তৃতীয় দিনেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫৯০ কোটি টাকা ফেরত দিলো ইসলামী ব্যাংকগুলো
টানা দুইদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লিকুইডিটি সাপোর্ট নিলেও তৃতীয় দিনে এসে নতুন করে লিকুইডিটি সাপোর্ট নেওয়ার বদলে ৫৯০ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো। বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর নিট ধার নেমে এসেছে ৪৬৫৭ কোটি টাকায়।
মঙ্গলবার ও বুধবার দুইদিনে ৫টি ইসলামী ব্যাংক ৫২৪৭ কোটি টাকা ধার নিয়েছিল। তবে ব্যাংকগুলোতে এখনো লিকুইডিটি স্ট্রেস রয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া ইসলামী ধারার অনেক ব্যাংক থেকেই গ্রাহকদের টাকা তোলার প্রবণতা বাড়ায় ব্যাংকগুলোর ডিপোজিট আগের তুলনায় কমছে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি ইসলামী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি নেওয়া ইসলামী ধারার একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান টিবিএসকে বলেন, "গত কয়েকদিনে আমাদের কাছে থাকা কিছু কর্পোরেট ডিপোজিটের টাকা তোলা হয়েছে। তাই সামগ্রিকভাবে ডিপোজিট আগের তুলনায় কমেছে।"
"তবে আমাদের সাধারণ গ্রাহকেরা টাকা জমা করছেন। ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্ক ভালো ও চাওয়ামাত্র ডিপোজিটের টাকা ফেরত পাওয়ায় তারা আমাদের উপর ভরসা রাখছেন। আমরাও তাদের ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।"
ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো এতোদিন ধারের জন্য ইসলামী ব্যাংকের উপর নির্ভর করতো। ইদানিং এই ব্যাংকটি লিকুইডিটি প্রেশারে থাকায় বাকি ব্যাংকগুলোর জন্যও সংকট বেড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের এমডি বলেন, "ইসলামী ধারার কিছু ব্যাংক অন্য জেনারেল ব্যাংকগুলোর কাছে থেকে অন্তত তিন মাস মেয়াদের জন্য লোন নিতে চাচ্ছে। মূলত যেসব জেনারেল ব্যাংকের লিকুইডিটি অবস্থান কিছুটা ভালোর দিকে, তাদের কাছে থেকে লিকুইডিটি ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে ব্যাংকগুলো।"
বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার থেকে চালু করেছে ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি। এ সুবিধার আওতায় ইসলামি ব্যাংকগুলো সুকুক (শরিয়াভিত্তিক বিনিয়োগ বন্ড) জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতে পারছে।
গত মঙ্গলবার ইসলামি ধারার ৫ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৩৯৯৫ কোটি টাকা ধার করে। ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
পরদিন বুধবার ব্যাংকগুলো আরো ১২৫২ কোটি টাকা ধার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে থেকে। এসব ধারের বড় অংশই নিয়েছে ইসলামী ব্যাংক।
তবে ইসলামী ধারার সব ব্যাংক লিকুইডিটি স্ট্রেস ফিল করছে না। কিছু ব্যাংক এমনও আছে যারা লিকুইডিটি সারপ্লাসে আছে বলে অন্য ব্যাংকগুলোকে ধার দিচ্ছে।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "আমাদের ব্যাংকে ৩২০০ কোটি টাকা লিকুইডিটি সারপ্লাস আছে। ফলে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি আপাতত নিতে হচ্ছে না। উল্টো অন্য ব্যাংকে একমাস, তিনমাসসহ বিভিন্ন মেয়াদের এফডিআর ফর্মে লোন দেওয়া হয়েছে ২০০০ কোটি টাকা।"
জানা গেছে, প্রচলিত ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপো (টাকা ধারের ব্যবস্থা), স্পেশাল রেপো ও বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় টাকা ধার করতে পারে। পাশাপাশি এক দিনের জন্য (কল মানি) ও বিভিন্ন মেয়াদে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংক টাকা ধার করতে পারে। নতুন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি পাওয়ার আগে পর্যন্ত ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর শুধু একে অপরের থেকে ও প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং সেবা থেকে টাকা ধার করতো।
দেশের ৬১ ব্যাংকের মধ্যে এখন ১০টি ইসলামি ধারার ব্যাংক। এ ধারার ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ইসলামী ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।