সমস্ত নথিপত্র মুছে দিয়ে হঠাৎ কর্মীর প্রস্থান! যেভাবে সামাল দেবেন পরিস্থিতি
কর্মক্ষেত্রে প্রায়ই আমাদের নানান বিব্রতকর প্রশ্ন বা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এমন পরিস্থিতি কীভাবে তাৎক্ষণিক সামলে নেওয়া যায়, তা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। তখন পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরও বিব্রতকর এবং জটিল।
বিজনেস ম্যাগাজিন ইঙ্ক ডটকমের কলাম লেখক অ্যালিসন গ্রিন এক নিবন্ধে কর্মক্ষেত্রে এরকমই তিনটি বিব্রতকর পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন; এবং সেই পরিস্থিতি কীভাবে দক্ষতার সঙ্গে সামলে নেওয়া যায়, সে উপায়ও বাতলে দিয়েছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক কর্মক্ষেত্রে দৈনন্দিনের কিছু বিব্রতকর পরিস্থিতি ও তা দক্ষতার সঙ্গে সামলে নেওয়ার উপায়।
পরিস্থিতি ১: সমস্ত নথিপত্র মুছে দিয়ে হঠাৎই কর্মীর প্রস্থান
এক পাঠক বলেছেন, অফিসে তার টিমের একজন সদস্য আগে থেকে কোনো নোটিশ দেওয়া ছাড়াই হঠাৎ করে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি এমন একটি টিমে কাজ করতেন, যেখানে কাজের জন্য সদস্যরা একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। অথচ যিনি চাকরি ছেড়েছেন, তিনি কাউকেই নিজের কাজের অংশটুকু বুঝিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, আগে থেকে চাকরি ছাড়ার কথাই জানাননি।
কোম্পানির একটি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তাই টিমওয়ার্কে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি প্রকল্প বাস্তবায়নে কোম্পানির খরচে তিনি প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। কিন্তু অফিস ছাড়ার আগে তার দায়িত্ব এবং প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো তিনি টিমের অন্য কাউকে বুঝিয়ে দিয়ে যাননি। শুধু তাই নয়, প্রশিক্ষণের সমস্ত নথিপত্র, তথ্য-উপাত্তও তিনি তার কম্পিউটার থেকে মুছে দিয়ে গেছেন।
এমতাবস্থায় পাঠক জানতে চেয়েছেন, প্রশিক্ষণ ও কাজের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো ওই কর্মীর কাছ থেকে ফিরে পেতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
উত্তর: প্রশ্নের জবাবে অ্যালিসন তার লেখায় বলেন, ওই কর্মীর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট আইনের আওতায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেহতু তিনি সময় নিয়ে চাকরি ছাড়ার বিষয়টি জানাননি এবং কর্মক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল কম্পিউটার থেকে মুছে দিয়েছেন, সুতরাং তার বিরুদ্ধে কম্পিউটার জালিয়াতি ও অপব্যবহারের অভিযোগ এনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতেই পারে।
অনুমতি ছাড়া কর্মক্ষেত্রের নথিপত্র মুছে দেওয়ার বিরুদ্ধে ভালো কোনো আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। তবে নথিগুলো ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, ওই কর্মী কম্পিউটার থেকে নথিগুলোর কোনো কপি রাখা ছাড়াই স্থায়ীভাবে মুছে দিয়েছেন কি না। যদি তা-ই করে থাকেন, তাহলে অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া গেলেও নথিগুলো আর ফেরত পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে হয়তো মনে হতে পারে, ওই কর্মীকে আইনের আওতায় আনতে অযথাই সময় ও অর্থ খরচ হবে কোম্পানির। কিন্তু ব্যাপারটি পুরোপুরি সেরকমও নয়। এই আইনি ব্যবস্থা ভবিষ্যতে কোম্পানির অন্যান্য কর্মীদের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে।
পরিস্থিতি ২: দেরিতে অফিসে যাওয়া
আরেক পাঠক জানান, তার সহকর্মী শাহানাকে (ছদ্মনাম) দুপুরের খাবার এবং অন্যান্য বিরতি থেকে ফিরতে মাঝে মাঝে কয়েক মিনিট দেরি হওয়ার জন্য (তিন থেকে পাঁচ) অ্যাডমিন প্যানেল অফিসে তাকে নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। শাহানা অফিসের ফ্রন্ট ডেস্কের দায়িত্বে রয়েছেন। প্রশ্নকর্তা নিজেও আবার অ্যাডমিন প্যানেলের সদস্য। তিনি শাহানাকে অনেকদিন ধরেই কর্মক্ষেত্রে দেখছেন এবং তাকে ভালোভাবেই চেনেন। শাহানা কাজের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক এবং নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। দুই-চার মিনিট দেরিতে যে অফিসের কাজের তেমন ক্ষতি হচ্ছে, ব্যাপারটি এমনও নয়। অথচ এই ইস্যুতে অফিসের অ্যাডমিন প্যানেল তাকে শোকজ করছে, তিরস্কারমূলক ই-মেইল পাঠাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্নকর্তা শাহানাকে জানিয়েছেন। তিনি তার সম্পর্কে মোটেই উদ্বিগ্ন নন; শাহানার মাঝেমধ্যে এমন দেরি হলে ব্যক্তিগতভাবে তার কোনো সমস্যা নেই। এতটুকু জানানোর পরেও কি শাহানার জন্য আরও কছু করা উচিত কি না, তা জানতে চেয়েছেন প্রশ্নকর্তা। অ্যাডমিনের অন্য সদস্যের পদক্ষেপে তার নাক গলানো উচিত হবে কি না, তা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে তার সামনে।
উত্তর: হ্যাঁ; যদি শাহানার সঙ্গে অন্যায় হয়, তাহলে সেখানে অবশ্যই নাক গলানো বা হস্তক্ষেপ করা উচিত হবে।
অ্যালিসন বলেন, কিন্তু প্রথমে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে পাঁচ মিনিট দেরি আসলেই কোনো সমস্যা তৈরি করছে কি না। বেশিরভাগ চাকরিতে অবশ্য এটি তেমন বড় কোনো ইস্যু নয়। কিন্তু যখন ফ্রন্ট ডেস্কের দায়িত্বের কথা আসে তখন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হতেও পারে। কারণ কোনো অফিসের ফ্রন্ট ডেস্ক দীর্ঘক্ষণ খালি থাকতে পারে না। এটি যুক্তিসঙ্গত নয়, এতে কোম্পানিরই ক্ষতি।
পরিস্থিতি ৩: ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কিত প্রশ্ন
এক পাঠাক জানিয়েছেন, তিনি একটি ছোট টিমে কাজ করেন। সেখানে সঙ্গত কারণেই তিনি তার সহকর্মীদের সঙ্গে বেশ আন্তরিক। এমতাবস্থায় সহকর্মী যদি তাকে একান্ত ব্যক্তিগত প্রশ্ন (যেমন ডিভোর্স বা বিচ্ছেদ-সংক্রান্ত প্রশ্ন) করে বসেন, সেক্ষেত্রে তিনি কীভাবে পরিস্থিতি সামলাবেন।
উত্তর: অ্যালিসন এক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটিই প্রশ্নকর্তার ইচ্ছার ওপরে ছেড়ে দিয়েছেন। প্রশ্নকর্তা যদি বিষয়টি সহকর্মীর সঙ্গে শেয়ার করতে চান, তাহলে সরাসরি বলে দিতে পারেন। যদি শেয়ার করতে না চান তাহলে সেটিও সরাসরি জানিয়ে দিতে পারেন যে তিনি কর্মক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন। কিংবা যদি বিষয়টি অস্পষ্ট রাখতে চান, তাহলে সহকর্মী যখন প্রশ্ন করবেন, তখন অন্য কথায় প্রশ্নটি একেবারেই এড়িয়ে যেতে পারেন। মোটকথা, এটি পুরোপুরি নির্ভর করে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর।