করোনা আক্রান্ত ইতালিতে অসহায়দের খাবার দিচ্ছে দুর্ধর্ষ মাফিয়ারা
করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন চলছে পুরো পৃথিবীতে। সব কাজকর্ম বন্ধ। এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন নিম্নবিত্তের মানুষগুলো। তাদের খাদ্য ও ত্রাণ সহযোগিতা যোগাচ্ছে দেশগুলোর সরকার। এর মধ্যেই ঘটছে কিছু অদ্ভুত ঘটনা। বাংলাদেশে যেমন গরীবের ত্রাণের চাল চুরি করছেন জনপ্রতিনিধিরা, আবার ইতালিতে দেশটির অসহায় মানুষদের মধ্যে খাবার বিলিয়ে দিচ্ছেন দুর্ধর্ষ মাফিয়া গ্যাং'র সদস্যরা।
যদিও দেশটির প্রশাসন মাফিয়াদের এই সাহায্য নেয়া থেকে সাধারণ মানুষদের বিরত থাকতে বলেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র অঞ্চল কাম্পানিয়া, সিসিলি, পুগলিয়া এবং ক্যালাব্রিয়াতে অসহায় মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করেছে মাফিয়া দলের সদস্যরা।
ইতালির কান্তানসারো অঞ্চলে অ্যান্টি মাফিয়া ইনভেস্টিগেটর নিকোলা গ্রাতেরি গার্ডিয়ানকে বলেন, প্রায় একমাসের বেশি সময় ধরে দোকান-পাট, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট আর পাবগুলো বন্ধ রয়েছে। এসমস্ত জায়গায় কাজ করে লক্ষ লক্ষ মানুষ। তার মানে গত একমাসের বেতন পায়নি এরা। আবার চাকরি ফিরে পাবে কি না তাও জানে না। এই পরিস্থিতিতে যদি সরকার এগিয়ে না আসে, তাহলে মাফিয়ারা এভাবেই বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করবে।'
মাফিয়াদের এমন কর্মকাণ্ডে শঙ্কিত ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুসিয়ানা ল্যামারগেস। তিনি বলেন, 'এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে তারা। এমনকি এই সুযোগে আরও লোককে দলে নিতে পারে।'
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক ফেদেরিকো ভেরেসি বলেন, 'মাফিয়ারা সামান্য ক্রিমিনাল বা অপরাধ দলই নয়। এরা দেশের বাজার থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়, অথচ এদের সবচেয়ে বড় শক্তি স্থানীয় লোকজন, যাদের মাধ্যমে এরা এদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে।'
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাফিয়াদের এই কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে ইতোমধ্যেই ইতালির বিভিন্ন শহরে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া মাফিয়াদের কাছ থেকে খাবার নেয়ায় বেশ কিছু লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও ইতালির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
করোনা ভাইরাস নিয়ে ওয়েবসাইট জন হপকিন্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইতালিতে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৯ হাজার ৮৯৯ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৬৩ জন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ইতালির লম্বার্দির কোদোগ্নো শহরে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।