মন্দার কবলে জাপান এবং যুক্তরাজ্য, এরপর কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র?
বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি জাপান এবং যুক্তরাজ্যে দেখা দিয়েছে মন্দা।
গত বৃহস্পতিবার জাপান এবং যুক্তরাজ্যের জিডিপির টানা দুই প্রান্তিকে পতন ঘটেছে যেটিকে মন্দা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন জাগছে, বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও মন্দা দেখা দিবে কি না?
বৃহস্পতিবার একটি নোটে ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল ডোনোভান লিখেছেন, জাপানের অর্থনৈতিক পতনের সাথে দেশটির কমতে থাকা জনসংখ্যার সম্পর্ক আছে। ২০২২ সালে দেশটির জনসংখ্যা ৮ লাখ হ্রাস পেয়েছে। টানা ১৪তম বারের মত জাপানের জনসংখ্যা কমে এসেছে। এটি দেশের প্রবৃদ্ধির ক্ষমতাকে কমিয়ে আনে কারণ "কম জনসংখ্যা মানে কম পণ্য তৈরি হওয়া এবং কম পণ্য ভোগ করা।"
কিন্তু যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা বেশি হলেও এবং মজুরি বৃদ্ধি পেলেও ভোক্তাদের ব্যয়ের পরিমাণ কমে গেছে যা দেশটির অর্থনীতির অন্যতম প্রধান পরিচালক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি
গত দুই প্রান্তিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ভোক্তাদের অধিক ব্যয়ের কারণে।
মহামারিতে বেঁচে যাওয়া ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশটির গৃহস্থালি খরচ পুষিয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি রুশ জ্বালানি উপর কম নির্ভরশীল হওয়ায় ২০২২ সাল থেকে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব অন্যান্য দেশের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে অনেক কম ছিল।
কিন্তু গত বৃহস্পতিবার দেশটির জানুয়ারি মাসের খুচরা বিক্রয় প্রত্যাশার চেয়েও অনেক কমে এসেছে যা ইঙ্গিত করে বড়দিনের ছুটির পরে দেশটির নাগরিকরা খরচের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে।
তারপরেও দেশটির শ্রমবাজার উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী রয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে বেকারত্বের হার খুবই কম এবং গত ২৪ মাস ধরে সেটি ৪ শতাংশের নিচে রয়েছে।
২০২৪ সালে কি আমেরিকা মন্দার কবলে পড়বে?
আমেরিকানরা বুঝতে না পারলেও মার্কিন অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়তে পারে।
আটজন অর্থনীতিবিদের একটি ছোট দল সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত অর্থনীতিকে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দা বলা যায় না।
ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক রিসার্চের (এনবিইআর) 'বিজনেস সাইকেল ডেটিং কমিটি' নামে পরিচিত এই দলটি একটি দেশের 'উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক পতন এবং টানা কয়েক মাস সেই পতন চলমান থাকলে' সেটার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করে দেশটি মন্দার কবলে পড়েছে কি না।
কোন কোন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে মন্দা নির্ধারণ করা হয় সেটি নির্দিষ্ট নয়। কিন্তু বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, আয় কমে আসা, ব্যয় সংকোচন অথবা নেতিবাচক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হারের মতো কারণগুলো মন্দার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
জিডিপির পরপর দুটো নেতিবাচক প্রান্তিককে সবসময় মন্দা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। ২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক প্রান্তিকের অভিজ্ঞতা হলেও এনবিইআর সেটিকে মন্দা বলে ঘোষণা দেয়নি।
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েল ডিসেম্বরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ফেড ২০২২ সালের মার্চ মাসে সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণের পর থেকে মন্দার সম্ভাবনা বেড়েছে।
তারপরেও তিনি বলেন, "অর্থনীতি এখন মন্দার মধ্যে রয়েছে সেটি ভাবার তেমন কোনো কারণ নেই।"
পাওয়েল যোগ করেন, অর্থনীতিকে প্রাথমিকভাবে ভালো মনে হলেও পরের বছর মন্দার কবলে পড়বার সম্ভাবনাকে বাদ দেওয়া যায় না। কারণ যে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা যেমন বৈশ্বিক মহামারি অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের বৈশ্বিক প্রধান অর্থনীতিবিদ ফিলিপ কার্লসন-স্লেজাক মনে করেন না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বছরের মধ্যে মন্দার কবলে পড়বে।
তিনি বলেন, "বরং এই বছরে প্রবৃদ্ধির হার কম হতে পারে।"
তিনি আরো বলেন, "মার্কিন অর্থনীতির স্থিতিশীলতা মৌলিক শক্তির উপর নির্ভরশীল" যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শ্রমবাজার এবং আমেরিকানদের ব্যক্তিগত অর্থ।
যদি ফেড এই বছর সুদের হার না কমায় তাহলে সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ।
কার্লসন-স্লেজাক সতর্ক করে বলেছেন, যদি বিনিয়োগকারীরা ২০২৪ সালে একাধিক সুদের হার কমানোর আশা করে এবং তা না ঘটে তাহলে এটি আর্থিক বাজারের উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতি করতে পারে। এমনকি মন্দার কারণও হতে পারে।