বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার আশংকা
বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে আগামী ৯ এবং ১০ ডিসেম্বর রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বাসগুলোর চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। দেশজুড়ে দলটির ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোর আগে একই ধারা দেখা গেছে।
যাত্রী সংকট এবং নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আন্তঃজেলা রুটের বাসগুলো সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাস মালিকদের মতে, এতে রাজধানীকে দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হবে।
বুধবার পর্যন্ত এ বিষয়ে পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বলেন, "কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের ধর্মঘটের কোন নির্দেশনা নেই। তবে রাজধানীর সাথে আমাদের দূরপাল্লার বাসের যাত্রী অনেক কমে গেছে।"
"বর্তমানে আমাদের ঢাকামুখী যাত্রী এত কম যে, অনেক শিডিউল বাস যাত্রীর অভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। যেগুলো চালানো হচ্ছে প্রতিটিতে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে এরকম যাত্রীখরা এর আগে কোনদিন দেখিনি। গত এক-দেড় মাস যাবতই কম যাত্রী পাচ্ছি। কিন্তু তিন তারিখের পর থেকে ব্যাপকহারে কমে গেছে।"
"আমরা ধারণা করছি ঢাকায় বিএনপি আন্দোলনের কারণে ঝামেলা হওয়ার ভয়ে মানুষ ঢাকায় আসতে চাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের এমনিতেই বাস বন্ধ রাখতে হবে। তাই আমরা অগ্রীম টিকেট দিচ্ছি না", বলেন তিনি।
শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভেঙ্কর ঘোষ রাকেশ বলেন, "বিএনপির আন্দোলন যাত্রী কমার একটা বড় কারণ হতে পারে, তবে আরও কারণ আছে। দেশে এই মুহুর্তে এসএসসি, এইচএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা চলছে। তার উপরে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে চাপে আছে। পাশাপাশি বিশ্বকাপ খেলা চলছে। এসব কারণেও মানুষ ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে যাত্রীখরা তৈরি হচ্ছে।"
এই বাস মালিকও জানান, বিএনপির আন্দোলনে মালিক সংগঠন বা অন্য কারও থেকে পরিবহন বন্ধ রাখার কোন নির্দেশনা নেই।
"তবে ঢাকাকে সচল রাখতে ৯-১০ তারিখ শহরে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা আসতে পারে। কিন্তু শহরের বাইরের পরিবহন চলবে আশা করি।"
১০ ডিসেম্বর নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ মশিউর রহমান রাঙ্গার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও জানান এ ব্যপারে মালিকদের সাংগঠনিকভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নাই।
তিনি বলেন, "এটা নিয়ে আমাদের কোন সিদ্ধান্ত নাই। তবে বাসগুলোর যাত্রী কমে গেছে। ঝামেলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঢাকায় আসতে চাচ্ছে না। মালিকদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।"
"তাদের মধ্যেও আন্দোলন নিয়ে একটা ভয় কাজ করে। একটা বাস যদি ভাঙচুর করা হয় তাহলে তার ক্ষতি ৬ মাসেও পোষানো সম্ভব হয় না। পাশাপাশি গাড়ির স্টাফদের নিরাপত্তারও ব্যাপার আছে। বিএনপি ২০১৪ সালে ৬০০-৭০০ বাস ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে। এসব কারণে মালিকরা নিজেদের সিদ্ধান্তে তাদের পরিবহন বন্ধ রাখতে পারে।"
"যদি কোন ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে পরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে", তিনি যোগ করেন।
এদিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৮ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত ধর্মঘটে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন একাধিক পরিবহন মালিক।
তবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি বরকত উল্লাহ ভুলু জানান, তারা পরিষেবা বন্ধ করতে চান না কারণ ধর্মঘট মানেই আর্থিক ক্ষতি।
"কিন্তু কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে, সার্ভিস বন্ধ করা হবে", বলেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বিভাগীয় সমাবেশের পরিবহন ধর্মঘট সত্ত্বেও জনগণ ঠিকই শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে।
"ঢাকায়ও একই ব্যাপার ঘটবে। দুর্ভোগ সত্ত্বেও জনগণ মহাসমাবেশকে ঠিক সফল করে তুলবে।"
[টিবিএসের রাজশাহী প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব এবং খুলনা প্রতিনিধি আউয়াল শেখ প্রতিবেদনটি তৈরীতে অবদান রেখেছেন]