এমবাপ্পে-হাকিমির বন্ধুত্বের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে সেমি-ফাইনাল!
কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আশরাফ হাকিমি, সময়ের অন্যতম সেরা দুই খেলোয়াড়। এমবাপ্পে খেলেন ফ্রান্স জাতীয় দলের হয়ে এবং হাকিমি মরক্কোর হয়ে। চলমান কাতার বিশ্বকাপে দুজনেই নিজ নিজ দলকে একের পর এক সাফল্য অর্জনে সাহায্য করেছেন। কিন্তু যারা ক্লাব ফুটবল সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন সারাবছর এই দুই তারকা কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই চলেন, খুনসুটি করেন, একে অপরের আনন্দের ভাগীদার হন। কারণ দুজনেই যে খেলেন ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইয়ের হয়ে।
ক্লাবে এমবাপ্পে ও আশরাফ হাকিমির 'ব্রোম্যান্স' দর্শকদের কাছে বিশেষ উপভোগ্য হলেও, কাতার বিশ্বকাপ তাদেরকে একে অপরের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ১টায় মুখোমুখি হবে ফ্রান্স ও মরক্কো। ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো সেমি-ফাইনালে ওঠা মরক্কোকে প্রতিহত করতে গিয়ে এমবাপ্পে যে তার 'ক্লাবের বন্ধু'কে ভুলে যাবেন তা বলাই বাহুল্য!
সেমিফাইনালে দুই দলের মুখোমুখি হওয়া নিশ্চিত হতেই টুইটারে বাগযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল তাদের। পিএসজি সতীর্থকে উদ্দেশ্য করে হাকিমি লিখেছিলেন- "শীঘ্রই দেখা হবে বন্ধু!"
তবে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই গত জানুয়ারিতে এমবাপ্পে কাতার সফরে গিয়ে একটি ভিডিও ক্লিপে হাকিমির উদ্দেশ্য বলেছিলেন, "মরক্কোর বিপক্ষে যদি খেলতে হয়, তাহলে তো আমাকে আমার বন্ধুকে ধ্বংস করে দিতে হবে।" এর জবাবে হাসিমুখে হাকিমি বলেছিলেন, "আমিও ওকে উড়িয়ে দিবো।"
ফ্রান্সের রক্ষণভাগের সবচেয়ে বড় শক্তি হওয়ায় এমবাপ্পেকে অবশ্যই মরক্কোর রাইট-ব্যাক হাকিমির সামনে পড়তেই হবে। তাই রাতের ম্যাচে এই দুজনের লড়াই দেখতে মুখিয়ে আছেন ফুটবলপ্রেমীরা।
পিএসজিতে এমবাপ্পে ও হাকিমির 'ব্রোম্যান্স' এতটাই ভালো যে দুজনে সারাক্ষণ কাছাকাছি থাকেন, প্লেনে পাশাপাশি বসেন, একসঙ্গে ভিডিও গেমস খেলেন, ছুটিও কাটাতে যান একসঙ্গে।
তবে মরক্কো জানিয়েছে, শুধু এমবাপ্পেকে আটকানোর জন্য আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের; আর কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুই হাকিমির ওপর পূর্ণ ভরসা রাখছেন। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, "বন্ধুকে(এমবাপ্পে) হারিয়ে দেওয়ার জন্য যে হাকিমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে, সে ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই।"
কাতার বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৫টি গোল করেছেন এমবাপ্পে। তবে সমান সংখ্যক গোল নিয়ে তার পাশেই চোখ রাঙাচ্ছেন লিওনেল মেসি। আজ জিতে গেলে মেসির আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধেই ফাইনালে খেলতে হবে এমবাপ্পেকে। এদিকে আশরাফ হাকিমির মতো তারকাদের প্রচেষ্টার জোরেই গত পাঁচ ম্যাচে অন টার্গেটে মাত্র ১০টি শট হজম করেছে মরক্কো।
নক-আউট পর্বে স্পেনের বিপক্ষে পেনাল্টিতে গোল করে পেঙ্গুইন স্টাইলে গোল উদযাপন করেছেন হাকিমি, যা তিনি পিএসজিতে এমবাপ্পে ও সের্হিও র্যা মোসের সাথে করে থাকেন।
এখানেই শেষ নয়, কাতারের দোহায় হাকিমির হোটেলে গিয়ে একদিন দেখাও করে এসেছেন এমবাপ্পে। মরক্কো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর সবার আগে তিনিই হাকিমিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ফ্রান্স অধিনায়ক হুগো লরিস মনে করেন, কাতারের আল-বাইত স্টেডিয়ামের এক ম্যাচে হাকিমি-এমবাপ্পের বন্ধুত্বে কোনো নেতিবাচক ছায়া পড়বে না। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, "ম্যাচ তো অনুষ্ঠিত হবেই। মাঠে বন্ধুর বিপক্ষে দাঁড়াতে হলেও কিছু করার নেই, এটা বিশ্বকাপ, তাই একে-অপরের মোকাবিলা করতেই হবে।"
সূত্র: রয়টার্স