জাদুমাখা বোলিংয়ে ভারতের বিপক্ষে এটাই প্রথম সাকিবের
বিকাল গড়ালে আর সব দেশের মতো বাংলাদেশেও ফুটবল জোয়ার আসে। কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে মেতে ওঠেন ক্রীড়ামোদীরা। রাতে উন্মাদনা আরও বাড়ে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার সাফল্যে হই-হুল্লোড় চলে সোডিয়াম আলোর তলে। এক একটি গোলে গগন বিদারী চিৎকারে ফেটে পড়ে চারপাশ। রোববার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে পাওয়া গেল তেমন চিৎকার। যেখানে একটিই নাম, সাকিব, সাকিব। উপলক্ষ্যটা যে ফুটবল নয়, ক্রিকেট; সেটা বলাই বাহুল্য।
ফুটবল জোয়ারের মাঝেও মিরপুরের গ্যালারিতে যে প্রাণ সঞ্চার, যে উন্মাদনা চলছে; তা সাকিবের জাদুমাখা বোলিংয়ের কারণে। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে বল হাতে জাদুকর হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই স্পিনার। একাই ধসিয়ে দিয়েছেন শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, শ্রেয়াস আইয়ারদের নিয়ে গড়া ভারতের বিশ্বমানের ব্যাটিং লাইন আপ।
প্রথম সাত ওভার বোলিং করেই ৫ উইকেট তুলে নেন সাকিব, এ জন্য তার খরচা মাত্র ২৩ রান। হয়ে যেতে পারতো ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। কিন্তু পরের তিন ওভারে ১৩ রান খরচ করায় সেটা হয়নি। তবে একটা অপেক্ষা ফুরিয়েছে সাকিবের। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট পেলেন তারকা এই অলরাউন্ডার। বিশ্বের প্রথম বাঁহাতি স্পিনার হিসেবেও দলটির বিপক্ষে ৫ উইকেট নিলেন তিনি।
এটা ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে তৃতীয় সেরা বোলিং, সাকিবে ক্যারিয়ারেরও তৃতীয় সেরা। ১০ ওভারে ৩৬ রানে ৫ উইকেট, সাকিবের অসাধারণ বোলিংয়ের কারণেই ইনিংস বড় হয়নি ভারতের। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা রোহিত শর্মার দল ৪১.২ ওভারে ১৮৬ রানেই গুটিয়ে গেছে। দারুণ বোলিং করেছেন পেসার এবাদত হোসেনও। ডানহাতি এই পেসার ৪৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট, যা তার ক্যারিয়ার সেরা। বাকি উইকেটটি নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
ভারতের ইনিংসে আঘাত হেনে শুরুটা করে দেন মিরাজ। এরপর শুরু হয় সাকিবের দাপট, একে একে তিনি ফিরিয়ে দেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, ওয়াশিংটন সুন্দর, শার্দুল ঠাকুর ও দীপক চাহারকে। শুরুটা করেন ভারতের অধিনায়ক রোহিতকে ফিরিয়ে। ১১তম ওভারে ভারতের ইনিংস এলোমেলো করে দেন সাকিব। দ্বিতীয় বলে রোহিতকে ফেরানো বাংলাদেশ স্পিনার শেষ বলে সাজঘর দেখিয়ে দেন কোহলিকেও।
সাকিবের বল বুঝতে না পারা রোহিতের স্টাম্প উপড়ে যায়। এই ওভারেরই শেষ বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কোহলি। সাকিবের এই উইকেটে বিরাট অবদান লিটন কুমার দাসের। এক্সট্রা কভার থেকে অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে কোহলিকে ফেরান তামিম ইকবালের অবর্তমানে অধিনায়কত্ব পাওয়া টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। ইনিংসের ৩২তম ওভারে ওয়াশিংটনকে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেন সাকিব।
নিজের পরের ওভারে তুলে নেন শার্দুলের উইকেট। এই ওভারের চতুর্থ বলেই তিনি ফিরিয়ে দেন চাহারকে। ৫ উইকেটের মধ্যে ২টিই নেন বোল্ড করে। দীপক চাহারকে ফেরান এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে। বাকি দুটি উইকেট আসে ক্যাচ থেকে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো ৫ উইকেট নিলেন সাকিব, সর্বোচ্চ ৫ বার ৫ উইকেট নেওয়া একমাত্র বাংলাদেশি বোলার মুস্তাফিজুর রহমান।