খুলনায় গায়েবী মামলার ভয়ে ঘরছাড়া বিএনপি’র নেতাকর্মীরা
সারাদেশে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। একইভাবে খুলনাতেও চলছে অভিযান। তবে এই অভিযানে গায়েবী মামলার ভয়ে ঘর ছেড়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) নেতাকর্মীরা।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, এই বিশেষ অভিযানের নামে পুলিশ মনগড়া ঘটনা তৈরী করে তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। পরে নাশকতারে নামে গায়েবী মামলার আসামী করে আদালতে পাঠাচ্ছে।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, "ইতোমধ্যে আমাদের ৪২ জন নেতাকর্মীদের কোন কারণ ছাড়া পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়াও সদর থানায় একটি গায়েবি মামলায় ৩৮ জনকে এজাহার নামিয়সহ ৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।"
বিএনপির দাবি অনুযায়ী, খুলনাতে তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু হয়েছে শনিবার বিকেল থেকে।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, "শনিবার ৬ জন, রোববার ২০ জন ও সোমবার ১৬ নেতাকর্মীকে এ পর্যন্ত পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন থানায় গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মামলার কপি আদালত পর্যন্ত না গেলে আমরা সঠিক তথ্য পাচ্ছি না।"
খুলনা সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাতে এস আই মো. শাহিন কবির বাদি হয়ে থানায় ৮০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। যার মধ্যে ৩৮ জন এজাহার নামীয় ও বাকিরা অজ্ঞাত।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ওই রাতে খুলনার লোয়ার যশোর রোডের বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের দক্ষিণ পাশের গেটের সামনে এই মামলার আসামীরা সারাদেশে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, কেপিআই ধ্বংস ও নাশকতার পরিকল্পনার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধ্বংশাত্মক অস্ত্র ও ককটেল বোমা নিয়ে সমবেত হয়েছিলেন। সেখান থেকে তারা দুইজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন।
এসময়ে তাদের কাছ থেকে ২ টি স্টিলের রামদা, একটি কাঠের বাতা ও তিনটি ককটেল উদ্ধার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তী মোতাবেক বাকিদের মামলার আসামী করা হয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, এসব আসমিরা বর্তমান সরকারকে উচ্ছেদ করার জন্য নাশকতার যড়যন্ত্র করছিল।
এই মামলাটি ১৯৭৪ সালের দ্যা স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টের ১৫(৩)/২৫-ডি ও ১৯০৮ সালের দি এক্সপ্লোসিভ সাবস্ট্যান্স অ্যাক্টের ৪ ধারায় রেকর্ড করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন।
এই মামলায় এজাহার নামীয় সবাই বিএনপির নেতাকর্মী। অন্তত দশ জন নেতাকর্মীদের সাথে মামলার বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তারা জানিয়েছেন, মামলায় অজ্ঞাত হিসেবে যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে পুলিশ। তাই গ্রেপ্তার এড়াতে তারা রাতে বাড়িতে অবস্থান করছেন না।
এমনকি দিনের বেলায়ও সতর্কের সাথে চলাফেরা করছেন। অন্যদিকে যাদের এজাহার নামীয় মামলার আসামী করা হয়েছে, তাদের অনেকেই খুলনা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে মহানগর বিএনপির এক নেতা বলেন, "আমি এখনো মামলার আসামী হইনি। তবুও রাতে বাড়িতে অবস্থান করলে পুলিশ হানা দিতে পারে। গ্রেপ্তারের থেকেও বড় ভয় হয়, পুলিশ যদি রাতে গিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের সামনে মারধর করে। তাই রাতে বাড়িতে অবস্থান করেত সাহস পাচ্ছি না।"
খুলনা সদর থানার মামলার আসামী এক বিএনপি নেতা বলেন, "যেহেতু আমরা রাজনীতি করি, কারাগারে যেতে সমস্যা নেই। তবে এই মুহূর্তে পুলিশ যে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে, তাতে সরকারের সমর্থন রয়েছে। মারধর ও অপমানের ভয়ে আমরা গ্রেপ্তার এড়াতে খুলনার বাইরে অবস্থান করছি। পরে আদালতে গিয়ে জামিন চাইব।"
এ প্রসঙ্গে শফিকুল আলম মনা বলেন, "এসব গায়েবী হামলা মামলা দিয়ে আমাদের কিছু করা যাবে না। মূলত ১০ ডিসেম্বর ঢাকাতে গণ সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ আমাদের হয়রানি করছে। তবে ঢাকায় আমাদের সমাবেশ তারা কোন ভাবেই আটকাতে পারবে না।"
তিনি বলেন, "সদর থানায় যে মামলাটি হয়েছে, ওই রাতে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। সারা শহরে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। আমরা এমন কোন কিছু করলে তো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে থাকতো। পুলিশ সেটা কোন ভাবেই প্রমাণ করতে পারবে না। এটা সম্পূর্ণ মনগড়া ঘটনা বানিয়েছে। অন্যান্য থানায়ও এমন গায়েবী মামলা হবে, আমরা জানতে পেরেছি।"
তবে গায়েবী মামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)।
কেএমপি কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভূঞা বলেন, "খুলনায় কোন গণ গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। যারা নিয়মিত মামলার আসামী, যাদের ওয়ারেন্ট আছে, পুলিশ শুধু তাদের গ্রেপ্তার করছে। সাথে সাথে তাদের আদালতে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আদালত যাকে জামিন যোগ্য তাকে জামিন দিচ্ছে, না হলে কারাগারে পাঠাচ্ছে। এটা আদালতের বিচার্য বিষয়।"
তিনি আরো বলেন, "আদালতের কাছে আমাদের প্রতিনিয়ত জবাবদিহি করতে হয়। যদি গণ গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে আদালতে জবাব দিব কী করে? মামলা ছাড়া কাউকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।"