখেছিলো।"
অসুস্থ হয়ে নিজের পছন্দমত হাসপাতালে ভর্তি হতে ঝামেলা পোহাতে হয়েছিলো সংকে। কিন্তু সব সমস্যায় তিনি পাশে পেয়েছিলেন ক্যমেরুনের রাষ্ট্রপতি পল বিয়া এবং নিজের পরিবারকে। ডাক্তাররা বলেছিলেন তার যে অবস্থা হয়েছিলো, এতে ৪০ জনের মধ্যে ৩০ জন ই মারা যান।
এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, "আমার স্ত্রী বিয়া না থাকলে আজকে আমি এখানে থাকতে পারতাম না। তাকে কৃতজ্ঞতা জানাবার মত ভাষা আমার নেই। ক্যামেরুনের রাষ্ট্রপতি আমার পরিবারকে আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি আমার চিকিৎসার দেখভাল করবেন এবং তিনি আমাকে চিকিৎসার জন্য প্যারিসে পাঠালেন।"
অসুস্থ হয়ে সং কোমায় ছিলেন। অচেতন অবস্থায় তিনি যেসব স্বপ্ন দেখতেন সেসব তাকে সারিয়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছিলেন বলেও মনে করেন ক্যামেরুনের কোচ। তিনি তার পুর্ব পুরুষদের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন এমনকি তার বাবাও এসে তার সাথে কথা বলেছিলেন।
সং তার স্বপ্নের কথা বলছেন, "আমি যখন ৯ বছর বয়সী তখন আমার বাবা মারা যায়। স্বপ্নে আমি আমার বাবাকে দেখি এবং আমি তাকে চিনতে পারি। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি এখানে কি করছো? তোমাকে ফিরে যেতে হবে। একইরকম আমার চাচা এবং অন্য আত্মীয়রা এসেও আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলো। আমি তখন লড়াই শুরু করলাম।আমার শরীরে দারুণ শক্তি এসে পড়ে। আমি তখন চিৎকার শুরু করলাম, আমাকে ছেড়ে দাও! ছেড়ে দাও!"
সং যেভাবে তার জীবন যুদ্ধে ফেরত এসেছেন , সেভাবেই খেলার মাঠেও ফেরত আসতে চান নিশ্চয়ই। ব্রাজিলের বিপক্ষে ৩ ডিসেম্বরের খেলায় বড় জয়ে তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্নটা থেকেই যায়। তবে সুইজারল্যান্ড এবং সার্বিয়ার ম্যাচের ফলাফল ও ক্যামেরুনের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার পথকে কঠিন করবে। উল্লেখ্য, ১৯৯০ বিশ্বকাপের পর আর কখনো দ্বিতীয় পর্বের জন্য কোয়ালিফাই করতে পারেনি ক্যামেরুন।
সূত্র: মার্কা
অনুবাদ: মাহমুদুল হাসান শাফিন