আতঙ্কে বাজারে আসছে না ক্রেতারা, সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যবসায় মন্দা
বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে শুক্রবার থেকেই থমথমে রাজধানী ঢাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন বিএনপির গণসমাবেশের কারণে পুলিশ তল্লাশি করছে; এর জন্য ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই ক্রেতা কম। এতে ব্যবসায় মন্দা তাদের।
সাধারণত শুক্রবার অনেকে বাইরে খেতে বের হয়। তবে এদিন রাজধানীর রেস্তোরাঁগুলোও ছিল প্রায় ফাঁকা।
বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআরওএ) মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, 'সারা ঢাকা শহর ফাঁকা। মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে কী হয় না হয়। কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। আমরা অনেকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমাদের ভয়াবহ অবস্থা। একে তো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তার উপর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। আমরা বেকায়দায় আছি।'
তিনি বলেন, 'আমাদের শ্রমিকদের বেতন দিতেই হয়। সারা সপ্তাহের ব্যবসাটা প্রায় ৬০% শুক্র ও শনিবারই হয়। ৭ তারিখ থেকে বিক্রি নেই, ৮ তারিখ তো ভয়াবহ অবস্থা গেল। শুক্রবার তো পুরো ফাঁকা। আমাদের দুই দলের প্রতি আহবান তারা যেন বসে সমস্যার সমাধান করে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে চাই।'
নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, মতিঝিল এলাকায় ফুটপাতেই জমে ওঠে কেনাকাটা কিন্তু শুক্রবার দেখা যায় এগুলো সব বন্ধ। জমেনি নিউমার্কেট ও মিরপুর-১ এর দোকানগুলোর বিক্রিবাট্টা।
মগবাজার এলাকার জোবায়ের আনসারি বলেন, 'ছুটির দিন হওয়ায় আমার স্ত্রী চেয়েছিল আজকে মার্কেটে যাবে, শীতের পোশাক ও জুতো কিনবে। কিন্তু বের হইনি। ১০ তারিখের সমাবেশ শেষ হলে মার্কেটে যাবো।'
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, 'করোনার ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারিনি আমরা। এখন শীতের সময়, পোশাক ভালো বিক্রি হওয়ার সময়। আমরা চাই ব্যবসায়িক পরিবেশ যেন বজায় থাকে।'
এদিকে রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি ও খুচরা বাজার কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের বিক্রি অর্ধেক কমে গেছে গত সপ্তাহের তুলনায়। মাসের প্রথম শুক্রবার একটু বেশি ভিড় হওয়ার কথা। কিন্তু কারওয়ান বাজারে দেখা গেল এক ভিন্ন চিত্র। ক্রেতাদের ভিড় একেবারেই নেই।
কারওয়ান বাজারের তরকারি বিক্রেতা মোহম্মদ জাকির বলেন, 'আজকে (শুক্রবার) ক্রেতা কম হবে বুঝতে পেরে পাইকারি বাজার থেকে কম তরকারি কিনেছি। আজকে ১০০ কেজি কিনেছি অন্য সময় প্রতিদিন ১,৪০০ কেজি কিনতাম। কিন্তু ক্রেতা তো গত সপ্তাহের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। আমার অর্ধেক সবজিও বিক্রি হয় নি।'
মুরগি, হাঁস ও কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করেন মোহম্মদ বাকের হোসেন। তিনি বলেন, 'আমাদের বিক্রি তিনভাগের দুইভাগ কমে গেছে। কালকে সমাবেশ ঘিরে অনেকে ঘর থেকে বের হতে চাইছে না। ক্রেতাদের কী বলবো, আমি নিজেও কবুতরের বাচ্চা কিনতে যাইনি পুরান ঢাকার ঠাঁটারি বাজারে। কবুতর কিনতে ভোর ৫টায় বের হতে হয়। পুলিশ রাস্তায় বের হলেই তল্লাশি করে, তাই আজকে যাই নি।'
কারওয়ান বাজারের বরিশাল রাইস এজেন্সির বিক্রেতা মোহম্মদ হামিদ বলেন, 'ক্রেতাই তো নেই। আমরা অলস বসে রয়েছি। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কে চাইবে এ গন্ডগোলের সময় বাজারে আসতে! আমাদের ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে।'
কারওয়ান বাজারে বাজার করতে এসেছেন মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'আতঙ্কে আছি, কখন কোন দিক দিয়ে হামলা হয়! তার উপর পুলিশের তল্লাশি তো আছেই। অতি প্রয়োজন না হলে আসতাম না। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় এ দিন বাজার করতে হয়।'
বাজার ঘুরে দেখা গেছে পণ্য সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই। শীতের সবজিতে ভরা। সব ধরনের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। সরবরাহ বাড়ায় কমেছে সবজির দাম। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, আটা, তেল, চিনি ও ডাল বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই চড়া দামে।
গতকাল আটা ৭৪ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৫-৭৯ টাকা এবং বিআর-২৮ চাল ৫৯ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।