সোনার জিভে দেবতাদের কাছে আর্জি জানাতেন প্রাচীন মিশরের মৃতরা
বিভিন্ন ভাষায় মৃত্যুকে চূড়ান্ত 'বিশ্রামের স্থান' হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তবে প্রাচীন মিশরীয়দের কাছে মৃত্যুর পরে বিশ্রামের কোনো দর্শন ছিল না। ইহলোক ত্যাগ করার পরে তাদেরকে মৃত্যুর দেবতা ওসাইরিসের দরবারে যেতে হতো বলে বিশ্বাস করতেন মিশরীয়রা।
বিশ্বাস অনুযায়ী, সেখানে তাদেরকে ৪২ জন দেবতা ও দেবীর প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো। এই পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই তারা প্রেতলোকে স্থান পেতেন।
এ কারণেই হয়তো প্রাচীন মিশরীয় কবরগুলোতে মমি'র পাশাপাশি আরও অনেক বস্তু পাওয়া যায়। গত নভেম্বর মাসের শেষের দিকে গবেষকেরা পশ্চিম নীল ব-দ্বীপের কুয়েসনা নেক্রোপলিসে কয়েকজন মানুষের মমি আবিষ্কার করেছেন। এসব মমি'র মুখের ভেতরে সোনার পাত জিহ্বার আকারে প্রবেশ করানো ছিল।
যমালয়ে মৃত মানুষ
ওসাইরিস ও অন্যান্য দেবদেবীর সামনে মৃতরা যেন তাদের আর্জি জানাতে পারে, সেজন্য এ সোনার জিহ্বাগুলো তাদের কবরে রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করছে ইজিপশিয়ান মিনিস্ট্রি অব অ্যান্টিক্যুইটিজ।
কুয়েসনাতে পাওয়া কিছু বেশি পরিমাণে ক্ষয়ে যাওয়া কঙ্কালের গায়েও সোনাদানা পাওয়া গিয়েছে। এসব কঙ্কালের ওপর সোনার তৈরি পদ্মফুল ও গুবরেপোকা বসানো ছিল।
এর আগে ২০২১ সালে মিশরে এক নারী, একজন পুরুষ, ও একটি শিশুর মমিতে সোনার তৈরি জিহ্বা পাওয়া গিয়েছিল। এই তিনজনকে কবর দেওয়া হয়েছিল প্রায় ২,৫০০ বছর আগে। এদের সবার জিহ্বা কেটে বের করে তার স্থানে সোনার জিহ্বা বসানো হয়েছিল।
অবশ্য প্রাচীন মিশরে সোনার ব্যবহার যথেষ্ট ছিল। একদম শুরু থেকেই সুপ্রাচীন মিশরীয় সাম্রাজ্য ও ফারাওদের কাছে জনপ্রিয় ধাতু হিসেবে সমাদৃত ছিল সোনা। আজ থেকে প্রায় ৫,০০০ বছর আগে মিশরীয়রা সোনা থেকে গয়নাসহ বিভিন্ন বস্তু তৈরি করা শিখে গিয়েছিল।
সোনায় ভর্তি ফারাওদের কবর
মিশরীয় সম্রাট তথা ফারাওরা তাদের কবর সোনাদানা দিয়ে ভর্তি করে দেওয়ার জন্য জীবিত থাকতেই নির্দেশ দিয়ে দিতেন। তুতেনখামেনের সমাধি থেকে পাওয়া গিয়েছে বিস্তর পরিমাণ সোনাদানা ও হীরা-জহরত।
ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক হাওয়ার্ড কার্টার ১৯২২ সালে তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কার করেছিলেন। সমাধির ভেতরের ঐশ্বর্য দেখে তার চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল।
সোনার জিহ্বার বাইরেও আরও অনেক স্বর্ণনির্মিত বস্তু সমাধির উপাদান হিসেবে মিশরীয়দের কাছে জনপ্রিয় ছিল। তৃতীয় থুতমোসের তিন উপপত্নীর কবরে পাওয়া যায় সোনার চটিজুতা। এ তিনজন মিশরীয় ছিলেন না, তারা খুব সম্ভবত ওসাইরিসেও বিশ্বাস করতেন না। তবে হয়তো সোনার সুকতলার জুতা পরে তারাও মৃত্যু দেবতার দরবার এড়িয়ে প্রেতলোকে পৌঁছে গিয়েছেন।
- সূত্র: ডয়েচে ভেলে